কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেই রেকর্ড গড়বেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সর্বোচ্চ পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’-এর ক্লাব তখন হয়ে যাবে ‘ফাইভ মাস্কেটিয়ার্স’, যেখানে নতুন সদস্য হবেন মেসি ও রোনালদো।
এর আগে মেক্সিকোর কিংবদন্তি গোলকিপার আন্তোনিও কারবাহাল ও সাবেক ডিফেন্ডার রাফায়েল মার্কেজ এবং জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জেতা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথাউস পাঁচটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। মেসি-রোনালদো এই বিশ্বকাপ দিয়ে ‘ত্রয়ী’র পাশে বসবেন।
কাতার বিশ্বকাপে এমন আরও কিছু রেকর্ড হাতছানি দিয়ে ডাকছে মেসি-রোনালদোকে। আসুন মেসিকে যেসব রেকর্ড হাতছানি দিয়ে ডাকছে, সেসব আগে দেখে নেওয়া যাক—
সর্বোচ্চ ম্যাচ
চারটি বিশ্বকাপে মোট ১৯ ম্যাচ খেলেছেন আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি। রোনালদোও মেসির সমান চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। তবে ম্যাচসংখ্যায় মেসির চেয়ে পিছিয়ে রোনালদো। মেসি খেলেছেন ১৯ ম্যাচ, রোনালদো ১৭টি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৫ ম্যাচ খেলার রেকর্ড লোথার ম্যাথাউসের। আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠলে এবং মেসি এই পথে সব ম্যাচ খেললে ম্যাথাউসকে টপকে রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন মেসি। তবে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা হারলেও সুযোগ থাকবে—তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ।
মেসি গ্রুপ পর্বেই আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়তে পারেন। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা রেকর্ড ডিয়েগো ম্যারাডোনার। ২১ ম্যাচ খেলেছেন ’৮৬ কিংবদন্তি। গ্রুপ পর্বের আর্জেন্টিনার হয়ে ৩ ম্যাচে মাঠে নামলেই রেকর্ডটি মেসির হয়ে যাবে। রোনালদো এরই মধ্যে পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন।
সর্বোচ্চ জয়
চারটি বিশ্বকাপ খেলে সর্বোচ্চ ১৭টি ম্যাচ জিতেছেন জার্মানির সাবেক স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসা। বিশ্বকাপে ১২ জয় পাওয়া মেসি সেমিফাইনাল জিতলেই ক্লোসাকে পেছনে ফেলতে পারবেন। সেমিফাইনাল না জিতলেও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ক্লোসাকে টপকে যাওয়ার সুযোগ থাকছে মেসির।
গোলে সহায়তা
মেসি এখনই চারটি বিশ্বকাপে গোল বানানো একমাত্র খেলোয়াড়। কাতার বিশ্বকাপে তা পাঁচে উন্নীত করার সুযোগ পাচ্ছেন আর্জেন্টাইন তারকা। তখন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোলে সহায়তার কীর্তি গড়বেন সাতবারের এই ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৫ গোল বানিয়েছেন মেসি। ৮ গোল বানিয়ে এই তালিকার শীর্ষে ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ
বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ১৭ ম্যাচ খেলেছেন মেক্সিকোর সাবেক ডিফেন্ডার রাফায়েল মার্কেজ। ১৬ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে এ তালিকার দুইয়ে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনা। ১২ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন মেসি। এই রেকর্ড ছুঁতেও আর্জেন্টিনাকে অন্তত সেমিফাইনালে তুলতে হবে মেসিকে। এবারও আর্জেন্টিনার অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড থাকবে মেসির হাতে।
প্রথম আর্জেন্টাইন হিসেবে চার বিশ্বকাপে গোল
১৯৮২, ১৯৮৬ ও ১৯৯৪ বিশ্বকাপে গোল করেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে গোল করেছেন। এবার কাতার বিশ্বকাপে গোল করলেই আর্জেন্টিনার এই দুই কিংবদন্তিকে টপকে চার বিশ্বকাপে গোলের রেকর্ড গড়বেন মেসি। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ১০ গোল করা বাতিস্তুতাকে ছুঁতে আরও চার গোল চাই মেসির।
রোনালদোকে যেসব রেকর্ড ডাকছে
পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল
২০০৬ থেকে ২০১৮—এ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপেই গোল করেছেন পর্তুগালের তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাঁর মতো এ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপে গোল করেছেন পেলে (১৯৫৮-১৯৭০), উয়ে সিলার (১৯৫৮-১৯৭০) ও মিরোস্লাভ ক্লোসা (২০০২-২০১৪)। এবার একটি গোল পেলেই প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়বেন রোনালদো।
পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল
‘কালো চিতা’খ্যাত ইউসেবিও ১৯৬৬ বিশ্বকাপে পর্তুগালের হয়ে একাই ৯ গোল করেছিলেন। আর মাত্র ২ গোল করলেই তাঁকে ধরে ফেলবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গত বিশ্বকাপে ৪ গোলের আগে ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে একটি করে গোল করেছেন পর্তুগিজ তারকা।
অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ
২০১০ বিশ্বকাপে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সে বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন। ২০১৪ বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচ এবং ২০১৮ বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন পর্তুগিজ তারকা। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন রোনালদো। পর্তুগাল ফাইনালে উঠতে পারলে এই তালিকায় সর্বোচ্চ ১৭ ম্যাচ অধিনায়কত্বের রেকর্ড গড়া রাফায়েল মার্কেজকেও টপকে যাবেন রোনালদো।