জাকার্তা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হতে দেরি হলো প্রায় আধা ঘণ্টা। এই ৩০ মিনিটের কথা শুনেই মনে পড়তে পারে গত বুধবার (বাংলাদেশ সময়) সকালে মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের কথা। গ্যালারিতে মারামারি ও পুলিশের লাঠিপেটার কারণে সে ম্যাচও শুরু হয়েছিল আধা ঘণ্টা দেরিতে। মিলটা হলো, সেটাও আর্জেন্টিনা, এটাও আর্জেন্টিনা!
মানে ওই ম্যাচটা ছিল বড়দের—আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের। আর এটা আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৭ দলের। মঞ্চের নামও প্রায় একই—ওটা ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই, এটা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ। মিল প্রতিপক্ষতেও। একদম ঠিক ধরতে পেরেছেন—ব্রাজিল! তবে ফলটা আলাদা। বলতে পারেন ছোটদের ফল দেখে লিওনেল মেসি খুশি হয়ে ভাবতে পারেন, ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে আর্জেন্টাইন ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। ওহ, ফলটা বলে দেওয়া যাক। বড়দের সে ম্যাচে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জিতলেও আজ জাকার্তায় ছোটদের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৭ দলকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আর্জেন্টিনা। হ্যাটট্রিক করেছেন এমন একজন, যাঁকে ভাবা হয় ‘পরবর্তী মেসি’। তবে অনেকে আদর করে ডাকেন ‘খুদে শয়তান’।
ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, জাকার্তায় দুই দল যখন গা গরম করছিল, তখন ঝড়ের কবলে পড়ে মাঠ। স্টেডিয়ামের ওপরে ছাদ থাকলেও তা ঢেকে দেওয়া হয়নি। প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাঠ খেলার উপযোগী করে তুলতে আধা ঘণ্টা দেরি হয়। খেলা শুরুর বাঁশি বাজার পর মাঠ কাঁপিয়েছেন আর্জেন্টিনার ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ক্লদিও এচেভেরি। ২৮, ৫১ ও ৭১ মিনিটে গোল করে হ্যাটট্রিক তুলে নেন। আগামী মঙ্গলবার সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৭ দলের প্রতিপক্ষ জার্মানি।
ছোটদের এই বিশ্বকাপে ব্রাজিল চারবারের চ্যাম্পিয়ন। আর্জেন্টিনা কখনো শিরোপা জিততে পারেনি। এবার শিরোপা জয়ের পথেই আছে গত ডিসেম্বরে কাতারে বড়দের বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা। আর রিভার প্লেট ফরোয়ার্ড এচেভেরিকে কেন ভবিষ্যতের তারকা বলা হয় সেটাও বুঝিয়েছেন এই ম্যাচে। মেসির মতোই ১০ নম্বর জার্সি পরা এচেভেরির তিনটি গোলই চোখধাঁধানো।
২৮ মিনিটে করা গোলটি তো মাঝমাঠ থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়। রক্ষণভাগ থেকে খেলা তৈরি করে মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে থাকা এচেভেরিকে পাস দেন তাঁর এক সতীর্থ। সামনে একটু ফাঁকা জায়গা পেয়ে বল পায়ে টান দেন। ব্রাজিলের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শটে গোল করেন। ১-০ গোলে এগিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে আর্জেন্টিনা।
বিরতির পর ৫১ মিনিটে আবারও গোল এবং এবার বল নিয়ন্ত্রণে অসামান্য দক্ষতা দেখান এচেভেরি। বাঁ প্রান্ত থেকে পাস পেয়েছিলেন, দৌড়ের ওপর বল এক টাচে সামনে ফেলে ব্রাজিলের তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল টেনে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে গোল করেন এচেভেরি। ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৭ দল সম্ভবত এরপর থেকেই লড়াইয়ের প্রেরণা হারিয়ে ফেলেছিল। রক্ষণ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে বেশি সময়। ৭১ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন হ্যাটট্রিক তুলে নেন এচেভেরি।
গোলটা প্রথাগত দক্ষিণ আমেরিকান স্ট্রাইকারদের মতোই। মাঝমাঠ থেকে থ্রু পাস পেয়ে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা ব্রাজিলের এক ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে গোলকিপারকেও একা পেয়ে গিয়েছিলেন এচেভেরি। তাঁকেও কাটিয়ে গোল করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ জানিয়েছে, ১৯২৫ কোপা আমেরিকায় ম্যানুয়েল সিওনির পর গত ৯৮ বছরে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ব্রাজিলের বিপক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন এচেভেরি। নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে পায়ে ক্র্যাম্পের কারণে তাঁকে তুলে নেন আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ ডিয়েগো প্লাসেন্তে।
ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া জানান এচেভেরি, ‘আজকের জয়ের জন্য, যেভাবে খেলেছি এবং যে তিন গোল করেছি, তা নিয়ে খুব খুশি। আপনি প্রতিদিন ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারাতে পারবেন না। এখন জার্মানিকে নিয়ে ভাবছি। আমরা খুব খুশি।’