লা মাসিয়া থেকে উঠে এসেছেন। সেই হিসেবে দানি ওলমো বার্সেলোনার ঘরে ছেলে। অবশ্য ঘরের ছেলেকেই একসময় পর করে দিয়েছিল বার্সা। ১০ বছর ওলমো খেলেছেন ক্রোয়াট ক্লাব দিনামো জাগরেব ও জার্মান ক্লাব লাইপজিগে।
তবে গত দুই বছর ওলমো জাতীয় দল ও ক্লাবে যেভাবে আলো ছড়িয়েছেন, তাতে তাঁকে আবারও ফেরানোয় উদ্যোগ নেয় বার্সা। কাতালান ক্লাবটি সফলও হয়। গত বছর গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ৬ কোটি ইউরোয় (৭৫৩ কোটি টাকা) লাইপজিগ থেকে ওলমোকে ফিরিয়ে আনে বার্সা।
কিন্তু লা লিগার বেতনসীমা–সংক্রান্ত নীতির শর্তাবলি পুরোপুরি পূরণ করতে না পারায় বার্সার মূল দলে ওলমোর অভিষেক হতে দেরি হয়। লা লিগা কর্তৃপক্ষ সেই সময় তাঁকে শুধু মৌসুমের প্রথমার্ধের জন্য নিবন্ধিত খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করেছিল। বার্সা তখনই বুঝেছিল, মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধ আসতে আসতে আবারও তাদের ঝামেলায় পড়তে হবে।
আজ রাতের মধ্যে বার্সেলোনা টাকা জোগাড় করে যদি ওলমোকে লা লিগায় নিবন্ধন করাতে না পারে, তাহলে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফ্রি এজেন্ট (মুক্ত খেলোয়াড়) হয়ে যাবেন।
শেষ পর্যন্ত শঙ্কাই সত্যি হয়েছে। বেতনসীমা–সংক্রান্ত নীতি পূরণ করতে না পারায় ওলমোকে আর নিবন্ধিত খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে না লা লিগা কর্তৃপক্ষ। লিগের আর্থিক সংগতি নীতি অনুযায়ী, মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য একজন খেলোয়াড়কে ৩ জানুয়ারির মধ্যে নিবন্ধন করাতে হবে। কিন্তু করোনার সময় থেকে আর্থিক সংকটে থাকা ক্লাবটির পক্ষে আজকের মধ্যে ওলমোকে নিবন্ধন করানো মোটেও সহজ হবে না।
বিষয়টি সুরাহা করতে স্প্যানিশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বার্সা। ওলমোকে নিবন্ধন করাতে ক্লাবটি আদালতের কাছে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের আবেদন করেছিল। কিন্তু আদালতের রায় তাদের বিরুদ্ধে গেছে। বার্সার আবেদন আদালত খারিজ করে দেওয়ায় লা লিগা কর্তৃপক্ষও ক্লাবটিকে আর সময় দেবে না। এক বিবৃতিতে লিগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘বার্সেলোনা এমন কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যেটির পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হবে।’
সব মিলিয়ে ঘরের ছেলে ওলমো এখন বার্সার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে। মানে, আজ রাতের মধ্যে ক্লাবটি টাকা জোগাড় করে যদি ওলমোকে নিবন্ধন করাতে না পারে, তাহলে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফ্রি এজেন্ট (মুক্ত খেলোয়াড়) হয়ে যাবেন। অর্থাৎ, অন্য কোনো ক্লাব ওলমোকে নিতে চাইলে বার্সা বাধা দিতে পারবে না। ছেড়ে দিতে হবে বিনা মূল্যে।
ওদিকে লাইপজিগকেও বাকি পাওনা পরিশোধ করতে হবে। ইউরোপের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওলমোর দলবদল বাবদ বার্সার কাছ থেকে আরও ৪ কোটি ৮০ লাখ ইউরো (৬০২ কোটি টাকা) পাবে লাইপজিগ। এ ছাড়া ২০৩০ সাল পর্যন্ত চুক্তির সম্পূর্ণ বেতন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
গোল ডটকম অবশ্য জানিয়েছে, বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা ও প্রধান কোচ হান্সি ফ্লিক ওলমোকে ধরে রাখার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী। নিজেদের মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ের ভিআইপি বক্সের আসন বিক্রি করে টাকা জোগাড়ের পরিকল্পনা করে রেখেছে ক্লাবটি। আসনগুলো বিক্রি করতে পারলে ১০ কোটি ইউরোর মতো (১ হাজার ২৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা) আয় করতে পারবে বার্সা। সেই টাকা দিয়ে তারা লা লিগার বেতনসীমা–সংক্রান্ত নীতি অনায়াসেই পূরণ করতে পারবে।
ওলমোর এজেন্ট অ্যান্ডি বারা জানিয়েছেন, তাঁরা অন্য কোনো ক্লাবের কথা ভাবছেন না। গিভমিস্পোর্টকে বারা বলেছেন, ‘বার্সেলোনাই প্রথম ও শেষ বিকল্প। দানি (ওলমো), ওর বাবা, পরিবার এবং আমি অন্য কোনো বিকল্পের কথা ভাবছি না। এটা দানিকে চাপে রাখার পরিস্থিতিতে ফেলেছে, যেমনটা অন্য খেলোয়াড়ের সঙ্গেও ঘটতে পারে। তবে সে মানুষ ও খেলোয়াড় হিসেবে দুর্দান্ত। এমন পরিস্থিতিতেও শান্ত থাকার চেষ্টা করছে।’