আজ থেকে ৮ মাস আগের ঘটনা। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের এক সকালে জ্যাডন সানচো জানতে পারেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খাবার টেবিলেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাঁকে। নিষেধাজ্ঞাদাতা আর কেউ নন, খোদ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ।
সানচোর সঙ্গে টেন হাগের বিরোধের শুরু অবশ্য আরও আগে। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আর্সেনালের কাছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ৩–১ গোলের হারের পর টেন হাগ জানান, অনুশীলনে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছেন সানচো। একজন ফুটবলারের জন্য এর চেয়ে অপমানজনক কথা আর কী হতে পারে! জবাবে ডাচ কোচকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে মন্তব্য করেন সানচো। এমনকি লম্বা সময় ধরে তাঁকে টেন হাগ ‘বলির পাঁঠা’ বানাচ্ছেন বলেও জানান এই উইঙ্গার।
এ ঘটনার পরই শুরু হয় গুরু–শিষ্যের ইঁদুর–বিড়াল খেলা। টেন হাগের সমালোচনা করায় ইউনাইটেডের অনুশীলনে নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি দলের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়া থেকেও বঞ্চিত হন সানচো। সে সময় ইউনাইটেডে দুর্বিষহ এক জীবন পার করেন সানচো। তরুণ ফুটবলার হিসেবে সানচোর ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়েও তখন সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে।
এমন পরিস্থিতিতে ক্যারিয়ার বাঁচাতে শীতকালীন দলবদলে ধারে পুরোনো ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে চলে আসেন সানচো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে আসাটাই যেন সানচোর জন্য শাপেবর হয়েছে। নতুন ফেরায় সানচোর ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। জানুয়ারির পর থেকে সানচোর পারফরম্যান্সই যে তাঁর হয়ে কথা বলছে। ডর্টমুন্ডে এসে এখন পর্যন্ত ১৮ ম্যাচ খেলে ৩ গোল ও ২টি অ্যাসিস্ট করেছেন সানচো। তবে ডর্টমুন্ডে তাঁর প্রভাবকে পরিসংখ্যানে বোঝানো কঠিন।
পুরো দলের মধ্যে দারুণ ভারসাম্য নিয়ে এসেছেন এই ইংলিশ তরুণ। চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির বিপক্ষে সেমিফাইনালের প্রথম লেগের কথাই ধরা যাক। সেদিন পিএসজিকে একাই নাচিয়ে ছেড়েছেন ২৪ বছর বয়সী এ ফুটবলার। তবে সবচেয়ে বড় কথা, সানচো এখন পৌঁছে গেছেন ইউরোপিয়ান সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। আর মাত্র একটি ম্যাচে জয় পেলেই ইউরোপ–সেরা দলে জ্বলজ্বল করবে তাঁর নাম।
অন্যদিকে সানচো যখন ইউরোপ–সেরার মুকুট পরার অপেক্ষায়, ইউনাইটেড তখন চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে গিয়ে রীতিমতো ধুঁকছে। এমনকি ইউরোপা লিগে খেলার সম্ভাবনা টিকে আছে কেবল কাগজে–কলমে। ইউনাইটেডের এমন দুর্দশাকে শোচনীয় করেছে আরও কিছু পরিসংখ্যান।
এবারই এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ১৩ ম্যাচে হেরেছে ইউনাইটেড। এমনকি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মৌসুমে লন্ডনে পাঁচ ম্যাচে হার দেখেছে ওল্ড ট্রাফোর্ডের দলটি। এমন পরিস্থিতিতে টেন হাগের ছাঁটাইয়ের গুঞ্জনও প্রতিনিয়িত বাড়ছে।
একেই বুঝি বলে নিয়তি! ছয় মাসের ব্যবধানে পুরোপুরি উল্টো রথে সানচো ও টেন হাগ। যে ক্লাবে টেন হাগের জন্য সানচো থাকতে পারেননি, সেখানে এখন ডাচ কোচের থাকাটাই পড়েছে শঙ্কায়। অন্যদিকে কদিন যে সানচোর ক্যারিয়ার ছিল শঙ্কায়, তিনিই এখন ইউরোপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর।