উইকিপিডিয়া বলছে, নেপলসের জনসংখ্যা ৯ লাখ ৯ হাজারের কিছু বেশি। ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা যদি এই জনসংখ্যার সমান হতো, তাহলে নিশ্চয় শহরের সবাই মাঠে বসেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে চাইতেন।
সেটা তো আর সম্ভব নয়। বিশ্বে এত ধারণক্ষমতার কোনো ক্রীড়া ভেন্যু আসলে নেই। তবে আট থেকে আশি—নেপলসের সব বয়সী মানুষ নিশ্চয় এতক্ষণে রাজপথে আনন্দ মিছিল বের করেছেন!
এমনটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। ঘরের মাঠে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টকে ৩–০ ব্যবধানে উড়িয়ে নাপোলি যে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ আসরে এটাই ইতালিয়ান ক্লাবটির সেরা সাফল্য। শুধু কি তাই? ২০০৬ সালের পর এই প্রথম ইতালির তিনটি ক্লাব যে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে নাম লেখাল, সেটা তো নাপোলিরই বদন্যতায়।
খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ, ক্লাব সংশ্লিষ্ট থেকে খেলা দেখতে আসা ৫৪ হাজার দর্শক—আবেগের পারদ উঠেছিল চরমে। রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই যিনি যাঁকে সামনে পেয়েছেন, আলিঙ্গন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অধিনায়ক জিওভানি ডি লরেনৎসো ও মিডফিল্ডার পিওতর জিয়েলিনস্কির দুই চোখ বেয়ে তো আনন্দাশ্রুও ধরে পড়ল।
শেষ ষোলোর প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ২–০ ব্যবধানে হারে ফ্রাঙ্কফুর্ট। শেষ আটে জায়গা করে নিতে লিভারপুলের মতোই কঠিন সমীকরণ মেলাতে হতো তাদের। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি লিভারপুল। একই সময়ে শুরু হওয়া ম্যাচে পারেনি ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন ফ্রাঙ্কফুর্টও। জার্মান ক্লাবটিকে সেই সুযোগই দেয়নি নাপোলি।
দুইয়ে থাকা ইন্টার মিলানের চেয়ে ১৮ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে এখনই ইতালিয়ান সিরি ‘আ’–এর ট্রফিতে (স্কুদেত্তো নামে পরিচিত) এক হাত দিয়ে রেখেছেন ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগেও লুসিয়ানো স্পালেত্তির দল পেল ১১৮ বছরের ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ সাফল্য।
বিদায় অনেকটা নিশ্চিত জেনেও দলকে অনুপ্রাণিত করতে নেপলসে ছুটে এসেছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্টের কয়েক হাজার সমর্থক। স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর শঙ্কা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে ইতালিয়ান প্রশাসনকে। তবু দাঙ্গা বাধিয়েছেন উগ্র সমর্থকেরা।
প্রতিপক্ষের মাঠে ম্যাচ হওয়ায় ফ্রাঙ্কফুর্ট অ্যাওয়ে জার্সি (লাল রংয়ের) পরে খেললেও সমর্থকেরা প্রথম পছন্দের কালো জার্সি পরেই এসেছিলেন। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগে তাদের মুখগুলোও যেন কালো করে তুলেছিলেন ভিক্টর ওসিমেন। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোল করে এগিয়ে দেন এই নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার।
বিরতি থেকে ফিরেই আরেক গোল করেন ওসিমেন। এতে যেন নেপলসের রাজপথে ফ্রাঙ্কফুর্ট সমর্থকদের লাগানো আগুন নিভে যায়। আর ৬৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টের আশার সমাধিতে এপিটাফ লেখার কাজটা করেন পিওতর জিয়েলিনস্কি।
দুর্দান্ত ছন্দে থাকা নাপোলি যেভাবে ছুটছে, তাতে দীর্ঘ লিগ শিরোপার খরা ঘোচানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগে আরও চমক দেখালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।