পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশর রুক্ষ-শুষ্ক ঘাসহীন বালুময় মাঠে বল পায়ে নিয়ে যাত্রাটা শুরু করেছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। ধুলার কারণে কোনো কিছু ঠিকঠাক দেখাও যেত না। জীবনের সেই রুক্ষতা আরও তীব্র হয় ২০০৫ সালে বাবাকে হারানোর পর। তখনো ফুটবল মাঠে ফুল হয়ে ফুটতে বাকি লেভার। তবে হিমালয়ের চূড়ায় যাঁর দৃষ্টি, পথের কাঠিন্যে তাঁর ভয় কিসে?
দমে যাননি লেভাও। নিজের জীবনের নায়ক বাবার মৃত্যুর শোককে পরিণত করেন শক্তিতে। হয়েছেন সময়ের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন। তবু কোথাও কি একটু অস্বস্তি আছে লেভার? কী যেন না থাকার অনুভূতি কিংবা কোথাও কি একটু শূন্যতা বোধ করেন? করতেই পারেন। লম্বা সময় ধরে একটি বোঝা যে বুকে নিয়ে ঘুরছেন।
জাতীয় দল পোল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপে একটি গোলের অপেক্ষা যেন ফুরোচ্ছেই না লেভার। অথচ এবার প্রথম ম্যাচে গোল করার উপলক্ষটা নিজ থেকে লেভার কাছে এসেছিল। কী দুর্ভাগ্য, পেনাল্টি থেকেও বল জালে পাঠাতে পারলেন না। শট ঠেকিয়ে দিলেন মেক্সিকোর গিয়ের্মো ওচোয়া, চার বছর পর বিশ্বকাপ এলেই যিনি কেমন করে যেন ‘লেভ ইয়াসিন’ হয়ে যান! লেভাকে কি তাহলে আরও একটা বিশ্বকাপে গোলহীন থেকেই যেতে হবে?
কদিন আগেই লেভার বয়স ৩৪ পেরিয়েছে। আরেকটি বিশ্বকাপের স্বপ্ন লেভা হয়তো নিজেও দেখেন না। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে গোলও কম করেননি। জাতীয় দল পোল্যান্ডের হয়ে রেকর্ড ৭৬ গোল, বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়ার আগে রেখে এসেছেন ৩৪৪টি গোলের এক বিশাল ভান্ডার, এই মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে মাত্র ১৯ ম্যাচেই করেছেন ১৮ গোল।
না পাওয়াটুকু শুধু বিশ্বকাপেই। এই দিকে তাকালে পাওয়া যাবে মরুভূমিতে তৃষ্ণার্তের মতো হাহাকার করতে থাকা লেভাকে। অর্জনের তালিকায় এই অংশে বিশাল এক শূন্য ছাড়া যেন আর কিছু নেই। ২০০৮ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয় লেভার। ২০১০ ও ’১৪ সালে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি পোল্যান্ড। ’১৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিলেও তিন ম্যাচে কোনো গোল না করে লেভাকে বিদায় নিতে হয় প্রথম রাউন্ডেই।
পোল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা স্ট্রাইকারকে কি তবে বিশ্বকাপে গোলের খাতাটা ফাঁকা রেখেই বিদায় নিতে হবে? গোলহীন লেভার বিদায় যতটা তাঁর জন্য আক্ষেপের, ততটা যে বিশ্বকাপেরও।
আজ অবশ্য লেভার জন্য কাজটা মোটেই সহজ হবে না। অপরিচিত এক নাম থেকে এই কদিনে বিশ্ব ফুটবলের আলোচিত নাম হয়ে ওঠা সৌদি আরবের গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল-ওয়াইসকে যে ফাঁকি দিতে হবে তাঁকে। এই ওয়াইসের কাছে আটকে গিয়ে এখন ঝুলছে লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ–স্বপ্ন। লেভা কি পারবেন ওয়াইসকে ফাঁকি দিতে? আর্জেন্টিনার বিপক্ষে যতই নৈপুণ্য দেখাক, আল–ওয়াইস বিশ্ব ফুটবলে খুব বড় কোনো নাম নয়। সময়ের সেরা গোলরক্ষকদেরও নিজের দিনে তুর্কি নাচন নাচানোর অভিজ্ঞতা আছে লেভার। এই পরীক্ষাটা তাই বড় কিছু নয়। এখন সেই একটি গোলের আক্ষেপ মিটলেই হয়।
বিশ্বকাপে একটি গোলের জন্য লম্বা সময় ধরে স্বপ্ন বুনতে থাকা লেভা সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আমি সবকিছু করব। আমি আশা করি, এই বিশ্বকাপেই সেটি হবে।’
পোল্যান্ডও আজ লেভার গোলের আশায় বসে থাকবে। মেক্সিকোর সঙ্গে প্রথম ম্যাচটা গোলশূন্য ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে তাদের। আজ সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচটা থেকে পুরো ৩ পয়েন্ট না পেলে পরের রাউন্ডে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে পোলিশদের।
নিজের গোলের অপেক্ষা ফুরানোর পাশাপাশি আজ তাই লেভার সামনে পোল্যান্ডকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জও।