লুক্সেমবার্গে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত
লুক্সেমবার্গে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত

সুপার লিগ নিষিদ্ধ করা ‘বেআইনি’—ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালতে রায়

বিদ্রোহী টুর্নামেন্ট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ইউরোপিয়ান সুপার লিগ আয়োজনে বাধা দিতে উয়েফা ও ফিফা যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আইন ভঙ্গ করেছে বলে রায় দিয়েছেন ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালত। ন্যায়বিচার আদালত আজ এ রায় দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

যুগান্তকারী এ রায় ঘোষণার সময় বলা হয়েছে, ‘যেকোনো আন্তঃক্লাব ফুটবল প্রকল্প, যেমন—সুপার লিগ অনুমতি সাপেক্ষে এগিয়ে যেতে পারে। ফিফা ও উয়েফা সেই প্রতিযোগিতায় কোনো ক্লাব ও খেলোয়াড় অংশ নিলে নিষিদ্ধের যে নিয়ম তৈরি করেছে, তা বেআইনি। এর মাধ্যমে ফুটবলের বাজারে প্রভাবশালী অবস্থানের অপব্যবহার করা হয়েছে।’ তবে আদালত এও জানিয়েছেন, এই রায়ের অর্থ এই নয় যে, সুপার লিগ প্রকল্প এখন চাইলেই এগিয়ে নেওয়া যাবে।

যদিও রায়ের পর সুপার লিগ প্রকল্পের প্রচারকারী কোম্পানি এ২২ স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছে। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বার্নড রাইখার্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, ‘এ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা জিতেছি। আমাদের অধিকার আদায় করতে পেরেছি। উয়েফার একচেটিয়া আধিপত্য শেষ। ফুটবল এখন স্বাধীন।’

২০২১ সালের এপ্রিলে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের বিকল্প হিসেবে ইউরোপের কুলীন ১২টি ক্লাব মিলে বিতর্কিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। উয়েফা, ফিফা ও ক্লাব সমর্থকদের বিরোধিতার মুখে সেই পরিকল্পনা থেকে ৯টি ক্লাব সরে যায়। যদিও গোপনে তারাও সুপার লিগের পরিকল্পনায় আছে বলে খবর বেরিয়েছিল। তবে নানা চড়াই-উতরাইয়ের পরও বিদ্রোহী লিগটি আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলে তিন মূল হোতা—রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস

আজ রায়ের পর নিজেদের ওয়েবসাইটে আলাদা বিবৃতি দিয়েছেন রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ও বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা। পেরেজ বলেছেন, ‘আদালতের আজকের সিদ্ধান্তটি ঐতিহাসিক ও বিশাল তাৎপর্যপূর্ণ। এ রায়ের দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রথমত, ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবল আর একচেটিয়া থাকবে না। এবং দ্বিতীয়ত, সব ক্লাবই এখন থেকে নিজেদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’ লাপোর্তা তাঁর সন্তুষ্টির বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘বার্সেলোনা মনে করে এই রায়ের মাধ্যমে ফুটবল বিশ্বে একচেটিয়া ক্ষমতা নিরোধ করে ইউরোপে একটি নতুন অভিজাত প্রতিযোগিতার পথ প্রশস্ত হয়েছে।’

আদালতের রায়ের পর নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ (ডানে) ও বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা

এদিকে, উয়েফা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আদালতের রায় তাদের বিরুদ্ধে গেলেও সেটা সুপার লিগ আয়োজনের অনুমোদন বা বৈধতা দেয় না। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন মেনেই সবকিছু করেছে। নতুন নিয়মকেও স্বাগত জানিয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে উয়েফা ও ফিফার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় এ২২ স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু উয়েফা ও ফিফা ভেবে এসেছিল, আদালতের রায় তাদের পক্ষেই যাবে। কারণ, সে সময় ন্যায়বিচার আদালতের প্রধান আইনজীবী আথানানিওস রান্তোস উয়েফা ও ফিফাকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ফুটবলের সংস্থা দুটির নিয়ম ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উয়েফা ও ফিফা পাশে পায় ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) ও ব্রিটিশ সরকারকেও। সুপার লিগ যাতে কোনোভাবেই আলোর মুখ দেখতে না পারে, সে লক্ষ্যে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় ঋষি সুনাকের ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালতের রায় শেষ পর্যন্ত সুপার লিগের পক্ষেই গেল।