হঠাৎ নারী ফুটবল লিগে শীর্ষ চার দলকে কাউন্সিলরশিপ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল গত ৩ মে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভায়। আজ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভায় সেটির অনুমোদনও হয়েছে।
বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের নিয়মিত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রুটিন কিছু বিষয়ের সঙ্গে নারী লিগের ৪টি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ অনুমোদিত হয়েছে।’ পরে সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ায় এখন থেকেই তা কার্যকর হবে।’
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর জমজমাট নির্বাচনের মাধ্যমে চার বছরের জন্য বাফুফের বর্তমান নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়েছিল। আর বাফুফের নির্বাচন মানেই ভোটারদের রমরমা বাজার। তখন ভোটার ছিলেন ১৩৯ জন। এই বিপুল ভোটারসংখ্যা নিয়ে ২০২১ সালে প্রশ্ন তোলে ফিফা। গত বছর জানুয়ারিতে ফিফা বাফুফেকে নির্দেশনা পাঠায় ২১ থেকে বাফুফে নির্বাহী কমিটির সদস্যসংখ্যা ১১-১৪ জনে নামিয়ে আনতে। আর কাউন্সিলর নামিয়ে আনতে বলেছিল এক শর নিচে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন তখন বলেছিলেন, ‘ফিফা প্রশ্ন তুলেছে বাফুফের কাউন্সিলরদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কাউন্সিলরশিপ কেন? বাফুফের নির্বাচনে তারা ভোটার কেন?’
ফিফার নির্দেশনা সম্পর্কে বাফুফের সভাপতি তখন আরও জানিয়েছিলেন, যারা ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তাদের কাউন্সিলর হিসেবে না রাখতে বলেছে ফিফা। যেসব জেলা লিগ আয়োজন করবে না, ফিফা তাদেরও কাউন্সিলর না রাখার পরামর্শ দিয়েছিল।
অথচ সাধারণ সভায় হলো উল্টোটা। বছরের পর পর জেলা লিগ আয়োজন না করলেও কারও কাউন্সিলরশিপ বাতিল হয়নি। অনেকে এর পেছনে ভোট-বাণিজ্যের গন্ধ পাচ্ছেন। আজকের সভায় কোনো কাউন্সিলরশিপই বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি, উল্টো নারী ফুটবল লিগের শীর্ষ চার দলকে কাউন্সিলরশিপ দিয়ে তা বাড়ানো হলো। এতে ফিফার নির্দেশনা উপেক্ষা করা হলো কি না, জানতে চাইলে বাফুফে সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘ফিফা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিল, আমরা বলেছি, কাউন্সিলর কমালে ফিফাকেই কমাতে হবে। সাধারণ সভা ছাড়া কমানো-বাড়ানো সম্ভব নয়। সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ৪টি বাড়ানোর। আমরা এখন বিষয়টা ফিফাকে জানাব।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো বিপুল অর্থ খরচ করে বাফুফের নির্বাচনে ভোটাধিকার পায়। আর নারী দলগুলো এক লিগে আটটি ম্যাচ খেলেই ভোটাধিকার পেল। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, সভায় নারী লিগের দলকে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে ভোটাভুটির সময় উপস্থিত অনেকে চুপচাপ বসে ছিলেন। অনেক কাউন্সিলরই নারী লিগের ক্লাবগুলোকে কাউন্সিলরশিপ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। এ ব্যাপারে আপত্তি তুলে অনেকে নাকি মতামতও জানাতে চেয়েছেন। কিন্তু তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কয়েক কাউন্সিলর। তাঁদের ভাষায় তাঁদের ‘কণ্ঠরোধ’ করা হয়েছে। তবে এর সত্যতা অস্বীকার করেছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক।
অবশ্য বাফুফের সাধারণ সভা মানেই কণ্ঠ ভোটে সব পাস। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। সভা শেষে কাউন্সিলরদের অনেকে এ নিয়ে রসিকতাও করছিলেন।
সভায় এ বছরের জন্য ৫৪ কোটি ২৯ টাকা টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। আয় দেখানো হয়েছে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বিপুল ঘাটতি পূরণ করা নিয়ে বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেছেন, তাঁরা স্পনসর খুঁজবেন এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাইবেন।