নাটকীয়তা—অলিম্পিকে আর্জেন্টিনা–মরক্কোর ম্যাচটাকে বোঝাতে এর চেয়ে উপযুক্ত শব্দ বোধহয় আর হয় না। সেঁত এতিয়েনে আজ ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে মরক্কোর বিপক্ষে ২–১ গোলে পিছিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। দলটির সমর্থকেরাও হয়তো তখন হার দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখনই চমক হয়ে আসে যোগ করা সময়ের ১৫ মিনিট।
হ্যাঁ, বিস্ময়কর মনে হলেও এই ম্যাচে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয় ১৫ মিনিট। এই সময়ও গোলের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। গোলটি তারা পেয়েছে আরও বাড়তি সময়ে, ১৬তম মিনিটে গিয়ে! এই গোলের পর সবাই ধরে নিয়েছিল ম্যাচটা ২–২ গোলে ড্র হয়েছে।
আর্জেন্টিনার গোলের পরই মরক্কোর সমর্থকেরা মাঠে বোতল ছুড়ে মারতে শুরু করেন। এরপর দর্শক মাঠে ঢুকে পড়ায় তখনই স্থগিত করা হয় ম্যাচটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ম্যাচ স্থগিত হয়ে যাওয়ার প্রায় দুই ঘন্টা পর খেলোয়াড়েরা আবার মাঠে ফেরেন। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটি ভিএআর অফসাইডের কারণে বাতিল করে। খেলোয়াড়েরা ফাঁকা মাঠেই কিছুক্ষণ অনুশীলন করার পর আবার খেলা শুরু হয় এবং আরও ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ড খেলা চলে। কিন্তু ম্যাচে আর ফেরা হয়নি আর্জেন্টিনার। ২–১ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়।
অলিম্পিকে সাধারণত অনূর্ধ্ব–২৩ দল খেললেও কোচ চাইলে এর চেয়ে বেশি বয়সী তিনজনকে দলে রাখতে পারেন। আর্জেন্টিনা দলে তিন সিনিয়রের প্রত্যেককেই আজ সুযোগ দিয়েছেন কোচ হাভিয়ের মাচেরানো। কিন্তু নিকোলাস ওতামেন্দি, হুলিয়ান আলভারেজ ও হেরোনিমো রুয়ি মাঠে নেমেও জেতাতে পারেননি দলকে। প্রথম ম্যাচে কোনোরকমে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে।
ম্যাচের শুরুতেই আলভারেজের হাতে বল লাগায় পেনাল্টির দাবি জানিয়েছিল মরক্কো। কিন্তু ভিএআর যাচাইয়ের পর সিদ্ধান্ত যায় আর্জেন্টিনার পক্ষে। এদিন ম্যাচের শুরু থেকে দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয়। প্রথম দিকে অবশ্য আর্জেন্টিনার চেয়ে মরক্কো বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। তবে ম্যাচের ১২ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক আদায় করে নেয় আর্জেন্টিনা। সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মাচেরানোর দল।
১৬ মিনিটে প্রথমবারের মতো আক্রমণে দেখা যায় আলভারেজকে। তবে সুযোগ তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত সেটি কাজে লাগাতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড। দুই দল শুরুটা ভালো করলেও পথ হারাতে সময় লাগেনি। দুই দলেই সমন্বয়ের অভাব ছিল স্পষ্ট। এর মধ্যে ২৭ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছিল ওতামেন্দির সামনে। সুযোগ হাতছাড়া করেন এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। আক্রমণ–প্রতি আক্রমণে জমে ওঠা লড়াইয়ে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে এগিয়ে যায় মরক্কো।
সম্মিলিত আক্রমণে দারুণ এক ব্যাকহিলে ইলিয়াস আখোমাচ খুঁজে নেন এল খানোসকে। বল পেয়ে এই মিডফিল্ডার বাইলাইন থেকে নিচু ক্রস বাড়ান সুফিয়ান রাহিমির উদ্দেশে। কাছাকাছি জায়গা থেকে লক্ষ্যভেদ করে দলকে এগিয়ে দেন রাহিমি। এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় মরক্কো।
বিরতির পরপরই ব্যবধান ২–০ করে মরক্কো। ৪৯ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া আখোমাচকে ফাউল করেন আর্জেন্টাইন লেফট–ব্যাক হুলিও সোলের। স্পট কিকে গোল করে মরক্কোর হয়ে ব্যবধান ২–০ করেন রাহিমি। দুই গোলে পিছিয়ে পড়লেও ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ছিল আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে তৃতীয় গোল আদায় করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কোণঠাসা করে দেওয়ার চেষ্টা করে মরক্কো।
৬২ মিনিটে হ্যাটট্রিকের সুযোগও আসে রাহিমির সামনে। তবে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। মরক্কো তৃতীয় গোল না পেলেও ৬৭ মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচে ফেরে আর্জেন্টিনা। ব্যবধান ২–১ করেন গুলিয়ানো সিমিওনে। ব্যবধান কমানোর পর আর্জেন্টিনার চোখ ছিল সমতায়। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও পিছিয়ে থেকে শেষ করে তারা। এরপর যোগ করা ১৫ মিনিটেও আর্জেন্টিনা যখন হার দেখছিল, তখনই গোল করেন নিকোলাস মেদিনা। কিন্তু এই গোলও বাতিল হলে জিতে যায় মরক্কো।