সাবেক ফুটবলার আবদুল্লাহ আল মুজাহিদ সোয়েব
সাবেক ফুটবলার আবদুল্লাহ আল মুজাহিদ সোয়েব

হৃৎপিণ্ডের ভালভ নষ্ট, জীবন বাঁচাতে লড়ছেন সাবেক ফুটবলার

ভালোই চলছিল জীবন। ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে সমাজবিজ্ঞান পড়ান। প্রতিষ্ঠানটির ক্রীড়া শিক্ষকও তিনি। সেই সূত্রে প্রায় চার শ ছেলে নিয়ে স্কুলের মাঠে ফুটবল কোচিং শুরু করেছেন এক বছর আগে। নিজে সাবেক ফুটবলার, খেলেছেন মোহামেডানের মতো দলে। ‘সি’ কোচিং কোর্স করেছেন। কিন্তু সবকিছুই এখন থমকে গেছে। হৃৎপিণ্ডের সমস্যায় আবদুল্লাহ আল মুজাহিদ সোয়েবের জীবনই এখন হুমকির মুখে।

‘আমার হৃৎপিণ্ডের একটা ভালভ পুরোই নষ্ট হয়ে গেছে। আকারে এখন এটি ০.৬ পর্যায়ে আছে। যেকোনো সময় একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাকি তিনটি ভালভও আক্রান্ত। ভালভের আকার ১৯ থাকার কথা, আমার ভালভের আকার ১৮। ডাক্তার বলেছেন এটা নাকি আমার জন্মগত সমস্যা। দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে...।’ কথাগুলো বলতে বলতে কণ্ঠ ধরে আসে ৪৯ বছর বয়সী সোয়েবের।

হৃৎপিণ্ডের সমস্যার কারণে একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে ওঠেন। গলা শুকিয়ে যায়। মাংসপেশিতে টান লাগে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারেন না। থেমে থেমে উঠতে হয়। সমস্যাটা দেখা দেয় কিছুদিন আগে। তখন ভেবেছেন, খেলাধুলা না করার কারণে হয়তো এমন হচ্ছে। তবে মাস দুয়েক আগে পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে জটিল এই সমস্যা।

এত দিন নিজের সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসার খরচ টেনেছেন। কিন্তু আর পারছেন না। ভারতে গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে ১৪-১৫ লাখ টাকা দরকার। কিন্তু সেই সামর্থ্য এখন নেই তাঁর। তাই সবাইকে পাশে চান এ সময়ে, ‘অনেক বছর ফুটবল খেলেছি। ফুটবল ছেড়ে ফুটবলেই আছি। কিন্তু আপাতত সব বন্ধ করে জীবন বাঁচাতেই লড়ছি। নিজের পক্ষে যতটা করা সম্ভব, করেছি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে ভালো হয়।’

জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬, ১৯ দলে খেলেছেন। জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন কয়েকবার। ১৯৯৩ সালে ঢাকা সাফ গেমসের জন্য গুডরিখের ডাকা প্রাথমিক দলে সোয়েব ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চার জাতি ফুটবলের জন্য অটো ফিস্টারের প্রাথমিক দলেও ডাক পান। কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। চূড়ান্ত দলে জায়গা পাননি। এ নিয়ে তাঁর কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেছে।

সোয়েব যখন মোহামেডানে খেলতেন। ছবিতে ডান থেকে ষষ্ঠ (১৪ নম্বর জার্সি)

অনূর্ধ্ব-১৯ সোহরাওয়ার্দী কাপ থেকে ১৯৯১-৯২ সালে সরাসরি ওয়ারী ক্লাবে নাম লেখান। ঢাকার নিচের কোনো লিগে না খেলে সরাসরি শীর্ষ লিগে সুযোগ পাওয়া ছিল তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। ওয়ারীর পর আরামবাগ, মোহামেডান, রহমতগঞ্জ হয়ে ২০০৭ সালে ব্রাদার্সে খেলে অবসর। খেলতেন উইংয়ে। গতিতে ভালো ছিলেন। তাঁকে আটকাতে হিমশিম খেতেন মোনেম মুন্নার মতো ডিফেন্ডারও। তবে গোল কম করতেন, করাতেন বেশি নরসিংদীর এই ফুটবলার।

মোহামেডানে খেলার সময়টা তাঁকে প্রচারে এনেছে বেশি। পেছন ফিরে বলেন, ‘১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত মোহামেডানে খেলেছি। তখন অনেকে আমাকে জুনিয়র সাব্বির বলে ডাকত। সাব্বির ভাইকে দেখে দেখেই ফুটবলে আসা। ঢাকার মাঠে আবাহনীর বিপক্ষে গোল আছে মোহামেডানের হয়ে। ফরাশগঞ্জের বিপক্ষে আমার গোলে জিতেছে মোহামেডান। এমন অনেক স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছি।’

বেশি স্মরণীয় হয়ে আছে ১৯৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় ভারতের এয়ারলাইনস কাপ, যেটিতে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়ে। সেই টুর্নামেন্টে অনেক ভালো খেলেন সোয়েব। এয়ারলাইনস কাপের একটা স্মৃতিও মনে রেখেছেন আলাদাভাবে, ‘ইস্ট বেঙ্গলের এক খেলোয়াড়কে কড়া ট্যাকল করি। পরে ধাক্কাধাক্কি হয় আমাদের মধ্যে। ঘটনার পরম্পরায় ইস্ট বেঙ্গলের ফুটবলারকে বুক দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলি, “দেশ তোমার হতে পারে, কিন্তু মাঠ শুধু তোমার নয়।” দেশে ফিরলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাকে “মাস্তান” বলে আদর করে ডাকেন। আমার মুখ থেকে সব শুনে কাদের ভাই বলেছিলেন, “শাবাশ”।’

শুধু খেলা নয়, পড়াশোনাতেও ভালো ছিলেন সোয়েব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। কিন্তু আপাতত জীবনের গতি পাল্টে এখন চিকিৎসকের কাছে তাঁকে যেতে হচ্ছে ঘন ঘন।