মেয়েদের ফুটবল লিগের দলবদল দরজা বন্ধ হতে চলেছে, অথচ সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দাদের মতো শীর্ষ নারী ফুটবলাররা শেষের আগের দিন পর্যন্ত কোনো দলে সই করেননি—ব্যাপারটা নিয়ে একধরনের অস্বস্তি ছিল। আজ দলবদলের শেষ দিন বেলা তিনটা পর্যন্ত সেটা থাকলও। তবে বিকেলে বড় চমক নিয়ে হাজির নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি। সাবিনা, সানজিদাসহ জাতীয় দলের ১৪ জন ফুটবলারকে সই করিয়েছে এই ক্লাব।
দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চমকের বিপরীতে বেশ কিছু প্রশ্নেরও সম্মুখীন হয়েছে নাসরিন একাডেমি। সর্বশেষ লিগে দ্বিতীয় হওয়া এই দল জাতীয় দলের এতজন ফুটবলারকে কীভাবে নিতে পেরেছে, প্রশ্ন সেটি নিয়েই। জাতীয় দলের এত ফুটবলারকে দলে নিতে যে বাজেট বা আর্থিক ভিত্তি প্রয়োজন, সেটি কী এই ক্লাবের আছে? নাকি নামমাত্র মূল্যে ফুটবলারদের খেলতে হচ্ছে এই ক্লাবে।
ক্লাবটি যাঁর নামে, সেই নাসরিন আক্তারের কথা, ‘আন্তরিকতা থাকলে সব হয়। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। মেয়েদেরও ইচ্ছা ছিল। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এটি সম্ভব হয়েছে।’
নাসরিন আক্তার দেশের ক্রীড়াঙ্গনে খুব অপরিচিত কেউ নন। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ফুটবল ছাড়াও হ্যান্ডবলের সঙ্গেও জড়িত এই নাসরিন। তবে নিজের ক্লাবের আর্থিক ভিত্তি কিংবা সাবিনা, সানজিদা, মারিয়া, আনাই, সুমাইয়া, রুপনা, মাসুরাদের মতো জাতীয় দলের ফুটবলারদের নিতে গেলে যে বিপুল পরিমাণে আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন, সেটি নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির আছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে নাসরিন আক্তার যা বললেন, তাতে স্পষ্ট জবাব নেই, ‘আমাদের বেশ কিছু স্পনসর আছে। আরও কিছু টাকা জোগাড় করেছি, সব মিলিয়েই এই দল।’
ক্লাবটির ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আতাউর রহমান। তিনিও খোলাসা করেননি ক্লাবের বাজেট আর আর্থিক সক্ষমতার ব্যাপারে, ‘আমরা নিজেরাই টাকা জোগাড় করেছি। এখানে অন্য কিছু খোঁজার নেই।’
আতাউর রহমান যে ‘অন্য কিছু’র সন্ধান করতে মানা করেছেন, সেটিই আসলে সন্দেহের মূল বিষয়। বসুন্ধরা কিংস নারী ফুটবল লীগ থেকে সরে গেছে; আবাহনী, মোহামেডানসহ দেশের অন্য শীর্ষ ক্লাবগুলোও লিগে নেই। যে কারণে জাতীয় দলের ফুটবলারদের খেলাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। নারী লিগে সাধারণত যে ক্লাবগুলো খেলে, তাদের আর্থিক সক্ষমতা এতটা নয় যে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের চাহিদা মিটিয়ে তারা দলে নিতে পারবে। সন্দেহ একটাই, বাফুফে নারী উইংস নাসরিন একাডেমিতে জাতীয় দলের এতজন ফুটবলারকে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে কি না!
সাবিনা খাতুন এসব সন্দেহ উড়িয়ে দিয়েছেন এভাবে—‘আমাদের সবাইকে এই দলে দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন। আপনাদের মনে নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। কিন্তু আমরা তো ফুটবলার। আমরা খেলতে চাই, সেটি পেশার টানেই হোক কিংবা ভালোবাসার টানেই হোক।’
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হওয়া মেয়েদের তিনটি ফুটবল লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। সাবিনা, সানজিদা, মাসুরারা কিংসে ভালো পারিশ্রমিকই পেয়েছেন। কিন্তু এবার নাসরিনে তাদের পারিশ্রমিক কেমন হবে? সাবিনা জানিয়েছেন, বসুন্ধরা কিংসের মতো না হলেও নাসরিনে তারা মোটামুটি কাছাকাছি অঙ্কের টাকাই পাবেন।
সাবিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবাহনী, মোহামেডানের মতো বড় ক্লাবগুলোর মেয়েদের ফুটবলে না আসা নিয়েও, ‘নাসরিন বা আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব যদি পারে, আবাহনী, মোহামেডান কেন দল গড়ে না? তারা কেন নারী ফুটবলে নেই? একজন পুরুষ ফুটবলারের পরিশ্রমিক দিয়ে মেয়েদের একটা দল গড়া যায়। তারপরও আবাহনী, মোহামেডান নেই। বসুন্ধরা কেন চলে গেল, তারাই ভালো বলতে পারবে।’
এবারের মেয়েদের লিগে ৯টি ক্লাব অংশগ্রহণ করছে। আর্মি স্পোর্টস ক্লাবের খেলার কথা ছিল না। আজ শেষদিনে তারা দলবদল করেছে। বাকি আট ক্লাবের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ক্লাব শুধু ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। দেশের ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দ্বিতীয় স্তরে রেলিগেশন এড়ানোর লড়াইয়ে থাকা ফরাশগঞ্জের নতুন চ্যালেঞ্জ নারী দল। ক্লাবটির কর্মকর্তা বাবুরাম বলেন, ‘আসলেই আমাদের জন্য কষ্টকর। এরপরও মেয়েদের ফুটবলের অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে আমরা দল গঠন করেছি।’