কিলিয়ান এমবাপ্পের বিরুদ্ধে স্টকহোমে ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে সুইডিশ সংবাদমাধ্যম। সুইডেনের রাজধানী শহরটিতে দুই দিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে এবং তদন্ত শুরু হয়। এরপর অন্তত বর্তমান সময়ের জন্য এমবাপ্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তাঁর ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ।
এমবাপ্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত শুরু হওয়া নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি রিয়াল। তবে ব্যাপারটি নিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা অতিরিক্ত উদ্বিগ্নও নয়। চলতি মৌসুম শুরুর আগে গত জুনে পাঁচ বছরের চুক্তিতে রিয়ালে যোগ দেন ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী এমবাপ্পে।
রিয়ালের ভেতরকার একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, এমবাপ্পের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, ‘খেলাধুলার ইতিহাসেই সবচেয়ে বড় জালিয়াতি’।
রিয়ালের জার্সি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। গত মঙ্গলবার অ্যাডিডাসের সঙ্গে একটি প্রচারণা ক্যাম্পেইন থেকে এমবাপ্পের ছবি মুছে ফেলার অভিযোগ ওঠে রিয়ালের বিরুদ্ধে। কিন্তু সংবাদকর্মীদের লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এমবাপ্পের বুটের স্পনসর অ্যাডিডাসেরই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান নাইকি। এ কারণে সেই প্রচারণা ক্যাম্পেইন থেকে এমবাপ্পের ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। তবে রিয়ালের এই ব্যাখ্যা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, প্রচারণা ক্যাম্পেইনের ছবিতে এমন আরও কিছু খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা নাইকির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। যেমন এমবাপ্পেরই জাতীয় দল সতীর্থ এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা।
এমবাপ্পের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ঝড় উঠেছে। গত মঙ্গলবার এমবাপ্পের আইনজীবী এএফপি ও ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত শুরু হওয়ায় ‘হতবাক’ তাঁর মক্কেল। একই দিন মাদ্রিদে ক্লাব সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনও করেছেন এমবাপ্পে। রিয়াল এবার তাঁর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে কার্পণ্য করেনি। বাঁ ঊরুতে অস্বস্তিবোধ করায় ফ্রান্সের হয়ে উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচে না খেলা এমবাপ্পে শনিবার লা লিগায় তাঁর ক্লাবের হয়ে সেল্তা ভিগোর মুখোমুখি হতে পারেন।
নেশনস লিগের ম্যাচের জন্য এমবাপ্পেকে স্কোয়াডের বাইরে রেখেছিলেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম। কয়েক দিন ছুটি পেয়ে যাওয়ায় বন্ধুদের নিয়ে গত ৯ অক্টোবর স্টকহোমে যান এমবাপ্পে। সেখান থেকে তাঁরা ফিরে আসেন ১১ অক্টোবর। সুইডেনের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এমবাপ্পে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁর পাশাপাশি নৈশক্লাবে গিয়েছিলেন। ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে স্টকহোম ছাড়ার পর এক নারী পুলিশের কাছে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন।
গত মঙ্গলবার সুইডিশ সংবাদমাধ্যম আফতোব্লাদেত প্রথম জানায়, ধর্ষণের অভিযোগে এমবাপ্পের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই খবরকে ‘ভুয়া’ বলেছিলেন এমবাপ্পে। রিয়াল তারকা আরও দাবি করেন, পিএসজির কাছে বকেয়া পাওনা নিয়ে তিনি যে আইনি লড়াই করছেন, তার সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগের যোগসূত্র রয়েছে। গত মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এমবাপ্পে মন্তব্য করেছিলেন, ‘শুনানির আগের দিন এমন কিছু একদমই অনুমানযোগ্য ছিল।’
সুইডেনের এক কৌঁসুলিও নিশ্চিত করেন, ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে তবে এমবাপ্পের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। এমবাপ্পের আইনজীবী মারি-আলিক্স কানু-বের্নাদ গত মঙ্গলবার এএফপিকে জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল ‘নিরুদ্বেগ’ আছেন। কারণ, ‘তিনি কোনো ভুল করেননি’। কানু-বের্নাদ আরও জানিয়েছেন, এমবাপ্পে তাঁকে বলেছেন ‘এখনকার পরিস্থিতি দেখে যেন চুপ করে না থাকি। কারণ, কেউ এভাবে অপমানিত ও অপদস্থ হতে চাইবে না। এ কারণেই আমরা মানহানির অভিযোগ করব।’