সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন শুনছেন লিওনেল মেসি
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন শুনছেন লিওনেল মেসি

তলানিতে থাকা ইন্টার মায়ামিকে কি মেসি প্লে–অফে নিতে পারবেন

ইন্টার মায়ামিতে এসে ক্লাবটিকে দুর্দান্ত এক স্বপ্নযাত্রা উপহার দিয়েছেন লিওনেল মেসি। ক্লাবটিকে প্রথম ট্রফি এনে দেওয়ার পাশাপাশি অন্য এক প্রতিযোগিতার ফাইনালে তুলেছেন। তবে মেসির পরবর্তী চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) দলকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনা। তবে কাজটা মেসির জন্য শুধু কঠিনই নয়, প্রায় ‘অসম্ভব’। মেসির জন্য এই কাজ কতটা কঠিন, তা মূল্যায়নের আগে এমএলএসের বর্তমান মৌসুমের নিয়ম দেখে নেওয়া যাক।

এমএলএসে লিগ পর্বে ২৯টি দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে খেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের ১৩টি ও কানাডার দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ১৫টি দল খেলছে ইস্টার্ন কনফারেন্সে। ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সে দল ১৪টি। দলগুলো ১৭টি হোম, ১৭টি অ্যাওয়েসহ মোট ৩৪টি করে ম্যাচ খেলবে।

ইস্টার্ন কনফারেন্সের দলগুলো নিজেদের মধ্যে দুবার করে ও অন্য কনফারেন্সের ছয়টি দলের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলবে। ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সেও দলগুলো নিজেদের মধ্যে দুবার করে তো খেলবেই, নিজ কনফারেন্সের দলের সঙ্গে একটি বা দুটি বাড়তি ম্যাচও খেলবে। আর অন্য কনফারেন্সের ৬টি বা ৭টি দলের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে। দুই কনফারেন্সের জন্য আলাদা পয়েন্ট টেবিল যেমন আছে, দুই কনফারেন্স মিলিয়েও একটি টেবিল আছে। যার যার অংশের প্রথম ৯টি করে দল উঠবে প্লে-অফ পর্বে। আর সম্মিলিত টেবিলের শীর্ষ দল পাবে সাপোর্টার্স শিল্ড।

এরই মধ্যে ইন্টার মায়ামিকে লিগস কাপের ট্রফির স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন মেসি

কনফারেন্সের যার যার অংশের অষ্টম ও নবম দল ওয়াইল্ড কার্ড ম্যাচ খেলবে। জয়ী দুই দল যার যার অংশের শীর্ষ সাত দলের সঙ্গে যোগ দেবে। দুই অংশেই আটটি করে দল প্লে-অফের প্রথম রাউন্ডে বেস্ট অব থ্রি নকআউট ম্যাচে অংশ নেবে। এরপর কনফারেন্স সেমিফাইনাল ও কনফারেন্স ফাইনাল শেষে দুই অংশ থেকে দুই দল এমএলএস কাপ ফাইনালে উঠবে। সেই ফাইনাল শেষেই নির্ধারিত হবে চ্যাম্পিয়ন।

এখন মেসির দল ইন্টার মায়ামি ইস্টার্ন অঞ্চলের তলানিতে আছে। ২২ ম্যাচ শেষে ৫ জয় ও ৩ ড্র নিয়ে তাদের পয়েন্ট ১৮। যেখানে বর্তমানে ৯ নম্বরে থাকা শিকাগোর পয়েন্ট ৩২। মেসির হাত ধরে মায়ামি নিজেদের শেষ ৮ ম্যাচের সব কটিতে জয় পেয়েছে। তবে সেগুলো ছিল কনক্যাকাফ লিগস কাপ ও ইউএস ওপেন কাপের ম্যাচ।

এর মধ্যে মায়ামি তিনটি ম্যাচ জিতেছে টাইব্রেকারে। অর্থাৎ লিগের খেলা হলে এই ম্যাচগুলো ড্র হিসেবে বিবেচিত হতো এবং তাদের পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হতো। মায়ামি যদি লিগেও এই ধারায় বাকি ১২ ম্যাচ খেলে, তাহলে তারা পেতে পারে সর্বোচ্চ ২৭ পয়েন্ট। সে ক্ষেত্রে ৩৪ ম্যাচ শেষে দলটির পয়েন্ট হবে ৪৫।

পয়েন্ট তালিকা অনুযায়ী এখন দলগুলোর যা অবস্থান, তাতে ৪৯ পয়েন্ট পেলে প্লে–অফ পর্ব নিশ্চিত বলে দেওয়া যায়। তার মানে, লিগস কাপ ও ইউএস ওপেন কাপের ধারা অনুযায়ী মেসিরা এমএলএসেও খেললে ৪ পয়েন্ট কম পড়ে যাবে। তবে মনে রাখা ভালো, গত মৌসুমে ৪৮ পয়েন্ট নিয়েই তালিকার ছয়ে জায়গা পেয়েছিল মায়ামি।

ইস্টার্ন কনফারেন্সের ওপরের দিকে থাকা কয়েকটি দল যদি সামনের ম্যাচগুলোয় খারাপ করে, তাহলে এবারও ৪৮ বা তার কম পয়েন্ট নিয়ে প্লে–অফে উঠে যেতে পারে মায়ামি। তবে দলটিকে ৪৯ পয়েন্ট তোলার কথা মাথায় নিয়েই নামতে হবে। সেটা করতে হলে মেসির দলকে এমএলএসের পরবর্তী ১২ ম্যাচ থেকে কমপক্ষে ৩১ পয়েন্ট পেতে হবে। অর্থাৎ অন্তত ১০টি ম্যাচ জিততে হবে। সেটি যদি তারা করতে পারে, তাহলে তা ঐতিহাসিক কিছুই হয়ে থাকবে। নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করতে পারলে অন্য দলগুলোর ম্যাচের ফলের দিকে মেসিদের তাকিয়ে থাকতে হবে না।

মেসি জাদুতে উড়ছে ইন্টার মায়ামি

ইন্টার মায়ামির ১২ ম্যাচের ৬টিই বর্তমানে প্লে–অফের দৌড়ে থাকা দলের বিপক্ষে। যেখানে সিনসিনাটি, লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি এবং ন্যাশভিলের মতো দলও আছে। আগের লড়াইগুলোয় সিনসিনাটি ও ন্যাশভিলকে ইন্টার মায়ামি ৯০ মিনিটের মধ্যে হারাতে পারেনি। জিততে হয়েছে টাইব্রেকারে গিয়ে। লিগে যদি ৯০ মিনিটের মধ্যে হারানো না যায়, তাহলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এ ধরনের ফল প্লে–অফের লড়াই থেকে ছিটকে দিতে পারে মায়ামিকে। এ ছাড়া নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অরল্যান্ডো সিটির বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে আগাম বলার সুযোগ নেই। উত্তাপের এই ম্যাচে ঘটতে পারে যেকোনো কিছু।

এত সমীকরণের সঙ্গে আছে মেসির বিশ্রাম প্রসঙ্গও। টানা ম্যাচের মধ্যে থাকা মেসিকে বিশ্রাম দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। মেসির যে বিশ্রাম প্রয়োজন, তা জানিয়েছেন মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনোও।

মেসি যদি সত্যিই বিশ্রামে যান, তাঁকে ছাড়া দল কেমন খেলবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাই ইন্টার মায়ামির প্লে–অফ খেলা পুরোপুরি অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন তো বটেই। আর এই ‘অসাধ্য সাধন’ যদি কেউ করতে পারেন, সেটা মেসি ছাড়া আর কে?