সেই কবে ১৯৪০ সালে মুক্তি পেয়েছিল মার্কিন মিউজিক্যাল চলচ্চিত্র ‘আর্জেন্টাইন নাইটস’। এরপর নানা সময়ে পৃথিবীর বুকে নেমেছে আর্জেন্টাইনদের রাত। এই তো গত বছর কাতারে ডিসেম্বরের এমন শীত শীত আবহে নেমেছিল অলৌকিক এক রাত। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পর স্বর্গীয় এক রাতের সাক্ষী হয়েছিল আর্জেন্টাইনরা।
সেই রাতের মতো মাহাত্ম্যপূর্ণ না হলেও গতকাল রাতও ছিল আর্জেন্টাইনদের। ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোয় একাধিক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে একই সঙ্গে জ্বলে উঠেছিলেন একাধিক আর্জেন্টাইন তারকা। যাঁদের গোল ও সহায়তা ভূমিকা রেখেছে দলের জয় কিংবা ম্যাচ বাঁচানোয়।
কাতার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর্জেন্টাইন তরুণ এনজো ফার্নান্দেজের হাতে তুলে দিয়েছিল টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এমন পারফরম্যান্সের পর বেনফিকার সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে তাঁকে কিনে এনেছিল চেলসি। প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবেই স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটিতে আসেন এনজো। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে এই তরুণকে চেলসি এনেছিল, সেটা যে পুরো মাত্রায় মাঠের পারফরম্যান্সে অনূদিত হয়েছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই।
ব্যক্তিগতভাবে মাঝমাঠে মাঝেমধ্যে প্রভাব রাখলেও দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে সেটা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। গত মৌসুমে চেলসির ১২ নম্বরে থেকে শেষ করা এবং এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১০ নম্বরে থাকা সেই প্রমাণই দেয়। এমনকি প্রিমিয়ার লিগে ৩০ ম্যাচ খেলার পরও ফার্নান্দেজের নামের পাশে ছিল না কোনো গোল। অবশেষে গতকাল ৩১তম লিগ ম্যাচে গিয়ে গোল পেয়ে যান এনজো। ব্রাইটনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৩–২ গোলের জয়ে জোড়া গোল করেছেন এই আর্জেন্টাইন। ১৭ মিনিটে গোল করা এনজো পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেছেন ৬৫ মিনিটে। শুধু গোল করাতেই নয়, চেলসির মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণেও দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন এই মিডফিল্ডার।
বিশ্বকাপ দিয়ে আলোচনায় আসা আর্জেন্টাইন তারকাদের অন্যতম ছিলেন অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টার। বল পায়ে মিডফিল্ডে আর্জেন্টিনাকে দারুণ দৃঢ়তা দিয়েছিলেন এই তরুণ। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দিয়ে লিওনেল মেসিরও দারুণ আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন ম্যাক আলিস্টার। ব্রাইটনেও তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। মিডফিল্ডের ঘাটতি মেটাতে তাঁর দিকেই হাত বাড়ান ইয়ুর্গেন ক্লপ। কিন্তু লিভারপুলের জার্সিতে শুরু থেকেই সংগ্রাম করেছেন ম্যাক আলিস্টার। কৌশলগত কারণে লিভারপুলে শুরু থেকেই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে হয়েছে ম্যাক আলিস্টারকে। কিন্তু অনভ্যস্ত পজিশনে খেলতে গিয়ে একরকম চাপেই পড়েছেন এই মিডফিল্ডার।
গোলরক্ষক, সেন্টারব্যাক এবং ফুলব্যাকরা সব পাস শুধু ম্যাক অ্যালিস্টার দিকেই পাঠাতে শুরু করলেন। ম্যাচ বিল্ডআপে কিছু কিছু সময় ভালো ভূমিকা রাখলেও বেশির ভাগ সময় টাল হারাতে দেখা গেছে তাঁকে। পাশাপাশি মাঝমাঠে স্বভাবসুলভ সৃষ্টিশীল ভূমিকা রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন ম্যাক আলিস্টার, যা ভুগিয়েছে লিভারপুলকেও।
পরিবর্তিত এ ভূমিকার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্টের কথা জানিয়েছিলেন ম্যাক আলিস্টার নিজেও। পরবর্তী সময়ে অবশ্য ক্লপ তাঁকে ঠিকই ‘নাম্বার এইট’ হিসেবে মাঝমাঠে খেলার সুযোগ দেন। মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করতে থাকা ম্যাক আলিস্টার এর মধ্যে পাননি গোলের দেখাও। অবশেষে গতকাল ফুলহামের বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক বুলেট শটে আদায় করে নেন প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম গোলটি, যা অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির ৪–৩ ব্যবধানের জয়েও রেখেছে দারুণ অবদান।
ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে খেলা। টটেনহাম তখন পিছিয়ে ২–১ গোলে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পিছিয়ে থাকা স্পার্সরা চেষ্টা করছে ম্যাচে ফেরার। তাদের সেই প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়ন করেন জিওভানি লো সেলসো। চোটের কারণে গত বছর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে সঙ্গী হতে পারেননি লো সেলসো। সেই বেদনাকে সঙ্গী করেই বাকি জীবন কাটাতে হবে তাঁকে।
কিন্তু ফুটবল তো আর থেমে থাকে না। লো সেলসো সেসব ভুলে ফিরেছেন মাঠে। এবার আলোচনায় আসলেন দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে। পরপর দুই ম্যাচে টটেনহামের হয়ে করলেন গোলও। প্রিমিয়ার লিগে মাত্র ৫ ম্যাচ খেলে ২ গোল পেয়েছেন এই মিডফিল্ডার। তাঁর গোলে ২–২ ব্যবধানে সমতায় ফেরা টটেনহাম পরে ম্যাচটা শেষ করে ৩–৩ সমতায়। এই ড্রয়ে নিজেদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল রাখার পাশাপাশি সিটির শিরোপা স্বপ্নে বড় ধাক্কা দিতে সক্ষম হয়েছে টটেনহাম।
খুব একটা সুযোগ না পেলেও পাওলো দিবালাও ছিলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গী। ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমার হয়ে দারুণ ছন্দেও আছেন এই ফরোয়ার্ড। টানা দুই ম্যাচে দুটি গোলের সঙ্গে দুটি সহায়তাও আছে তাঁর। দুটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে রোমা। সর্বশেষ গতকাল সাসুলোর বিপক্ষে তাদের মাঠে রোমা জিতেছে ২–১ গোলে।
শুরুতে পিছিয়ে পড়া দলকে পেনাল্টি গোলে ৭৬ মিনিটে সমতায় ফেরান দিবালা। পরের রাসমুস ক্রিস্টেনসেনের গোলটাও এসেছে তাঁর সহায়তা থেকে। এই জয়ে সেরা চারের অবস্থানটাও ভালোভাবে ধরে রেখেছে তারা। অন্যদিকে গোল না পেলেও সিটির আর্জেন্টাইন তারকা হুলিয়ান আলভারেজ দারুণ একটি অ্যাসিস্ট করেছেন টটেনহামের সঙ্গে ৩–৩ ড্রয়ের ম্যাচে। ৩১ মিনিটে ফিল ফোডেনের এগিয়ে দেওয়া গোলটি তাঁরই বানিয়ে দেওয়া।