বার্সেলোনার উইঙ্গার লামিনে ইয়ামাল (বাঁয়ে) ও পোর্তোর ডিফেন্ডার পেপে
বার্সেলোনার উইঙ্গার লামিনে ইয়ামাল (বাঁয়ে) ও পোর্তোর ডিফেন্ডার পেপে

একই রাতে যে কীর্তিতে জড়িয়ে গেলেন ইয়ামাল ও পেপে

২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক হয় পেপের। লামিনে ইয়ামালের তখন জন্মই হয়নি। ইয়ামাল জন্মেছেন পেপের চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকের আরও প্রায় ৩ বছর পর, ২০০৭ সালের জুলাইয়ে।

স্বাভাবিকভাবেই পেপে এখন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে আর ইয়ামালের অমিত সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার সবে শুরু হয়েছে। দুই প্রজন্মের দুজনকে নিয়ে হঠাৎ আলোচনার কারণও বয়সের ব্যবধান।

এফসি পোর্তোর পর্তুগিজ ডিফেন্ডার পেপের বয়স আজ ৪০ বছর ৩৬১ দিন, বার্সেলোনার স্প্যানিশ উইঙ্গার ইয়ামালের বয়স ১৬ বছর ২২৪ দিন। সে হিসেবে দুজনের বয়সের ব্যবধান ২৪ বছর ১৩৭ দিন!

এ ব্যবধানই ইয়ামাল ও পেপেকে একই সঙ্গে অনন্য করে তুলেছে। তাঁরা দুজন এখন চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে খেলা সর্বকনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ আউটফিল্ড (গোলকিপারের বাইরে) ফুটবলার।

কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো পর্বের প্রথম লেগে নাপোলির বিপক্ষে খেলেছে ইয়ামালের বার্সা। একই রাতে আর্সেনালের মুখোমুখি হয়েছে পেপের পোর্তো। কাল ইয়ামাল ১৬ বছর ২২৩ দিন বয়সে খেলতে নেমে আসরের নকআউট পর্বে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার এবং পেপে ৪০ বছর ৩৬০ দিন বয়সে খেলতে নেমে সবচেয়ে বেশি বয়সী আউটফিল্ড ফুটবলারের কীর্তি গড়েছেন।

৪১তম জন্মদিনের চারদিন আগে পেপের এ কীর্তি আরও আনন্দঘন করে তুলেছেন গালেনো। গত রাতে গালেনোর শেষ মুহূর্তের গোলেই আর্সেনালকে হারিয়েছে পোর্তো। তবে ইয়ামাল পূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। বার্সা যে নাপোলির বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও ১–১ গোলে ড্র করেছে।

গত বছরের এপ্রিলে মাত্র ১৫ বছর ২৯০ দিন বয়সে বার্সার সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় অভিষেক হয় ইয়ামালের। তখন বোঝা গিয়েছিল, সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলারের আরও অনেক কীর্তিতে নাম উঠতে যাচ্ছে তাঁর। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে চারটি কীর্তি গড়া হয়েও গেছে—এ শতাব্দীতে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগার কোনো ম্যাচে শুরুর একাদশে থাকা, লা লিগা ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা, স্পেনের সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক এবং স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। এবার সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে খেলার রেকর্ডটাও হয়ে গেল এই সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের।

কাল নাপোলির বিপক্ষে ম্যাচে ইয়ামাল

ইয়ামালের সামনে আরেকটি অনন্য কীর্তি অপেক্ষা করছে। চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে যেকোনো ম্যাচে গোল পেলেই আসরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা বনে যাবেন ইয়ামাল। ভেঙে দেবেন বার্সা থেকে ধারে ব্রাইটনে খেলতে যাওয়া আনসু ফাতির রেকর্ড। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ফাতির গোলেই ইন্টার মিলানকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বার্সা। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৪০ দিন। বার্সা এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পারলেও ইয়ামালের বয়স ফাতির চেয়ে কমই থাকবে।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সর্বজয়ী পেপে গত বছরের অক্টোবরেই রয়্যাল অ্যান্টওয়ার্পের বিপক্ষে খেলতে নেমে চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে বয়স্ক আউটফিল্ড ফুটবলারের (৪০ বছর ২৪২ দিন) কীর্তি গড়েছিলেন। সেই অ্যান্টওয়ার্পের বিপক্ষেই নভেম্বরে ফিরতি লেগে গোল করে সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতাও হয়েছেন (৪০ বছর ২৫৪ দিন)। ভেঙে দিয়েছেন এএস রোমার কিংবদন্তি ফ্রান্সেসকো টট্টির রেকর্ড, যিনি ৩৮ বছর ৫৯ দিন বয়সে গোল করেছিলেন।

৪১ ছুঁই ছুঁই বয়সে খেলতে পারাটাই পেপের (বাঁয়ে) কাছে আনন্দের ব্যাপার

কাল পোর্তোর জয়ের পর পেপের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মনের কথাগুলো সবচেয়ে বেশি বয়সী আউটফিল্ড খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে নামার রাতেই বলেছিলেন, ‘রেকর্ড (সবচেয়ে বেশি বয়সী ফুটবলারের) গড়তে পেরেছি, শুধু এতেই আমি খুশি নই। আমার খুশি হওয়ার কারণ এই বয়সেও খেলতে পারা, দলের জন্য অবদান রাখতে পারা এবং তরুণ খেলোয়াড়দের বেড়ে উঠতে সহায়তা করা।’