দুই অ্যাসিস্টে জয়ের অন্যতম নায়ক গ্রিজমানকে নিয়ে এমবাপ্পের উদ্‌যাপন
দুই অ্যাসিস্টে জয়ের অন্যতম নায়ক গ্রিজমানকে নিয়ে এমবাপ্পের উদ্‌যাপন

ফ্রান্স ২: ১ ইংল্যান্ড

কেইনের পেনাল্টি মিস, ইংল্যান্ডকে বিদায় করে সেমিফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স

৮৫ মিনিটে হ্যারি কেইন পেনাল্টি নিতে এলেন। বলটা জালে জড়াতে পারলেই ম্যাচে সমতা ফিরবে। তবে ইংলিশ স্ট্রাইকার যে পেনাল্টিটি নিলেন, সেটি মনে করিয়ে দিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করা রবার্তো বাজ্জিওকে।

কেইন পেনাল্টিটা মিস করতেই দর্শক সারিতে থাকা এক শিশু দর্শক কান্না আটকাতে পারলেন না। হয়তো বুঝে গেলেন সর্বনাশ হয়ে গেছে। হ্যাঁ, কেইনের সেই এক ভুলেই ভেঙে গেছে ইংল্যান্ডের ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হেরে এখন ইংল্যান্ডকে ধরতে হবে ফিরতি বিমান।

ইংল্যান্ডের হতাশার বিপরীতে রোমাঞ্চকর লড়াই জিতে আরেকটি বিশ্বকাপ ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে এখন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। শেষ চারে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ইতিহাস গড়া মরক্কো।

দুর্দান্ত খেলা আঁতোয়ান গ্রিজমানের দারুণ দুটি অ্যাসিস্টে গোল করেন অরেলিঁয়ে চুয়ামেনি এবং অলিভিয়ের জিরু। কেন পেনাল্টি থেকে এক গোল শোধ করলেও, অন্য পেনাল্টিটি মিস করেছেন।

গোলের পর গ্রিজমানকে কোলে তুলে নিলেন জিরু

ম্যাচের শুরু থেকই আক্রমণাত্মক খেলে ফ্রান্স। এমবাপ্পে–গ্রিজমান–জিরুরা ইংল্যান্ডের রক্ষণে চাপ তৈরি করে। ফ্রান্সের ছন্দময় আক্রমণে কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে ইংলিশরা। ১১ মিনিটে অলিভিয়ের জিরুর হেড জমা পড়ে জর্দান পিকফোর্ডের গ্লাভসে। হাই প্রেসিংয়ের চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারছিল না ইংল্যান্ড।

চাপের মুখে ১৬ মিনিটে ঠিকই ভেঙে পড়ে ইংলিশ রক্ষণ। দারুণ এক সংঘবদ্ধ আক্রমণে আঁতোয়ান গ্রিজমানের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি–বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন চুয়ামেনি।

গোল খেয়ে যেন জেগে ওঠে ইংলিশরা। ফ্রি কিক থেকে ২০ মিনিটে লুক শর শট ঠেকান উগো লরিস। ২৩ মিনিটে ফের কেনকে গোল বঞ্চিত করেন ফরাসি গোলরক্ষক। ২৫ মিনিটে হ্যারি কেইন ডি–বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টি আবেদন করেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা।

তবে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির আবেদন বাতিল করেন রেফারি। ২৯ মিনিটে কেইনের বুলেট শট কোনোরকমে ঠেকান উগো লরিস। একটু পর কর্নারে জটলা থেকে ইংলিশদের গোল হতে হতেও হয়নি।

প্রথমবার পারলেও দ্বিতীয়বার আর বল জালে জড়াতে পারেননি কেইন

বেলিংহাম–সাকারা ডান দিক থেকে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তবে ফরাসি ডিফেন্স ভাঙার জন্য সেসব যথেষ্ট ছিল না। ফের নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ফ্রান্সও চেষ্টা করেছে আক্রমণে গিয়ে ব্যবধান বাড়ানোর। তবে তারাও ইংল্যান্ডের রক্ষণের আশপাশে এসে পথ হারাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

বিরতির পরপর ৪৭ মিনিটে জুট বেলিংহামের দারুণ এক ভলি আরও দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন লরিস। পরের মুহূর্তে জটলা থেকে সুযোগ তৈরি হলেও এবারও লরিস বাঁধা পেরোতে পারেনি ইংল্যান্ড। তবে ফরাসি ডিফেন্সে চাপ প্রয়োগ করে ঠিকই পেনাল্টি আদায় করে নেয় ইংলিশরা।

ডান প্রান্ত দিয়ে বারবার হুমকি তৈরি করা বুকায়ো সাকা ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় থ্রি লায়নসরা। হ্যারি কেন শট নেওয়ার আগে এমবাপ্পে গিয়ে কিছু বলেও এসেছিলেন। তবে কেইনের বুলেট শটটা সম্ভবত কোনো কিছুতেই থামানো সম্ভব ছিল না।

এই গোলে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ গোলে ওয়েইন রুনিকে ছুঁলেন কেন। দুজনের গোল এখন ৫৩। ৫৫ মিনিটে ফ্রান্সের আক্রমণ রুখে দেন পিকফোর্ড। এমবাপ্পে ও কাইল ওয়াকারের বহুল আলোচিত দ্বৈরথ দেখা গেল ৫৭ মিনিটে। তবে এমবাপ্পের সঙ্গে গতিতে পেরে ওঠলেন না ওয়াকার।

ফ্রান্সের উদ্‌যাপন

তবে শেষ পর্যন্ত পিএসজি তারকা আক্রমণ আলোর মুখ দেখেনি। ৭০ মিনিটে ম্যাগুয়ারের হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। একটু পর দারুণ এক আক্রমণে বল পোস্টের রাখতে ব্যর্থ হন সাকা। ৭৭ মিনিটে ফ্রান্সের দারুণ একটি আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। তবে ৭৮ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি। এবারও দৃশ্যপটে সেই গ্রিজমান। তাঁর দারুণ এক ক্রসে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন জিরু।

একটু পর আবার নাটক। ফের পেনাল্টি পেল ইংল্যান্ড। বদলি নামা ম্যাসন মাউন্টকে ফেলে দিয়ে ইংল্যান্ডকে এবার পেনাল্টি উপহার দিলেন থিও এরনান্দেজ। স্পট কিকে এবার আকাশের ঠিকানায় বল পাঠিয়ে সমতায় ফেরার সুযোগ নষ্ট করেন কেইন। সে সঙ্গে নিশ্চিত করেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ও। শেষ দিকে একের পর এক চেষ্টা করেও যে কোনো ফল আসেনি।