এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ও দমিনিক লিভাকোভিচ। আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়ার দুই অতন্দ্র প্রহরী
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ও দমিনিক লিভাকোভিচ। আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়ার দুই অতন্দ্র প্রহরী

মার্তিনেজ–লিভাকোভিচের লড়াইটা কে জিতবেন

একটি শট মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে দিতে পারে কোনো দলের স্বপ্ন। সেই শটই আবার কাউকে দেখায় খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা। বলা হচ্ছে টাইব্রেকারে পেনাল্টি শুটআউটের কথা। যেখানে স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মাঝে বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন একজন মানুষ—গোলরক্ষক। প্রতিপক্ষ দল যখন তাঁর হার কামনা করে ‘অভিসম্পাত’ দিতে থাকে, তখন নিজ দল অপেক্ষায় থাকে তাঁকে দুই হাত বাড়িয়ে বরণ করে নিতে।

সেই শুটআউটে যে গোলরক্ষক সফল হন, মুহূর্তের মধ্যে তিনি হয়ে যান নায়ক। পরশু রাতের তেমন দুই নায়ক আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো ‘দিবু’ মার্তিনেজ ও ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচ। পেনাল্টি শুটআউটে যাঁরা বাঁচিয়েছেন নিজ নিজ দেশের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নও।

লুসাইল স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে লাওতারো মার্তিনেজ নিজেদের শেষ পেনাল্টিটি জালে জড়িয়ে ছুটে গেলেন বাঁ পাশের কর্নার ফ্ল্যাগের কাছাকাছি জায়গায়। তাঁকে অনুসরণ করে একজন ছাড়া বাকি সব সতীর্থও ছুটে গেলেন সেদিকেই। ডান পাশে তখন আনন্দে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলেন মার্তিনেজ। যে খেলোয়াড় তাঁর দিকে ছুটে গিয়েছিলেন, তাঁর নাম লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক জানতেন, এই ম্যাচের আসল নায়ক কে? তাই প্রিয় ‘দিবু’র কাছে সবার আগে গেলেন মেসি। সেই মানুষটির সঙ্গে উদ্‌যাপন করলেন, যিনি ‘এলএম-১০’-এর জন্য জীবন দিতে রাজি বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

পেনাল্টি শট ঠেকাচ্ছেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ

আক্ষরিক অর্থে না হলেও প্রতীকী অর্থে ঠিকই নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন মার্তিনেজ। পেনাল্টি শটের শুরুতে ডাচ অধিনায়ক ফন ডাইকের শট ঠেকালেন শরীর শূন্যে ভাসিয়ে। এরপর স্টিভেন বের্গহুইসের নেওয়া দ্বিতীয় পেনাল্টিটি ঠেকিয়ে নিজেদের আত্মিবশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি ভেঙে দেন ডাচদের মনোবল। যেখান থেকে শেষ পর্যন্ত আর ফিরতে পারেনি কমলা জার্সির দলটি। চিরায়ত দুঃখের রং কমলার আক্ষেপটা অন্তত আরও চার বছরের জন্য দীর্ঘায়িত করেন এই গোলরক্ষকই।

প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা এই মার্তিনেজ ম্যাচ শেষে ভাসলেন আবেগে। ভেজা চোখে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বললেন, ‘সবার আগে বাঁধভাঙা আবেগে ভেসে গেছি। এটা দেশের সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য। আর্থিকভাবে দেশ খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। এর মধ্যে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারার চেয়ে সন্তষ্টির আর কিছু হয় না।’

মার্তিনেজের নায়ক হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রূপকথার আরেক গল্প লিখেছেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। ২৭ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক অবশ্য শুধু পেনাল্টিতেই নয়, ম্যাচজুড়ে অবিশ্বাস্য সব সেভ করে গেছেন। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিলের সামনে ১২০ মিনিট ধরে প্রাণপণ লড়ে গেছেন। ম্যাচে গোল বাঁচিয়েছেন ১১টি। ২০১৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র-বেলজিয়াম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপার টিম হাওয়ার্ডের ১৫ সেভের পর এটি বিশ্বকাপের এক ম্যাচে কোনো গোলকিপারের সর্বোচ্চ সেভের রেকর্ড।

ব্রাজিলের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন লিভাকোভিচ

এ ছাড়া পরশু রাতে আরও একটি রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন দিনামো জাগরেবের এই গোলরক্ষক। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনার সের্হিও গয়কোচিয়া এবং ২০১৮ সালে স্বদেশি দানিয়েল সুবাসিচের পর এক বিশ্বকাপে ৪টি পেনাল্টি শট ঠেকানোর কীর্তি স্পর্শ করেছেন লিভাকোভিচ। রদ্রিগোর পেনাল্টি ঠেকানো লিভাকোভিচ এর আগে জাপানের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে পেনাল্টিতে গোল বাঁচান ৩টি। তাঁর ওপর আস্থা ছিল কোচ জ্লাতকো দালিচেরও, ‘আমি জানতাম, সে এটা করে দেখাবে।’

মার্তিনেজ ও লিভাকোভিচের করে দেখানোর চ্যালেঞ্জটা অবশ্য এখানেই শেষ হচ্ছে না। আরও দুবার তাঁদের স্বর্গীয় রাত দেখার অপেক্ষায় থাকবেন সমর্থকেরাও। তবে সেমিফাইনালে পরের লড়াইয়ে তাঁরা মুখোমুখি হবেন একে অন্যের।

সেখানে একজনকে থামতেই হবে।