নেইমার ও চোটের সম্পর্ক যেন অবিচ্ছেদ্য। ক্যারিয়ারজুড়ে বারবার হানা দিয়েছে চোট। নেইমার যখনই ঘুরে দাঁড়িয়ে দারুণ কিছু করার স্বপ্ন দেখেছেন, চোট এসে এলোমেলো করে দিয়েছে সব। অনেকের ধারণা, চোটের কারণেই নেইমারের প্রতিভা পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হতে পারেনি। সেই চোটে এখনো মাঠের বাইরে আছেন নেইমার। এমনকি আগামী বছরের কোপা আমেরিকাতেও নেইমার পুরোপুরি ফিট হয়ে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়েও আছে শঙ্কা। গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে কোপা আমেরিকার ড্র।
যেখানে গ্রুপ ‘ডি’তে ব্রাজিলের সঙ্গে আছে কলম্বিয়া ও প্যারাগুয়ে। এই তিন দলের সঙ্গে পরে যোগ দেবে কোস্টারিকা ও হন্ডুরাসের মধ্যে যেকোনো এক দল।
বিশ্বকাপের পর পিএসজির হয়ে খেলার সময় চোটে পড়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকেন নেইমার।
এরপর গত ১৭ অক্টোবর ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে আবার পায়ে চোট পান নেইমার। বাঁ হাঁটুর এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্টের চোট ঠিক করাতে ২ নভেম্বর ব্রাজিলের বেলো হরিজন্তেতে অস্ত্রোপচার করান আল হিলাল তারকা। এরপর থেকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন নেইমার।
এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্টের চোট সারতে সাধারণত ৯ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। অনেক সময় অ্যাথলেটরা অবশ্য আরেকটু আগেই সেরে উঠতে পারেন। তবে নেইমার যে চোটপ্রবণ, তা কারও অজানা নয়। তাই তাঁর কোপা আমেরিকার আগে সেরে উঠে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত হওয়া বেশ কঠিনই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এমন নয় যে নেইমার এ ধরনের চোটে প্রথম ভুগছেন।
এর আগেও মেটাটারসাল চোট এবং হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যা ভুগিয়েছে তাঁকে। তবে এবারের চোট আগের চোটগুলোর চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর। যে কারণে আগামী বছরের জুনে শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকার আগে তাঁর সেরে ওঠা নিয়ে বেশ শঙ্কা রয়েছে। যদিও নেইমার–ভক্তদের আশা, সময়ের চেয়ে দ্রুতই সেরে উঠবেন নেইমার।
তবে চোট সেরে ফিরলেও নেইমারকে পূর্ণ ছন্দে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘এ ট্রেড’ বলছে, নেইমারের এই চোট মাঠে তাঁর গতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এমন চোট নেইমারকে ঠেলে দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা ও যন্ত্রণার দিকেও।
কদিন আগে খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সে করা পোস্টে এনআর স্পোর্টস নেইমারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে লিখেছে, ‘ব্যথা...আমরা ভাবতেও পারব না এটি কতটা!’ এর আগেও এ ধরনের চোট অনেক ফুটবলারের ক্যারিয়ারকে হুমকিতে ফেলেছিল। ফলে নেইমারের চোট সারলেও তা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে অনেক দিন লেগে যেতে পারে।
জানা গেছে, নেইমারকে কয়েকটি ধাপ পার করে মাঠে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। চোট সারা, শক্তি অর্জন করা এবং কার্যকর গতি ফিরে পাওয়া যার অন্যতম। এতগুলো ধাপ পেরিয়ে নেইমারের কোপা আমেরিকায় ফেরাটা তাই এই মুহূর্তে অসম্ভব না হলেও কঠিন যে হবে, তা বলাই যায়।
এসব তো গেল ব্যক্তিগতভাবে নেইমার প্রস্তুত হওয়ার কথা। এরপর দলে ফিরে দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারও আছে। ব্রাজিল দলের চিকিৎসক এরই মধ্যে জানিয়েছেন, নেইমারের সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে লাগতে পারে ৯ মাস। এ সময়ে পুনর্বাসনের ভেতর দিয়ে মাঠে নামার জন্য তৈরি হবেন নেইমার।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল বলছে, নেইমার শেষ মুহূর্তে ফিরলেও গ্রুপপর্বে তাঁর না–ও খেলা হতে পারে। তবে গ্রুপপর্বের বাধা পেরিয়ে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে গেলে হয়তো মাঠে দেখা যেতে পারে নেইমারকে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে ফিরে নেইমার কি দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন? এ ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে ফিরে আরও বড় চোটে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।