২০১৩ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেন পেপ গার্দিওলা। বায়ার্নে গার্দিওলার চাকরির স্থায়িত্ব ছিল ৩ বছর। ২০১৬ সালেই বায়ার্নকে ৭টি শিরোপা জিতিয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান এই স্প্যানিশ কোচ। সেখানে তিনি দায়িত্ব নেন ম্যানচেস্টার সিটির। গত প্রায় ৭ বছরে সিটিকে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতিয়েছেন এই কোচ। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে জিতেছেন ট্রেবলও। তবে দুর্দান্ত সব রেকর্ডের মালিক গার্দিওলা নাকি সিটিতে যাওয়ার আগে মাত্র তিন বছরে জার্মান ফুটবলের ভিত নাড়িয়ে দিয়ে গেছেন!
গার্দিওলার ওপর এমন গুরুতর অভিযোগের তির সাধারণ কেউ দাগেননি। জার্মানির ফুটবলের পতনের জন্য গার্দিওলাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন দেশটির কিংবদন্তি ফুটবলার বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার। জার্মানির ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম এ নায়ক বলেছেন, গার্দিওলার কৌশলের কারণেই মূলত স্বকীয়তা হারিয়ে ধুঁকছে জার্মানির ফুটবল।
কয়েক বছর ধরে জার্মানির ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য গার্দিওলাকে দায়ী করে সাবেক বায়ার্ন তারকা শোয়েনস্টেইগার বলেছেন, ‘যখন পেপ গার্দিওলা বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নিয়ে এ দেশে আসেন, তখন সবাই বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল। সবাই বুঝেছিল যে আমাদেরকেও এখন শর্ট পাস এবং তেমন (গার্দিওলার স্টাইলের) ফুটবল খেলতে হবে। এর ফলে ব্যাপারটা এমন হলো যে আমরা নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেললাম।’
একটা সময় জার্মান ফুটবল দলের লড়াকু মানসিকতা নিয়ে আলোচনা হতো সর্বত্র। ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকারের এক অমর উক্তি উচ্চারিত হতো সর্বত্র। লিনেকার একবার বলেছিলেন, ‘ফুটবল খুব সহজ খেলা। ২২ জন খেলোয়াড় ৯০ মিনিট ধরে বলের পেছনে দৌঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত জার্মানি জেতে।’
কিন্তু সেই জার্মানি যেন লম্বা সময় ধরে জিততেই ভুলে গেছে। ২০১৮ ও ২০২২—পরপর দুই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সর্বশেষ ১৫ ম্যাচের মাত্র ৩টিতে জিতেছে তারা। আর কাতার বিশ্বকাপের পর খেলা ৫ ম্যাচের মাত্র ১টিতে জিতেছে ইউরোপের অন্যতম সফল দলটি। সেটিও আবার অপেক্ষাকৃত খর্ব শক্তির দল পেরুর বিপক্ষে।
লড়াকু জার্মানির এমন পতনের কারণ ব্যাখ্যায় শোয়েইনস্টেইগার বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, বেশির ভাগ দেশ জার্মানিকে দেখে লড়াকু হিসেবে। আমরা শেষ পর্যন্ত এবং সবকিছুর জন্য লড়াই করতে পারি। কিন্তু গত সাত–আট বছরে আমরা নিজেদের সেই শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আমরা সব ভুলে গেছি।'
শোয়েনস্টেইগারের এমন অভিযোগের জবাবে গার্দিওলা–ভক্তরা অবশ্য চাইলে পাল্টা যুক্তিও দিতে পারেন। ২০১৪ সালে জার্মানি যখন বিশ্বকাপ জেতে, তখন কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের কোচ ছিলেন গার্দিওলাই। আর জার্মানি ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার দুই বছর আগেই বায়ার্নকে বিদায় জানান গার্দিওলা।
সাবেক বার্সেলোনা কোচ বিদায়ের পর পেরিয়ে গেছে আরও ৬ বছর। কেউ চাইলে তাই প্রশ্ন তুলে বলতেই পারেন যে এত লম্বা সময় পেয়েও কেন নিজেদের ফুটবলকে সঠিক পথে আনতে পারছে না জার্মানি। সমস্যা কি তবে অন্য কোথাও।
এর মধ্যে অনেক ফুটবল–বিশ্লেষক অবশ্য জার্মানির এমন হতশ্রী দশার জন্য দায়ী করছে সাফল্য–ক্ষুধার অভাব এবং মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের উঠে না আসাকে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্বপালনের পর ইওয়াখিম লোর সরে দাঁড়ানোও বিশেষ প্রভাব রেখেছে।
তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে এখনো জার্মান দলে নিজের দর্শনের রূপান্তর ঘটাতে পারেননি হ্যান্সি ফ্লিক। দলকে একাধিক ফরমেশনে খেলিয়েও সফলতা পাননি। এমনকি সাম্প্রতিক ব্যর্থতার দায়ে তাঁর দায়িত্ব হারানোর কথাও শোনা যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে ফ্লিকের হাতে সময় খুবই কম। দ্রুত দলকে গুছিয়ে নিয়ে জয়ের ধারায় ফিরতে হবে তাঁকে। নয়তো সামনে পড়তে হতে পারে আরও বড় বিপদে।