১-০ গোলে হেরে আরও একবার মহাদেশীয় ক্লাব প্রতিযোগিতার পরের ধাপে যেতে ব্যর্থ ব্রুজোনের দল
১-০ গোলে হেরে আরও একবার মহাদেশীয় ক্লাব প্রতিযোগিতার পরের ধাপে যেতে ব্যর্থ ব্রুজোনের দল

ভিয়েতনামের রেফারির বিরুদ্ধে তদন্ত চান কিংস কোচ

অস্কার ব্রুজোন আর কীই–বা করতে পারতেন!

ওডিশা এফসির বিপক্ষে এএফসি কাপের শেষ গ্রুপ ম্যাচটি ছিল বসুন্ধরা কিংসের জন্য স্বপ্ন পূরণের। কিন্তু সে ম্যাচটিই কিনা শেষ হয়েছে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে! ১-০ গোলে হেরে আরও একবার মহাদেশীয় ক্লাব প্রতিযোগিতার পরের ধাপে যেতে ব্যর্থ ব্রুজোনের দল। তবে কিংসের দুঃখটা আরও বেশি করে পোড়াচ্ছে রেফারির একটা সিদ্ধান্ত।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে যে লাল কার্ডটা উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার আশরোর গফুরভকে দেখানো হয়েছে, সেটাকে বড় অন্যায়ই মনে করছে কিংস। ভূবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ওই মুহূর্তটা ছিল নাটকীয়। একদিকে গফুরভ মাঠ থেকে বিদায় নিচ্ছেন অশ্রুসজল চোখে, অন্যদিকে ব্রুজোনের নেতৃত্বে কিংসের পুরো ডাগআউট দুই হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন রেফারির সামনে গিয়ে। এমন দৃশ্য খুব বেশি দেখা যায় না ফুটবলে।

কাল ম্যাচের পর বসুন্ধরা কিংসের কোচ সংবাদ সম্মেলনটাকেও একটু অন্য রকমই বানিয়ে ফেললেন। ম্যাচ নিয়ে কোনো বিশ্লেষণের ধার ধারেননি তিনি। কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতার ধারও ধারেননি। খুব সংক্ষেপে নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) কাছে ওডিশা এফসির বিপক্ষে ম্যাচে রেফারিং নিয়ে তদন্তই দাবি করে বসেছেন, ‘আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই এএফসির কাছে। বারবার কেন একই জিনিস আমাদের সঙ্গে ঘটবে! এর আগেও দেশের মাটিতে একটি ম্যাচে বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয়েছি। আমরা আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানিয়েছি। এখানেও একই জিনিস ঘটেছে।’

এই তদন্তের দাবি নিয়ে ব্রুজোন কাল রাতে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমি তদন্ত চেয়েছি। ভিয়েতনামের নিচু মানের লিগের একজন রেফারিকে এএফসি কাপের ম্যাচ কেন পরিচালনা করতে দেওয়া হয়েছে? পুরো ম্যাচেই এই রেফারি আমাদের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। গফুরভের লাল কার্ডটা অন্যায় সিদ্ধান্ত। তাঁর এই বাজে রেফারিং নানা কারণেই হতে পারে। এটা আর্থিক কারণেও হতে পারে, আবার কোনো নির্দেশনা থেকেও হতে পারে। আমি জানি না। আমি সে জন্যই তদন্ত চেয়েছি।’ এই ‘আর্থিক কারণ’ ও ‘নির্দেশনা’র কোনো ব্যাখ্যা ব্রুজোন এই প্রতিবেদককে দেননি।

যে ম্যাচটায় কোনোমতে হার এড়ালেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের আন্তআঞ্চলিক প্লে–অফ নিশ্চিত করতে পারত বসুন্ধরা কিংস, সেই ম্যাচে দলের পারফরম্যান্সে কি খুব সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে? এএফসি কাপে প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের কাছে অপ্রত্যাশিত এক হারের পর ঘরের মাঠে এই ওডিশাকেই ৩-২ গোলে হারিয়েছিল কিংস। এমনকি মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসও হারাতে পারেনি তাদের। ঘরের মাঠে ২-১ গোলে জেতা কিংস ভূবনেশ্বরে মোহনবাগানের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে ফিরেছিল।

সর্বশেষ ম্যাচেও মাজিয়াকে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে হারিয়েছিল ২-১ গোলে। ৪ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে কাল ওডিশার বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচটি খেলতে নামা দলের মধ্যেই কিনা কোনো বাড়তি আগুন দেখা গেল না। দলের প্রাণভোমরা তিন ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক রবসন দা সিলভা, দরিয়েলতন গোমেজ আর মিগুয়েল ফেরেইরা ছিলেন বড্ড বেশি নিষ্প্রভ। গফুরভ তো লাল কার্ডই দেখলেন।

আরেক উজবেক বাবুরবেক ইউলদাশোভ কিংবা আইভরি কোস্টের চার্লস দিদিয়ের আহামরি খেলা খেলতে পারেননি। রাকিব হোসেন, বিশ্বনাথ ঘোষ, সাদউদ্দিন, তারিক কাজীরা চেষ্টা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দল ১০ জনে পরিণত হওয়ার চাপটা পড়েছে তাঁদের ওপর।

সব মিলিয়ে ইতিহাস গড়ার ম্যাচে কিংস কি জয়ী দলের মতো খেলতে পেরেছে? কোচ ব্রুজোন অবশ্য সব সময়ই তাঁর খেলোয়াড়দের পক্ষে। তিনি সরাসরিই বলেছেন, খেলোয়াড়েরা যা খেলেছে যথেষ্ট খেলেছে, ‘আমি আমার খেলোয়াড়দের খেলায় সন্তুষ্ট, গর্বিত। আমি মনে করি, তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়েই খেলেছে। শুধু জঘন্য রেফারিং আমাদের শেষ করে দিয়েছে। রেফারিং নিয়ে আমার কিংবা আমার খেলোয়াড়দের হতাশার সীমা নেই।’

কিংসের দুঃখটা আরও বেশি করে পোড়াচ্ছে রেফারির একটা সিদ্ধান্ত

২০২১ সালেও একটা লাল কার্ডই সর্বনাশ করেছিল বসুন্ধরা কিংসকে। সেবার মালদ্বীপের মালেতে মোহনবাগানের বিপক্ষে ম্যাচে সুশান্ত ত্রিপুরা লাল কার্ড দেখেছিলেন। ১-১ গোলে ড্র হওয়া সেই ম্যাচেও সুশান্তর লাল কার্ডটি ছিল প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে। ২৮ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যাওয়া কিংস ৬২ মিনিট পর্যন্ত মোহনবাগানকে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল (কাল ওডিশাও ৬২ মিনিটেই গোল করে)।

ম্যাচটি জিতলে প্রথম আবির্ভাবেই আন্তআঞ্চলিক প্লে–অফ নিশ্চিত করতে পারত বাংলাদেশের চারবারের লিগ বিজয়ীরা। ২৮ মিনিটে গোল করে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দুই বছর পর আবারও স্বপ্নভঙ্গ। এবারের আক্ষেপটা বোধ হয় বহুদিন পোড়াবে কিংসকে। এত কাছে, তবুও কত দূরে!