আর্জেন্টিনা ১–০ চিলি
প্রথমার্ধে গোলের জন্য ১৩টি শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা। ৩টি পোস্টে রাখতে পারলেও গোল হয়নি। বিরতির পর নিকো গঞ্জালেস একবার চিলির ক্রসবারও কাঁপিয়েছেন। ভাগ্য সহায় হয়নি আর্জেন্টিনার। শুধু তা–ই নয়, ৩৭তম জন্মদিনের কেক কেটে মাঠে নামা লিওনেল মেসিও ৬৮ মিনিটে গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন। নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে এভাবে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা আর্জেন্টিনাকে শেষ পর্যন্ত গোল এনে দিয়েছেন লাওতারো মার্তিনেজ। চিলির বিপক্ষে ১-০ গোলের স্বস্তির জয়ে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালও নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা।
স্বস্তির জয়—কথাটা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। ম্যাচে ৭০ মিনিটের পর আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ দুবার ত্রাতা হয়ে না দাঁড়ালে এই ম্যাচে পয়েন্ট পাওয়াই হতো না আর্জেন্টিনার! তবে এ ম্যাচ দেখতে দেখতে কারও কারও এবারের কোপা আমেরিকায় সর্বশেষ ব্রাজিল-কোস্টারিকা ম্যাচ মনে পড়তে পারে। ১৯টি শট নিয়েও গোল না পেয়ে ড্র করেছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনাও ম্যাচের ৭২ মিনিটের মধ্যে নিয়েছে ১৭টি শট। তবু গোল আসছিল না।
চিলি ৭১ মিনিট পর্যন্ত শটই নিতে পারেনি! ৭২ মিনিটে চিলির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রিগো এচেভেরিয়ার নেওয়া প্রথম শটেই গোল হতে পারত। পাল্টা আক্রমণ থেকে বক্সের বাইরে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে তাঁর নেওয়া শট ডাইভ দিয়ে ঠেকান মার্তিনেজ। তিন মিনিট পর বক্সের মাথা থেকে আবারও এচেভেরিয়ার শট এবং এবারও ত্রাতা সেই মার্তিনেজ!
শেষ পর্যন্ত ৮৮ মিনিটে বক্সের ভেতর জটলা থেকে পাওয়া বল জালে পাঠান মার্তিনেজ। মেসির নেওয়া কর্নারে জটলার ভেতর থেকে বল পেয়ে যান বাঁ দিকে একটু ফাঁকায় দাঁড়ানো মার্তিনেজ। ডান পায়ের শটে বল জালে জড়াতে তাঁর কোনো অসুবিধাই হয়নি। ম্যাচে এটি আর্জেন্টিনার ২১তম শট! রেফারি অবশ্য ভিএআরের মাধ্যমে তিন মিনিট ধরে গোলটির বৈধতা পরীক্ষা করেছিলেন। আর্জেন্টিনার হয়ে নিজের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই গোল পেলেন মার্তিনেজ। তার আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ভুগেছেন গোলখরায়।
যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে আনহেল দি মারিয়ার পাস থেকে অবশ্য অবিশ্বাস্যভাবে একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন মার্তিনেজ। ডান প্রান্তের ফাঁকা জায়গা দিয়ে বল নিয়ে টান দেওয়া দি মারিয়া বক্সে ঢুকে ক্রস বাড়ালেও ব্রাভোকে ফাঁকি দিতে পারেননি মার্তিনেজ। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক গোলকিপার ব্রাভো এই ম্যাচে মোট ৮টি সেভ করেন।
‘এ’ গ্রুপে নিজেদের দুটি ম্যাচই জিতে মোট ৬ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। পেরুর বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি খেলবে স্কালোনির দল। অন্য ম্যাচে পেরুকে ১–০ গোলে হারানো কানাডা ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়। সমান ম্যাচে ১ পয়েন্ট পাওয়া চিলি তৃতীয় এবং চতুর্থ পেরু। ২ ম্যাচে পেরুর সংগ্রহও ১ পয়েন্ট।
মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ৮২ হাজার দর্শকের সামনে প্রথমার্ধে ফিনিশিংয়ের সমস্যায় ভুগেছে আর্জেন্টিনা। চিলির বর্ষীয়ান গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভোও দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ২২ মিনিটে আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজের শট রুখে দেন ৪১ বছর বয়সী ব্রাভো। বিরতির পরও নাহুয়েল মলিনা ও নিকো গঞ্জালেসের দুটি শট সেভ করেছেন তিনি।
মেসিকে ম্যাচের প্রথম আধা ঘণ্টায় প্রায় অকার্যকর করে রেখেছিল চিলির রক্ষণ। তিন খেলোয়াড় মিলে মার্ক করেছেন আটবারের ব্যালন ডি’অরজয়ীকে। গোল পেতে মরিয়া মেসি ৩৬ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে শট নিয়েছিলেন। বল পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। ৬৭ মিনিটে চিলির বক্সে সতীর্থের পাস থেকে পাওয়া গোলের সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারেননি মেসি। বাঁ পা দিয়ে বলটা তুলে দিলেও পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের ৪৬ বছর পূর্তির দিনে চিলির বিপক্ষে প্রতিশোধও নেওয়া হলো তাদের। নিউ জার্সির এই মাঠেই ২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনালে টাইব্রেকারে চিলির কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। সেই হারের পর আর্জেন্টিনার জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি। তবে সাত সপ্তাহ পরই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফিরেছিলেন জাতীয় দলে। বাকিটা সবার জানা।