অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ গোলের হারের দুঃস্বপ্ন কি কেটেছে? আগামীকাল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দ্বিতীয় রাউন্ডে লেবাননের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম হোম ম্যাচ খেলতে নামার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই হারের দুঃস্বপ্ন কি জামাল ভূঁইয়াদের তাড়া করছে?
আন্তর্জাতিক ফুটবলে বড় হারের ধাক্কা সামলে ওঠা একটু কঠিন। সেটি আরও কঠিন হয়ে পড়ে যখন হারের এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে আরও একটি ম্যাচ খেলতে নামতে হয়। আর সেই ম্যাচও এমন দলের বিপক্ষে, যারা শক্তিতে যথেষ্ট এগিয়ে। কিংস অ্যারেনায় আগামীকাল বিকেলে লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নামবে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ভাষায়, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি কঠিন ছিল। তবে সে ম্যাচের স্কোরলাইন লেবাননের বিপক্ষে খুব কমই প্রভাব বিস্তার করবে। ওই ম্যাচের স্কোরলাইনটা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। কারণ, ওই ম্যাচ আর লেবানন দুটি ভিন্ন দল। দুই ম্যাচের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা।’
লেবানন অচেনা প্রতিপক্ষ নয় বাংলাদেশের জন্য। মধ্যপ্রাচ্যের এই দলটির সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেই জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। ২০১১ সালে লেবাননকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২–০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। জাহিদ হাসান এমিলি আর মিঠুন চৌধুরী ছিলেন জয়ের দুই নায়ক। তবে সেবার বৈরুতে ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৪–০ গোলে। তবে লেবাননের সঙ্গে লড়াইয়ের নতুন ইতিহাস মাত্র পাঁচ মাস আগের। বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচটি অবশ্য আক্ষেপেরই। ৮০ মিনিট পর্যন্ত চোখে চোখে রেখে লড়েও শেষ অবধি হেরে যেতে হয় ২–০ গোলে। দুটি গোলই ছিল রক্ষণভাগের অমার্জনীয় ভুলে।
এবার ঢাকায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে লেবাননের যে দলটি এসেছে, তাতে বেঙ্গালুরুর সাফ টুর্নামেন্টের ৮–৯ জন ফুটবলার দলে নেই। এবার কি চমকপ্রদ কিছু হবে? কাবরেরা জানালেন তিনি লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত। এই রোমাঞ্চের কারণ ৫ মাস আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচ, ‘আমরা আগামীকালকের ম্যাচ নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত। এই রোমাঞ্চের কারণ, আমরা জানি লেবাননের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সামর্থ্য আমাদের আছে। বেঙ্গালুরুর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা কিছুটা চিন্তিত ছিলাম লেবাননকে নিয়ে। কিন্তু আমরা লড়েছি। কালও যদি আমরা নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিতে পারি, তাহলে ভালো ফল সম্ভব।’
অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বললেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ গোলে হারার ম্যাচের দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে চান তিনি। যদিও এ ম্যাচটা যে মালদ্বীপ ম্যাচের চেয়ে অনেক কঠিন, সেটিও মাথায় আছে তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৭ গোলের দুঃস্বপ্ন নিয়ে জামাল বলেছেন ,‘অস্ট্রেলিয়া দল যদি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ফুটবলে প্রাইমারি স্তরের ছাত্র। ওদের সঙ্গে পেরে ওঠাটা আসলেই কঠিন। স্কিল বলুন আর শারীরিক দিক—সব দিক দিয়েই অস্ট্রেলিয়া অন্য পর্যায়ের দল। যে দল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে, তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটি মেনে নিয়েই বলছি, লেবাননের সঙ্গে আমাদের অনেক ভালো ফুটবল খেলতে হবে।’
বেঙ্গালুরুর সাফে লেবাননের যে দলটি খেলেছিল, তাতে কোচ হিসেবে ছিলেন না নিকোলা জুরসেভিচ। নব্বইয়ের দশকে ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের হয়ে ১৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ৫৭ বছর বয়সী জুরসেভিচ কোচ হিসেবে দারুণ অভিজ্ঞ। মাত্রই গত মাসে লেবাননের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে দিনামো জাগরেব, লোকোমোটিভ মস্কো ও আজারবাইজান জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। সহকারী কোচও ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডের। সংবাদ সম্মেলনে দারুণ বিনয়ী এই কোচ বাংলাদেশকে বরং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে কিছুটা সান্ত্বনাই দিলেন, ‘আমি ম্যাচটা দেখেছি। বাংলাদেশের চেয়ে অস্ট্রেলিয়া অনেক এগিয়ে থাকা দল। অস্ট্রেলিয়া এমনকি এগিয়ে এই গ্রুপের অন্য দুই দল ফিলিস্তিন ও আমার দল লেবাননের চেয়েও। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিনই ছিল।’
কিংস অ্যারেনায় আগামীকালের লড়াইয়ে জুরসেভিচ এগিয়ে রাখলেন লেবাননকেই, ‘আমি মনে করি কাল লেবানন ফেবারিট। আমি মালদ্বীপের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ দেখেছি বাংলাদেশের। তারা নিজেদের মাঠে খেলবে। এই গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানের জন্যই লড়ব আমরা। আমি মনে করি দ্বিতীয় স্থানের জন্য লেবানন, বাংলাদেশ, ফিলিস্তিন—তিনটি দলই খেলবে। এ ম্যাচটা খুব সহজ হবে না আমাদের জন্য।’