বার্সেলোনা ও এসি মিলানের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে হেরে হতাশার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিলিয়ান এমবাপ্পের ছন্দহীনতা ও কোচ কার্লো আনচেলত্তির কৌশলে শোনা যাচ্ছিল নানান কথা। এমনকি ব্যর্থতার দায়ে আনচেলত্তির পদ হারানোর গুঞ্জনও ছিল বাতাসে। সব সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য রিয়ালের হাতে মোক্ষম উপায় ছিল একটি, মাঠে দারুণভাবে ফিরে আসা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ফিরে আসার সেই গল্পটাই লিখলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। মাত্র ৪১ পয়েন্টে রদ্রির কাছে ব্যালন ডি’অর হারানো ভিনি আজ ওসাসুনার বিপক্ষে করেছেন দারুণ এক হ্যাটট্রিক। ভিনির হ্যাটট্রিকের সঙ্গে এই ম্যাচ দিয়ে ১৭৯ দিন পর গোলে ফিরেছেন জুড বেলিংহামও।
ম্যাচটা রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছেও ৪–০ গোলে। এই জয়ে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধানও কমাল রিয়াল। দুইয়ে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ২৭, সমান ম্যাচে বার্সার পয়েন্ট ৩৩।
বার্নাব্যুতে আজ ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিল রিয়াল। দুই প্রান্তকে দারুণভাবে ব্যবহার করে একের পর আক্রমণে যেতে থাকে তারা। অ্যাটাকিং থার্ডে প্রথম মিনিট থেকেই ভিনিসিয়ুস–রদ্রিগো–এমবাপ্পে–বেলিংহামরা ছিলেন সপ্রতিভ। সাম্প্রতিক সমালোচনার জবাব দিতেই হয়তো এমন আক্রমণাত্মক রূপে মাঠে নামেন রিয়াল তারকারা।
এর মধ্যে ম্যাচের ১৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট নেন রদ্রিগো। তবে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের শট অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান ওসাসুনা গোলরক্ষক সের্হিও হেরেরা।
ইতিবাচক শুরু করা রিয়াল ধাক্কা খায় ম্যাচের ২০ মিনিটে। সদ্য চোট কাটিয়ে ফেরা রদ্রিগো আবারও চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন। এই ধাক্কা কাটানোর আগেই আসে দ্বিতীয় ধাক্কা। ৩০ মিনিটে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন আরেক ব্রাজিলিয়ান এদের মিলিতাও। তাঁর পরিবর্তে মাঠে নামেন অভিষিক্ত রাউল আসেনসিও।
মূল একাদশের দুজনকে হারিয়েও অবশ্য দমে যায়নি রিয়াল। গতি ও আগ্রাসনে প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে গোল আদায়ের চেষ্টা করে তারা। ভালো খেললেও রিয়ালের সমস্যা হচ্ছিল ফিনিশিংয়ে। অবশেষে ৩৪ মিনিটে গিয়ে ডেডলক ভাঙেন ভিনি। বেলিংহামের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে ক্লাসিক ভিনিসিয়ুস–শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। আক্রমণের ধারায় ৪২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বেলিংহাম।
এই গোলে ৫০ মিটার দূর থেকে দুর্দান্ত এক লং শটে বেলিংহামকে সহায়তা করেন অভিষিক্ত তরুণ আসেনসিও। ইংলিশ মিডফিল্ডারের ফিনিশিংও অবশ্য দারুণ ছিল। পায়ের আলতো ছোঁয়ায় গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি চলতি মৌসুমে বেলিংহামের প্রথম গোল।
বিরতির পরও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে রিয়াল। প্রতিপক্ষের বক্সের আশাপাশে একের পর এক হুমকি তৈরি করতে থাকে তারা। একপর্যায়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ধরাশায়ী করে বক্সে ঢোকার আগ মুহূর্তে ফাউলের শিকার হন এমবাপ্পে। তবে কাছাকাছি জায়গা থেকে পাওয়া ফ্রি-কিকটি কাজে লাগাতে পারেননি এই ফরাসি তারকা। এমবাপ্পে এদিন ভালো খেললেও বারবার গোল মুখে খেই হারিয়েছেন। শেষ শট পরিণতি না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।
এমবাপ্পে না পারলেও ৬১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল ঠিকই আদায় করে নিয়েছেন ভিনিসিয়ুস। প্রতি–আক্রমণে গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিনের কাছ থেকে বল পেয়ে ওসাসুনার গোলরক্ষককেও কাটিয়ে বল জালে জড়ান ভিনি। তাঁর এই গোল মনে করিয়ে দিয়েছে সেরা সময়ের রোনালদো নাজারিওকে। পাশপাশি ১৯৯৩ সালের ৫ ডিসেম্বরের পর এই প্রথম গোলরক্ষকের অ্যাসিস্টে গোল পেল রিয়াল।
৬৫ মিনিটে ঠিকঠাক শট নিতে না পারায় পাওয়া হয়নি ভিনির তৃতীয় গোলটা। তবে ৬৯ মিনিটে আর ভুল করেননি ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। ব্রাহিম দিয়াজের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে গোল করে পূর্ণ করেন হ্যাটট্রিক। আরও একবার উচ্ছ্বাসে মাতে বার্নাব্যু।