লেবাননের কাছে উড়ে গেছে বাংলাদেশ
লেবাননের কাছে উড়ে গেছে বাংলাদেশ

বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব

জয়ের আশায় নেমে লেবাননের কাছে ৪ গোল খেল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ০ : ৪ লেবানন

ঢাকায় দুই দলের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। শেষ দিকে দারুণ গোল করে বাংলাদেশকে ১ পয়েন্ট এনে দেন শেখ মোরছালিন। ২০২৬  বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৬ ম্যাচ শেষে ওই এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশকে। দোহায় খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচে লেবানন অধিনায়ক হাসান মাসতুকের হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ উড়ে গেছে  ৪-০ গোলে। দুটি গোল হয়েছে প্রথমার্ধে। অথচ লেবাননের বিপক্ষে কি না জয় চেয়েছিলেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও কোচ হাভিয়ের কাবরেরা!

ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই হাসান মাসতুক পেনাল্টিতে সহজে পরাস্ত করেন বাংলাদেশ গোলকিপার মিতুল মারমাকে। গোল খেয়ে বাংলাদেশ উঠেছে আক্রমণে। ১৭ মিনিটে ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন দারুণ এক শট নেন লেবানন পোস্টে; কিন্তু কোনোক্রমে সেটি আটকেছেন লেবানন গোলকিপার মোস্তফা মাতার।

এর পরও আরও কয়েকবার বিপজ্জনকভাবে ঢুকেছিলেন রাকিব। দ্বিতীয়ার্ধেও একবার গোলের প্রায় কাছে চলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ‘নাম্বার টেন’; কিন্তু গোল করা দূর কল্পনা, লেবাননের কাছে খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবে উড়ে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে লেবানন কেন ৬৪ ধাপ এগিয়ে, তা বোধ হয় ৪-০ স্কোরলাইনই বলে দিচ্ছে।

দুটি গোল হয়েছে প্রথমার্ধে

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডার শাকিল ও তপুর ফাঁক গলে নাদের মাতার সহজে প্লেসিং করেন ( ২-০)।  ৪৯ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের আরেকটি দুর্বলতায় হাসান মাসতুক সহজে গড়ানো শটে ৩-০ করেন। লেবাননের হয়ে এটি ছিল তাঁর বিদায়ী ম্যাচ। পরপরই নিজের বিদায়ী ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন লেবাননের ‘নাম্বার সেভেন’। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ দিনের বেদনা তিনি ভুলেছেন হ্যাটট্রিকের আনন্দে।

এই পরাজয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপে চার দলের ‘আই’ গ্রুপে বাংলাদেশ ৬ ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে থাকল। ৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় লেবানন। তৃতীয় ও চতুর্থ দল আগামী বছর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরে মধ্যে অনুষ্ঠেয় ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব খেলতে পারবে। বাংলাদেশের গ্রুপের শীর্ষ দুই দল অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিস্তিন উঠে গেছে বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডে।

শেষ ম্যাচে একাদশে দুটি বদল নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। ৬ জুন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে কোচ একাদশে রাখেননি অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে। সোহেল রানা জুনিয়রের জায়গায় তাঁকে আনেন কোচ। রক্ষণে মেহেদি মিঠুর জায়গায় শাকিল।  ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ৫ ডিফেন্ডার নিয়ে নেমেছিল; কিন্তু শেষ রক্ষা হলো কই!  

দুই দলই এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একটি করে গোল করেছিল। তবে লেবানন একটা জায়গায় এগিয়ে ছিল, তারা তিন তিনটি ড্র করেছে। বাংলাদেশ করেছে একটি। শেষ ম্যাচে তো বড় জয়ই পেয়েছে। আর বাংলাদেশকে খানিকটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

লেবাননের সঙ্গে বাংলাদেশ এই এক বছরের মধ্যে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে। গত বছর বেঙ্গালুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হার ২-০ গোলে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম পর্বে ঢাকায় ১-১ ড্রটা প্রশংসা পেয়েছে সবার। কিছুটা চেনা প্রতিপক্ষ লেবাননকে নিয়ে কাবরেরা ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন কোচের অধীন ওরা আমাদের সঙ্গে খেলেছে। আগের চেয়ে এখন তার ভিন্ন একটি দল; যারা সাফের চেয়ে আরও বেশি আক্রমণাত্মক, আরও বেশি শারীরিক শক্তিনির্ভর। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যনির্ভর খেলোয়াড় তো আছেই। তবে আমি মনে করি, আমাদের যে ম্যাচ পরিকল্পনা আছে, লেবাননের কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে খেলার মতো।’

কিন্তু তাঁর কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসেনি। একেক ম্যাচে একেক রক্ষণ লাইন নামিয়ে হজম করেছেন একের পর এক গোল। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-০, ফিলিস্তিনের কাছে ৫-০ এরপর আজ ৪-০। ৬ ম্যাচের প্রতিটিতেই গোল খেয়েছে। দেশের খেলোয়াড়দের বাজার চড়ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের  যার কোনো প্রতিফলনই দেখা গেল না জামাল ভূঁইয়াদের পায়ে।  

বাংলাদেশ একাদশ: মিতুল, তপু, তারিক, শাকিল, সাদ উদ্দিন, ইসা ফয়সাল, সোহেল রানা, জামাল, মোহাম্মদ হৃদয় , শেখ মোরছালিন, রাকিব হোসেন।