ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি

নতুন মৌসুমে নতুন চেহারায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, কী কী পরিবর্তন আসছে

শুক্রবার শুরু হয়ে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম। ২০২৪-২৫ মৌসুমে পাঁচজন নতুন কোচ যোগ দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬০ কোটি ডলার খরচ করে নতুন অনেক খেলোয়াড় কেনা হয়েছে, আসছে নতুন অফসাইড প্রযুক্তি, হালনাগাদ হয়েছে আর্থিক নীতি, পরিবর্তন এসেছে সূচি প্রণয়নেও।

কোচিংয়ে যত পরিবর্তন

লিভারপুলের নতুন কোচ আর্নে স্লট

২০ দলের লিগের এক-চতুর্থাংশ কোচই এবারই প্রথমবার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগ ক্লাবের। লিভারপুল (আর্নে স্লট), চেলসি (এনজো মারেসকা) ও ব্রাইটন (ফাবিয়ান উরজেলার) নতুন কোচ নিয়োগ দিয়েছে। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে ওঠা দুই ক্লাব সাউদাম্পটন (রাসেল মার্টিন) ও ইপসউইচের (কিয়েরান ম্যাকেনা) কোচেরও প্রিমিয়ার লিগে কোচিংয়ের পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই। প্রধান কোচের পদে পরিবর্তন আছে আরও। ডেভিড ময়েসের জায়গায় ওয়েস্ট হামের কোচ হয়েছেন হুলেন লোপেতেগি। লেস্টারে মারেসকার জায়গা নিয়েছেন স্টিভ কুপার। প্রিমিয়ার লিগে ডাগআউটে এবার অনেক পরিচিত মুখই দেখা যাবে না। সবচেয়ে বড় নামটা অবশ্যই ইয়ুর্গেন ক্লপ। লিভারপুলকে বদলে দেওয়া জার্মান কোচের জায়গা নেওয়া স্লট কতটা সফল হবেন, কে জানে!

ধীরগতির দলবদল বাজার

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন দুই খেলোয়াড় নুসাইর মাজরাউয়ি (বাঁয়ে) ও মাথিয়াস ডি লিখট

ট্রান্সফারমার্কেট ওয়েবসাইটের হিসাব অনুযায়ী এবার প্রিমিয়ার লিগের ২০ ক্লাব খেলোয়াড় কিনতে যে খরচ করেছে, তা স্পেন, ইতালি ও জার্মানির শীর্ষ লিগের সম্মিলিত খরচের সমান। তবু মনে হচ্ছে দলবদলের এই মৌসুমটায় বড় কিছু ঘটেনি, কেন? প্রধান কারণ অবশ্য আলোড়ন ফেলার কোনো দলবদল হয়নি এখনো। ৮.৩ কোটি ডলারে বোর্নমাউথ থেকে ডমিনিক সোলাঙ্কির টটেনহামে যাওয়াটাই সবচেয়ে খরুচে দলবদল। তবে ৩ থেকে ৭ কোটি ডলারের দলবদল কম হয়নি এবার। আর খেলোয়াড় বেচা-কেনার সময় আছে আরও তিন সপ্তাহ। ধারণা করা হচ্ছে এই সময়ে ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল ও চেলসি বড় কিছু নামকে দলে টানতে মাঠে নামতে পারে। সিটি (সাভিনিও), আর্সেনাল (রিকার্ডো কালাফিওরি), ইউনাইটেড (ডি লিখট) গত কয়েক দিনে নতুন কিছু চুক্তি করেছে। ৩০ আগস্টের ট্রান্সফার ডেডলাইনের আগে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো ২০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করে ফেললেও অবাক হওয়া কিছু নেই। তবে কিছু খেলোয়াড়কে বেচে দিয়েই লিগের কঠোর আর্থিক-নীতি মানতে হবে ক্লাবগুলোকে।

সেমি-অটোমেটেড অফসাইড

সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি দেখা যাবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

আশা করা হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগে এবার অফসাইডের সিদ্ধান্তগুলো আরও দ্রুত হবে। প্রিমিয়ার লিগে এবারই প্রথম দেখা যাবে সেমি-অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি। একাধিক ক্যামেরা খেলোয়াড়দের অনুসরণ করবে। অফসাইডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের শরীরের বিভিন্ন অংশের তথ্য-উপাত্তও সংরক্ষণ করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিয়ে ত্রিমাত্রিক অফসাইড লাইন আঁকা হবে ও ভিএআর অফিশিয়ালদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এখন ভিএআরে ম্যানুয়ালি অফসাইডের সিদ্ধান্ত দিতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে প্রায় ৩০ সেকেন্ড সময় কম লাগবে সেমি-অটোমেটেড প্রযুক্তিতে। ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৪ ইউরোতে সেমি-অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এই মঙ্গলবার প্রিমিয়ার লিগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে, যেখানে রেফারিং ও ভিএআরের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।

খরচের নীতি

সর্বশেষ মৌসুমটা এভারটন ও নটিংহাম ফরেস্টের মতো ক্লাব ভুলতে পারবে না। আর্থিক সংগতি নীতি ভঙ্গের অভিযোগে পয়েন্ট কেটে নেওয়া হওয়া এই দুই ক্লাবের। এবার আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ হবে সেই নীতি। আসছে মৌসুমটাই বর্তমান আর্থিক নীতির শেষ বছর। এ ছাড়া ২০২৫-২৬ মৌসুম থেকে চালু হতে যাওয়া খরচের বিধিনিষেধের দুটি নতুন আইনেরও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে এবার। ইংল্যান্ডের শীর্ষ ক্লাবগুলোর জন্য নতুন ‘দলের খরচ নীতি’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। এই নীতিতে ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের পেছনে মোট আয়ের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ খরচ করতে পারবে। দ্বিতীয় নীতিটির নাম ‘টপ টু বটম অ্যাঙ্করিং’ অথবা অ্যাঙ্করস সীমা। এই নিয়মে প্রাইজমানি ও টিভি স্বত্ব থেকে পাওয়া অর্থের অনুপাতে খরচ করতে পারবে দলগুলো। প্রিমিয়ার লিগকে আরও উন্নত করতে ও ক্লাবগুলোকে টিকিয়ে রাখতেই এ সব নতুন নিয়ম চালু করার কথা বলেছে লিগ কর্তৃপক্ষ।