স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে মোহামেডান
স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে মোহামেডান

‘উজবেক-জাদু’তে মোহামেডান ফাইনালে

শক্তি-সামর্থ্যে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি থেকে অনেকটাই এগিয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং। স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের প্রথম সেমিফাইনালে ফেবারিট ছিল তারাই। কিন্তু রহমতগঞ্জ ছেড়ে কথা বলেনি, মোহামেডানের শক্তি-সামর্থ্যকে জানিয়ে যাচ্ছিল শক্ত চ্যালেঞ্জই। মোহামেডানের প্রাণভোমরা মালির স্ট্রাইকার সুলেমান দিয়াবাতে ছিলেন খানিকটা নিষ্প্রভ। কিন্তু সাদা-কালো শিবির রহমতগঞ্জকে শেষ পর্যন্ত হারিয়ে দিয়েছে ১-০ গোলে। রহমতগঞ্জের প্রতিরোধ মোহামেডান ভেঙেছে ‘উজবেক-জাদু’ ব্যবহার করেই। সেই ‘জাদু’ উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফরভ।

কোয়ার্টার ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীও এমন প্রতিরোধ গড়েছিল। ম্যাচটিকে তারা যখন অতিরিক্ত সময়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল, তখনই প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে করা মোজাফফরভের ফ্রি-কিকের গোলই জিতিয়েছিল মোহামেডানকে। আজও একই ব্যাপার। তবে আজ মোজাফফরভ মোহামেডানের ত্রাণকর্তা হয়েছেন ম্যাচের ৭২ মিনিটে। রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার মোহাম্মদ সাঈদী বক্সের ঠিক বাইরে আরিফ হোসেনকে অহেতুক এক ফাউল করে ফ্রি-কিক দেন মোহামেডানকে। সেটি থেকেই গোল করেন মোজাফফরভ। ফ্রি-কিকে রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়েরা যে মানবদেয়াল রচনা করেছিলেন, সেটি লাফিয়ে ওঠায় নিচে যে ফাঁকা তৈরি হয়েছিল, সেটিকেই কাজে লাগান উজবেকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক এই মিডফিল্ডার।

মোহামেডান উঠে গেল আরও একটি ফাইনালে

গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে শুক্রবারের দুপুরে এই সেমিফাইনাল অবশ্য তেমন আকর্ষণ জাগাতে পারেনি। প্রাধান্য ছিল মোহামেডানেরই। গোলের সুযোগও তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকটি। কিন্তু সুলেমান দিয়াবাতে কমপক্ষে তিনটি সুযোগ নষ্ট করেন। তিনবারই তিনি হেড পোস্টে রাখতে পারেননি। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ সুযোগটি ছিল ম্যাচের ৪০ মিনিটে। উইঙ্গার আরিফ হোসেনের দারুণ এক ক্রস থেকে দিয়াবাতে লাফিয়ে উঠে হেড করেছিলেন। কিন্তু বল পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে চলে যায়।

ম্যাচ–সেরা মোজাফফরভ

রহমতগঞ্জ প্রতি আক্রমণে উঠেছে মাঝেমধ্যেই। তাদের দুই বিদেশি দাওদা সিসে আর স্যামুয়েল কোনিকে কেন্দ্র করেই ছিল আক্রমণগুলো। তবে সেগুলো মোহামেডানের রক্ষণে বাধা পেয়েছে বারবার। নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার ইমানুয়েল টনি আর কামরুল ইসলাম সুরক্ষিত রেখেছিলেন মোহামেডানের রক্ষণকে। রহমতগঞ্জের প্রতিরোধ আর প্রতি আক্রমণের মুখে মোহামেডান নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছে। কখনো মাঝমাঠ দিয়ে, কখনো দুই উইং ব্যবহার করে। তবে মোহামেডান এই সময়টা হতাশ না হয়ে নিজেদের গুছিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে মোজাফফরভকে ভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে, অনেকটাই আক্রমণের মূল অনুষঙ্গ হিসেবে। শেষ পর্যন্ত ৭২ মিনিটে সেই মোজাফফরভেই মিলেছে স্বস্তি।

গোল করে অবশ্য রক্ষণে নামেনি মোহামেডান। আরও আক্রমণে উঠেছে। রহমতগঞ্জও মাঝেমধ্যে আক্রমণে উঠে বিপদ তৈরি করেছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে (যোগ করা সময়ে) মোহাম্মদ রকি রহমতগঞ্জের পক্ষে দারুণ একটা সুযোগই পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পারেননি।

গত মে মাসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। সাদা-কালো শিবিরের সামনে এখন আরও একটি শিরোপা জেতার হাতছানি। ১৮ তারিখের ফাইনালে মোহামেডানের প্রতিপক্ষ কারা সেটি ঠিক হবে আজই। বিকেলে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বসুন্ধরা কিংস আর আবাহনী লিমিটেড মুখোমুখি হবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে।