বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে সিনিয়রদের অনেকেই কোচ পিটার বাটলারের কাছে ব্রাত্য। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে পাকিস্তান বিপক্ষে মাঝমাঠের অন্যতম সেরা মারিয়া মান্দাকে একাদশে রাখেননি কোচ। তাঁকে বদলি হিসেবে পাঠানো হয় ৮২ মিনিটে। ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার নামেন ৬৯ মিনিটে। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন ও ফরোয়ার্ড সানজিদাকে বেঞ্চে রাখেন পুরো সময়।
এসব নিয়ে গতকাল টিম হোটেলে প্রথম আলোর কাছে গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান পাকিস্তান ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মনিকা চাকমা। খাগড়াছড়ির মেয়ে বলেছিলেন, কোচ সিনিয়রদের পছন্দই করেন না। কেন করেন না, সেটা কোচই ভালো জানেন। তবে দলের জন্য সিনিয়রদের দরকার আছে বলে মনে করেন মনিকা। সেটি তিনি রাখঢাক না রেখেই বলে দিয়েছেন।
আমরা ছোট, হুট করে নামিয়ে দিলে তেমন খেলতে পারব না। হয়তো খেলব, তবে ওদের ডিসিশনটা আমরা নিতে পারব না।মুনকি আক্তার, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার
পিটার বাটলারও সিনিয়রদের গুরুত্ব উপলব্ধি করছেন? তিনিই ভালো জানেন। তবে আগামীকাল ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ গ্রুপ ম্যাচে আরও বেশি সিনিয়র খেলাতে পারেন কোচ, এমন আভাস দিয়েছেন নবাগত মিডফিল্ডার মুনকি আক্তার।
কাঠমান্ডুর আর্মি হেড কোয়ার্টারস মাঠে অনুশীলন শেষে আজ মুনকি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে যে দলটা নামিয়েছেন কোচ, তা থেকে কয়েকটা বদল হতে পারে। সিনিয়র আপুরা আছে।’ তার মানে কি সিনিয়রদের দলে রাখছেন কোচ? মুনকির উত্তর, ‘মনে হয়, আজকে অনুশীলনে সেটাই বোঝা গেল।’
সিনিয়রদের দু–তিনজন কোচের কাছে গুরুত্ব না পাওয়াটা দলের জন্যই ক্ষতিকর মনে করেন খেলোয়াড়দের অনেকে। মনিকা মুখ ফুটে তা বললেও অন্যরা আড়ালে ফিসফাস করেন। সংবাদমাধ্যমে উদ্ধৃত হয়ে বলতে চান না। মুনকির নিজের কী মনে হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে মুনকি শুধু বলেন , ‘জি, ওনারা (সিনিয়ররা) এর আগপর্যন্ত খেলে এসেছেন। ওনাদের অভিজ্ঞতা আছে।’
ভারত আহামরি টিম না। আমরা যদি স্বাভাবিক খেলাটা খেলি, ইনশা আল্লাহ বের হয়ে যাব। জয়ের জন্যই নামব, ড্র নয়।ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে মুনকি আক্তার
সিনিয়রদের বাইরে রেখে নতুনদের মাঠে নামালে একটা বিপদও দেখেন তরুণ এই খেলোয়াড়। সেটা পরিষ্কার তাঁর এ কথায়, ‘আমরা ছোট, হুট করে নামিয়ে দিলে তেমন খেলতে পারব না। হয়তো খেলব, তবে ওদের ডিসিশনটা আমরা নিতে পারব না।’
পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হওয়া ডিফেন্ডার কোহাতি কিসকুও মনে করেন, ভারতের বিপক্ষে সিনিয়রদের বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন কোচ। এক প্রশ্নে বলেছেন, ‘আপুরা খেলবে (ভারতের বিপক্ষে)।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা যদি সুযোগ পাই, সবাই সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলব।’
কোচ যেভাবে খেলার জন্য বলেছেন, সেভাবেই খেলবেন বলে জানিয়েছে কোহাতি। তাঁর কথায়, ‘কোচ যেগুলো দেখিয়েছেন, আমরা মাঠে সেভাবেই তা করব। দেখি কাল কী হয়। তবে আমাদের ডিফেন্স লাইন সব সময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ, ওনারা (ভারত) তো অনেক স্পিডি। আমাদের টিম সেফটি ঠিক রাখতে হবে।’
ভারত বড় দল। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ৬ বারের ৫ বারই চ্যাম্পিয়ন। এটা বাংলাদেশের জন্য চাপ কি না—এমন প্রশ্নে মুনকির আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ, ‘চাপ কাজ করবে কেন। কারণ, আপুরা খেলে এসেছেন। আপুরা বলেছেন, কোনো চাপ নেওয়ার দরকার নেই। ভারত আহামরি টিম না। আমরা যদি স্বাভাবিক খেলাটা খেলি, ইনশা আল্লাহ বের হয়ে যাব। জয়ের জন্যই নামব, ড্র নয়।’
ভারতের কাছে ২-০ গোলে হারলেও সেমিফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। তবে হারের চিন্তা মাথায় আনছে না বাংলাদেশ। মুনকি যেমন বলেছেন, ‘আমরা হারতে চাই না। জিততে চাই। কোচ বলেছেন, আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে। যা প্র্যাকটিস করিয়েছেন তিনি, সেভাবেই খেলব।’
শুধু তা–ই নয়। বড় লক্ষ্যের কথাই বলছেন মুনকি, ‘আমরা এসেছি এখানে বাংলাদেশে ট্রফি নেওয়ার জন্য। ট্রফি নিয়ে যাব এটাই আশা।’