এমন স্বপ্নের মতো রাত জীবনে খুব কমই আসে। এই রাত হয়তো সারা জীবন মনে রাখবেন তাতি কাস্তেয়ানোস। গতকাল মাঠে নামার আগপর্যন্ত ফুটবল বিশ্বে কজনই বা চিনত তাঁকে। কিন্তু ৯০ মিনিট পর যখন মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন, তখন ফুটবল বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত নামটি কাস্তেয়ানোস।
এই এক ম্যাচ দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটা লিখিয়ে নিয়েছেন জিরোনার আর্জেন্টাইন ফুটবলার। ইতিহাসের দশম ফুটবলার হিসেবে রিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ গোল করার অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন এই আর্জেন্টাইন। আর্জেন্টাইনদের মাঝে দ্বিতীয় এবং লা লিগায় ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন কাস্তেয়ানোস।
সবশেষ ২০১৩ সালে রিয়ালের বিপক্ষে ১ ম্যাচে ৪ গোলের কীর্তি গড়েছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। লেভা এই কীর্তি গড়েছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কাস্তেয়ানোস জিরোনাতে ধারে খেলতে এসেছেন। তাঁর মূল দল এমএলএসের ক্লাব নিউইয়র্ক সিটি এফসি।
তবে ধারে এসেও এ মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উঠে আসা জিরোনাকে পথ দেখাচ্ছেন দারুণ নৈপুণ্যে। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১২ গোল করে এখন পর্যন্ত জিরোনার সর্বোচ্চ গোলদাতাও ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
কাস্তেয়ানোসের ফুটবল-যাত্রাটা অবশ্য মোটেই সহজ ছিল না। ১৭ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার কোনো ক্লাবে জায়গা না পেয়ে দেশ ছাড়েন এই ফুটবলার। রিভার প্লেট ও লানোস যোগ্য মনে না করলেও তাঁকে দলে নেয় ইউনিভার্সিটি অব চিলি। দলের কোচ রিভারোলা নিজে গড়ে তোলেন কাস্তেয়ানোসকে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে চিলিতে যাওয়ার দেড় বছর পর তাঁকে ধারে পাঠানো হয় উরুগুয়ের ক্লাব মন্টেভিডিও সিটি টর্কে।
ক্লাবটিকে প্রথম বিভাগে নিয়ে আসার পথে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন কাস্তেয়ানোস। ২০১৮ সালে নিউইয়র্ক সিটির দায়িত্ব নেন পেপ গার্দিওলার সহকারী ডমেনেক টোরেন্ট। তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে ধারে নিয়ে আসেন এই আর্জেন্টাইন তরুণকে।
২০১৯ সালে নিউইয়র্ক সিটিকে নিজেদের ইতিহাসে রেকর্ড ৬৪ পয়েন্ট এনে দেওয়ার পথে দারুণ ভূমিকা রাখেন কাস্তেয়ানোস। ২০২১ সালে প্রথম আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে এমএলএসে গোল্ডেন বুট জেতার কৃতিত্বও দেখান কাস্তেয়ানোস। এরপর গত বছর আবার ধারে আসেন জিরোনাতে। নিউইয়র্কের ছন্দ স্পেনে এসেও তাঁকে ছেড়ে যায়নি।
এর আগে ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩ দলে জায়গা পান কাস্তেয়ানোস। খেলেছেন ৬ ম্যাচ। যত সময় গড়িয়েছে, উন্নতি করেছেন কাস্তেয়ানোস। গোল করার পাশাপাশি গোল করানো এবং বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষেত্রেও সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ কার্যকারিতা দেখিয়েছেন। এ ছাড়া একাধিক পজিশনে খেলার সামর্থ্য আছে তাঁর। নিজেকে স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেও চাইলে তাঁকে মিডফিল্ডার কিংবা উইঙ্গার হিসেবেও খেলানো যায়।
তবে কাস্তেয়ানোসের অতীতের সব অর্জনকে ছাপিয়ে গেছে গতকাল রাতের ৪ গোল। এই গোলগুলো ফুটবলের মঞ্চে নতুন এক কাস্তেয়ানোসকে পরিচয় করিয়ে দিল।