শিরোপা উদ্‌যাপনের জন্য প্রস্তুত ডর্টমুন্ড
শিরোপা উদ্‌যাপনের জন্য প্রস্তুত ডর্টমুন্ড

ডর্টমুন্ডের বসন্ত উৎসবে বায়ার্নের ‘শীত’ নামানোর প্রার্থনা

কখনো হলুদ ক্যাপ পরে আবার কখনো খোলা চুলে চশমা পরা লোকটি মুষ্টি পাকিয়ে কয়েক ফুট লাফিয়ে উঠে উদ্‌যাপন করছেন। তাঁর এই উদ্‌যাপন মোটেই সাধারণ কোনো উদ্‌যাপন ছিল না। ৮ মৌসুম ধরে একটি দলের শিরোপাহীন থাকার জবাব ছিল সেই উদ্‌যাপন। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে একজন লোকের ফুটবল–দর্শন বদলে দেওয়ার প্রতীক ছিল সেই উদ্‌যাপন। তাঁর সেই উদ্‌যাপনে সিগনাল ইদুনা পার্ক তো বটেই, জেগে উঠছে ডর্টমুন্ড শহরের অলিগলিও। বলা হচ্ছে, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের অপ্রতিরোধ্য ২০১০–১১ এবং ২০১১–১২ মৌসুমের কথা।

আর যে লোকটি আঙুলের ইশারায় জাদুকরের মতো গোটা জার্মানিতে হলুদবিপ্লবের ঢেউ তুলেছিলেন, তিনি ইয়ুর্গেন ক্লপ। যাঁর ‘গেগেনপ্রেসিং’ ফুটবল–দর্শন শুধু সেই দুই মৌসুমই নয়, ফুটবলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে এক দশক ধরে। ক্লপকে নিয়ে এত কথা বলার কারণ ডর্টমুন্ডের সর্বশেষ লিগ শিরোপা জয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই জার্মান কোচের নাম। তাঁর হাত ধরেই ২০১০–১১ এবং ২০১১–১২ মৌসুমে টানা দুটি লিগ শিরোপা জিতেছিল বরুসিয়া।

এরপর আরও তিন মৌসুম ক্লপ ডর্টমুন্ডে ছিলেন, কিন্তু বরুসিয়াকে আর কোনো লিগ শিরোপা জেতাতে পারেননি। ক্লপের বিদায়ের পরও বদলায়নি পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে ১১ বছর ধরে বায়ার্ন মিউনিখের দাপটে কোণঠাসা হয়ে ছিল ডর্টমুন্ড। তবে ডর্টমুন্ডের এক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটতে পারে আজ রাতেই। যদি নিজেদের ম্যাচে মাইনৎসের সঙ্গে জিততে পারে, তাহলে ২০১১–১২ সালের পর আবার বুন্দেসলিগার শিরোপা জিতবে ডর্টমুন্ড

এমনকি কোলনের বিপক্ষে ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখ পয়েন্ট হারালেও কোনো হিসাব ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে ডর্টমুন্ড। তবে সিগনাল ইদুনা পার্কের ক্লাবটি যদি হেরে যায় কিংবা ড্র করে আর বায়ার্ন যদি নিজেদের ম্যাচ জিতে যায়, তবে বদলে যেতে পারে দৃশ্যপট। তেমনটা হলে ডর্টমুন্ডকে পেছনে ফেলে শিরোপা জিতবে বায়ার্নই। দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে গোল ব্যবধানে বায়ার্ন ডর্টমুন্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকায় শিরোপা জিতবে তারাই।

আজও ডর্টমুন্ডের গ্যালারিতে দেখা যাবে এমন হলুদ ঢেউ

ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের তিনটিতে এরই মধ্যে শিরোপা নির্ধারণ হয়ে গেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটি, লা লিগায় বার্সেলোনা এবং সিরি ‘আ’তে শিরোপা জিতেছে নাপোলি। ফ্রান্সে পিএসজির শিরোপা জয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লেঁসের চেয়ে ৬ পয়েন্টে এগিয়ে আছে পিএসজি, এমনকি গোল ব্যবধানেও অনেক এগিয়ে প্যারিসের ক্লাবটি। তাই পিএসজির লিগ শিরোপা জয় সময়ের ব্যাপারমাত্র। এই মুহূর্তে লিগ শিরোপার রেসে সব রোমাঞ্চ জমা হয়েছে বুন্দেসলিগায়।

তবে সমীকরণ যা–ই থাকুক, ১১ বছর পর আবার শিরোপা উদ্‌যাপনে প্রস্তুত ডর্টমুন্ড। কদিন ধরে শহরজুড়ে যেন বসন্ত নেমেছে। রাস্তাজুড়ে শুধু হলুদ আর হলুদ। আজও পুরো শহরের অভিমুখ হবে স্টেডিয়ামগামী। সেখানেও দিগন্তজুড়ে থাকবে শুধু হলুদের সমারোহ। কতগুলো বছরের পর এমন একটি উদ্‌যাপনের উপলক্ষ এল!

ডর্টমুন্ডের শিরোপা উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি কেমন, সেটি বোঝা যাবে ডর্টমুন্ডের স্পোর্টিং ডিরেক্টর সেবাস্তিয়ান খেলের কথায়। তিনি বলেছেন, ‘রোববার আমাদের গ্লাসে রেড ওয়াইন থাকবে। আমরা সবকিছু উপভোগ করব।’ নিজেদের শিরোপা জয় নিয়ে নিশ্চিত না হলে এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলা নিশ্চয় সম্ভব হতো না। শুধু খেলই নন, পুরো ডর্টমুন্ড শহর এখন উদ্‌যাপনের জন্য প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছেন, ‘শনিবার আমরা কত লোক আনতে পারব? আমি বলব, সম্ভবত ৫ লাখ। কিন্তু আমাদের স্টেডিয়ামে আসনসংখ্যা সীমিত।’

হতাশার এক মৌসুম কাটিয়েছে বায়ার্ন

শিরোপা জেতার পর উদ্‌যাপনের সব বাঁধ যে ভেঙে যাবে, তা জানা আছে খেলের। ডর্টমুন্ডের হয়ে তিনবার লিগ শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। পরিস্থিতি আন্দাজ করে আগাম প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন তিনি, ‘সবাই শনিবারের কথা বলছে। কিন্তু আমরা জানি যে আমাদের রোববারের জন্যও স্টাফদের সংগঠিত রাখতে হবে। কারণ, আমরা জানি, ডর্টমুন্ডে কী হতে পারে। আমার এর আগে তিনবার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং সেটা অবিশ্বাস্য ছিল। উদ্‌যাপনের জন্য ডর্টমুন্ডের চেয়ে আর ভালো জায়গা হতেই পারে না।’

লিগ রেসে পিছিয়ে থেকে শিরোপা হারানোর শঙ্কায় ডর্টমুন্ডের ঠিক উল্টো পরিস্থিতিতে বায়ার্নের। শিরোপা রেসে কিছুই যে তাদের হাতে নেই। শুধু নিজেরা জিতলেই যে হচ্ছে না, প্রার্থনা করতে হবে ডর্টমুন্ডের পয়েন্ট হারানোরও। কোলন ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বায়ার্ন কোচ টমাস টুখেল বলেছেন, ‘আমাদের নিজেদের ভুলে এমনটা হয়েছে। অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব শেষে এসে সব বদলে দেওয়ার। কারণ, আমরা নিজেদের উজাড় করে দেব।’

এমনকি শিরোপা জিতলেও এ মৌসুম নিয়ে খুশি নন তিনি, ‘এটা এমন মৌসুম নয়, যা নিয়ে আমরা খুশি হতে পারি। এটা এমন মৌসুম নয়, যেখানে আমরা নিজেদের চাহিদামতো পয়েন্ট পেয়েছি। ম্যাচগুলোও মানসম্মত ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাই ফল যা–ই হোক, আমি এই মৌসুম নিয়ে আর সন্তুষ্ট হতে পারব না।’

টুখেল খুশি না হন, তবে শেষে এসে যদি পাশার দান বদলে যায়, তবে বায়ার্ন সর্মথকদের জন্য সেটি দারুণ এক পাওয়া হবে। তখন ডর্টমুন্ডের শহরে জেগে ওঠা হলুদ ঢেউ নৈঃশব্দ্য ও নির্জনতায় হারিয়ে যাবে। আর উল্টো রথে মিউনিখে শুরু হবে লাল–উৎসব। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা জানার জন্য অবশ্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হবে।