২ বছর আগেও ইংলিশ লিগ কাপের (কারাবাও কাপ নামে পরিচিত) ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল লিভারপুল–চেলসি। সেবার নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং এরপর অতিরিক্ত সময় পেরিয়েও কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। ২১ শটের ‘ম্যারাথন’ সেই টাইব্রেকার ১১–১০ ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লিভারপুল।
আজ দুই দলের আরেকটি লিগ কাপ ফাইনালও সে পথেই এগোচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ও গোলবন্ধ্যাত্বেই কাটতে যাচ্ছিল। লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা ৮৯ হাজার ছুঁই ছুঁই দর্শকের অনেকে নিশ্চয় আরেকটি রোমাঞ্চকর পেনাল্টি শুটআউট দেখার অপেক্ষাতে ছিলেন।
কিন্তু সেই রোমাঞ্চে জল ঢেলে দিলেন ভার্জিল ফন ডাইক, এতে চেলসি সমর্থকদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হওয়ার কথা। ম্যাচের ১১৮ মিনিটে অধিনায়ক ফন ডাইকের গোলেই যে চেলসিকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে দিল লিভারপুল। নিজের বিদায়ী মৌসুমে ইয়ুর্গেন ক্লপ জিতে নিলেন তাঁর প্রথম শিরোপা। এ জয়ে প্রথম ক্লাব হিসেবে রেকর্ড ১০ বার লিগ কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তিও গড়ল অলরেডরা।
এ মৌসুমে লিভারপুলের চোটের তালিকা এমনিতেই লম্বা। ফাইনালের আগে এ তালিকায় উঠে গেছে দারুণ ছন্দে থাকা ফরোয়ার্ড দারউইন নুনিয়েজ ও প্রাণভোমরা মোহাম্মদ সালাহর নাম। আজকের ফাইনালে তাঁদের কাউকে পাওয়া যাবে না, সেটা ভালো করেই জানতেন ফন ডাইক। তবু এ ম্যাচ জেতার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন।
কারণ, কোচ ক্লপকে বিদায়ী মৌসুমে সম্ভাব্য ৪ শিরোপাই (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, লিগ কাপ ও উয়েফা ইউরোপা লিগ) উপহার দেওয়া। লিগ কাপ জিতে যার প্রথমটি ক্লপের হাতে তুলে দিলেন ফন ডাইকই। ১১৮ মিনিটে বদলি কস্তাস সিমিকাসের কর্নার থেকে ফন ডাইক যেভাবে মাথা ছুঁয়ে বল জালে পাঠালেন, তা চেলসি গোলকিপার দোর্দে পেত্রোভিচের চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। তবু ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বল ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন পেত্রোভিচ।
৬৪ বছরের লিগ কাপ ইতিহাসে এটাই একবিংশ শতাব্দীতে হওয়া ফাইনালে সবচেয়ে দেরিতে পাওয়া জয়সূচক গোল। আসরের ফাইনালে সবচেয়ে দেরিতে করা গোলটা অ্যাস্টন ভিলার ব্রায়ান লিটলের। ওয়েম্বলিতেই ১৯৭৭ সালের ফাইনালে এভারটনের বিপক্ষে ১১৯ মিনিটে গোল করে ভিলাকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন লিটল।
লিভারপুল অবশ্য নির্ধারিত সময়েই ম্যাচ জিতে নিতে পারত। ৬০ মিনিটে হেডেই গোল করেছিলেন ফন ডাইক। কিন্তু অ্যান্ডি রবার্টসন ডি বক্সে বল ক্রস করার সময় ওয়াতারু এন্দো অফসাইডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভিএআর যাচাইয়ের পর গোলটি বাতিল করেন রেফারি ক্রিস কাভানাঘ।
লিভারপুলের চোটের তালিকা আরও লম্বা হয়েছে আজ রায়ান গ্রাভেনবার্চ স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ায়। ২৩ মিনিটে গ্রাভেনবার্চকে বাজেভাবে ট্যাকল করেন চেলসির মোইসেস কাইসেদো। ব্যথায় কাতর লিভারপুল মিডফিল্ডার আর খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে মাঠে নামেন জো গোমেজ।
প্রথমার্ধে এগিয়ে যেতে পারত চেলসিও। ৩২ মিনিটে নিকোলাস জ্যাকসনের ক্রস থেকে বল পেয়ে দারুণ এক গোল করেছিলেন রাহিম স্টার্লিং। কিন্তু তাঁর গোলটিও অফসাইডে বাতিল হয়।
পুরো ম্যাচে দুই দল লক্ষ্যে শট নিয়েছে মোট ২০টি, এর মধ্যে চেলসির কনোর গ্যালাগার আর লিভারপুলের কোডি গাকপোর শট বারে লেগে ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত ফন ডাইকই ব্যবধান গড়ে দিলেন।