রক্ষণে একের পর এক ভুল করছেন হ্যারি ম্যাগুয়ার
রক্ষণে একের পর এক ভুল করছেন হ্যারি ম্যাগুয়ার

ম্যাগুয়ার যেন ডিফেন্ডারের ছদ্মবেশে প্রতিপক্ষের প্লে–মেকার!

জলের মাছকে ডাঙায় তুললে যেমন ছটফট করে, রক্ষণে হ্যারি ম্যাগুয়ারও এখন তেমন কিছু। যেখানে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো তাঁর কাজ, সেখানে একের পর এক ভুলে প্রতিপক্ষকে অকাতরে গোল ‘উপহার’ দিচ্ছেন! হঠাৎ দেখে যদি কেউ তাঁকে প্লে-মেকার বলে ভুল করে বসেন, তাহলে দোষ দেওয়া যায় না। অবস্থা এমন যে ম্যাগুয়ারের পায়ে বল মানেই যেন প্রতিপক্ষের জন্য আরেকটি গোলের সম্ভাবনা!

গত মৌসুমে হ্যারি ম্যাগুয়ারের রক্ষণে ভুল নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করা হয়। দর্শক হাসানোর ইচ্ছা থেকে এটা বানানো হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও মনে আসতে পারে। কখনো প্রতিপক্ষের পায়ে বল তুলে দিচ্ছেন, আবার কখনো সতীর্থকেই নিজেই ট্যাকল করছেন, বল ‘ক্লিয়ার’ করতে গিয়ে সতীর্থকেই আবার আঘাত করে বসছেন, প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ড অনায়াসে তাঁকে ‘নাটমেগ’ও করছেন, আর ড্রিবলিং করতে গিয়ে বল হারানো তো তাঁর জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই তো উয়েফা নেশনস লিগেই ইংল্যান্ডের সর্বশেষ ম্যাচে ড্রিবলিং করতে গিয়ে বল হারিয়ে গোল হজম করেন জার্মানির কাছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাই ম্যাগুয়ার এক অর্থে যেন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান—তাঁর মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে বানানো সব মিম প্রচুর হাস্যরসের খোরাক জোগাচ্ছে। মিমের দুনিয়ার একটা অংশে এখন ম্যাগুয়ারের রাজত্ব বললে অত্যুক্তি হয় না। তাঁকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য পেজ।

জার্মানির বিপক্ষে একাধিক ভুল করেছেন ম্যাগুয়ার

কিছু পেজের নাম এমন, ‘হ্যারি ম্যাগুয়ার একাডেমি অব ফাইন ডিফেন্ডিং’, ‘হ্যারি ম্যাগুয়ার দ্য লর্ড’, ‘হ্যারি ম্যাগুয়ার দ্য মেন, দ্য মিথ, দ্য লিজেন্ড’। চাইলেই ম্যাগুয়ারকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অসংখ্য পেজের সন্ধান দেওয়া যাবে।

লম্বা সময় ধরেই সমালোচকদের কথার বাণে বিদ্ধ হচ্ছেন ম্যাগুয়ার। তাতেও অবশ্য তাঁর খেলা লেশমাত্র উন্নতি হয়নি। ভুলের পুনরাবৃত্তি চলছেই। জার্মানির বিপক্ষে উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচকেই ধরা যাক। এই ম্যাচে ম্যাগুয়ারের বাজে পারফরম্যান্স এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মিলানে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে নড়বড়ে ছিলেন। আর জার্মানির বিপক্ষে যা করলেন, তা তো ক্ষমার অযোগ্য!

প্রথম গোলের পেছনে যে পেনাল্টি, সেটি তো তাঁরই দেওয়া উপহার! কাই হাভার্টজের দ্বিতীয় গোলে বলের দখল হারান ম্যাগুয়ারই। তবে সে ম্যাচে সবকিছুই যে খারাপ করেছেন, তা নয়। ৯টি বল ‘রিকভার’ করেছেন, পাশাপাশি ৬টি ‘ক্লিয়ারেন্স’ এবং জিতেছেন ৫টি ‘ডুয়েল’। তবে এসব ম্লান হয়ে যায় দুটি বিচ্ছিরি ভুলে, যা তাঁর রক্ষণ–সামর্থ্যকেও করেছে প্রশ্নবিদ্ধ।

অথচ এই ম্যাগুয়ারকে দলে নিয়ে নিজের মর্যাদাকে ঝুঁকিতে রাখার কথা বলেছিলেন সাউথগেট। এখন ইংলিশ কোচের চাকরি হুমকিতে পড়ার জন্য দায় এড়াতে পারবেন না ম্যাগুয়ারও। বিশ্বকাপের আগে সাউথগেটের সবচেয়ে বড় কাজ হবে ম্যাগুয়ার-সমস্যার সমাধান করা।

ইতিমধ্যে ফুটবল বিশ্লেষক থেকে ইংলিশ সমর্থকেরা ম্যাগুয়ারকে বাদ দেওয়ার রব তুলেছেন। গোল ডটকমে চার্লস ওয়াটসের লেখার শিরোনাম, ‘ইংল্যান্ডের আদর্শ স্কোয়াডে দয়া করে ম্যাগুয়ারকে রেখো না’। বিবিসিতে ক্রীড়া লেখক ফিল ম্যাকনাল্টি লিখেছেন, ‘ম্যাগুয়ার সাউদগেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা’।

ম্যাগুয়ারকে নিয়ে প্রতিবেদনে ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ জানিয়েছে, যদি অভিজ্ঞ কোনো বিকল্প থাকত, তবে দলে জায়গাটা আরও আগেই হারাতেন। অবশ্য দলে তাঁর জায়গা পাওয়ার যৌক্তিকতা আরও আগেই ফুরিয়ে গেছে।

এর মধ্যে কয়েকটি নাম সামনে এলেও সাউথগেট পছন্দের শিষ্যের ওপর আস্থা হারাননি। এখন বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের হাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার তেমন সুযোগও নেই। তাই যা করার খুব দ্রুত করতে হবে। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করে ম্যাগুয়ারকে বিশ্বকাপ মঞ্চে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা আত্মঘাতী হতে পারে ইংল্যান্ডের জন্য।

পেনাল্টি হজমের পর হ্যারি ম্যাগুয়ার। বল নিয়ে পেনাল্টি নেওয়ার অপেক্ষায় গুন্দোগান

ম্যাগুয়ারকে নিয়ে নিজের অবস্থানটা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছেন ম্যান ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ। গত মৌসুমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ম্যাগুয়ারকে বেঞ্চে পাঠিয়েছেন এই ডাচ কোচ। দ্রুত ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেওয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বলতা ম্যাগুয়ারকে রীতিমতো কোণঠাসা করে রেখেছে।

আধুনিক ফুটবলে ডিফেন্ডারদের যেখানে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়, ম্যাগুয়ার সেখানে ধীরগতির। উল্টো অস্থিরতা দেখিয়ে বেশির ভাগ সময় গুবলেট পাকিয়ে ফেলেন। এমনকি অনেক সময় প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মানসিকতাও ঠিকঠাক বুঝতে পারেন না।

ম্যাগুয়ার তবু কিছু ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান। একের পর এক ভুল করেও পাশে পাচ্ছেন সতীর্থদের। এক সাক্ষাৎকারে সাবেক সতীর্থ নেমানিয়া মাতিচ সমালোচকদের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘মানুষ তার সঙ্গে যা করছে, তা বিপর্যয়কর। সবকিছুর সীমা আছে। যে মানুষগুলো তাকে নিয়ে লিখছে তাদের কোনো জীবন নেই।’

তাঁর আরেক সতীর্থ লুক শ বলেছেন, ‘ম্যাগুয়ারকে নিয়ে যত সমালোচনা হয়, সম্ভবত ফুটবলে এতটা আর দেখিনি।’ লুক শর কথা ধরেই প্রশ্ন তোলা যায়, ম্যাগুয়ার যেসব ভুল করেছেন, ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে কোনো ডিফেন্ডার এত ভুল কি আদৌ করেছেন?