পাকিস্তানের বিপক্ষে গোলের পর শামসুন্নাহার
পাকিস্তানের বিপক্ষে গোলের পর শামসুন্নাহার

গোলের জন্য ‘পাগল’ হয়ে গিয়েছিলেন শামসুন্নাহার

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ। অতিরিক্ত ৬ মিনিটও শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তখনো ১-০ গোলে পিছিয়ে বাংলাদেশ। হার দিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর শঙ্কায় তখন সাবিনা খাতুনেরা। তবে শেষমেশ শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে ড্র নিয়ে দশরথ স্টেডিয়াম ছেড়েছে বাংলাদেশ।

কিন্তু এই গোল পাওয়ার আগ পর্যন্ত অস্থির ছিলেন শামসুন্নাহার। আজ টিম হোটেলে বসে সেটাই বলছিলেন, ‘৯০ মিনিট শেষ। তখন মনে হয়েছিল, আল্লাহ, কী করব! আর মাত্র ৬ মিনিট! এটা তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছিলাম। ডিফেন্স থেকে বলছিল, আরও ওপরে উঠে খেলতে। আমরা গোলের জন্য তখন আরও পাগল হয়ে যাই।’

পাকিস্তানের সঙ্গে হেরে গেলে কেমন দেখায়, এমনটাই তখন মনে হচ্ছিল শামসুন্নাহারের। আর সেটি নাকি চাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের ওপর। তবে নিজের ওপর আস্থা ছিল শামসুন্নাহারের, ‘আমার প্রতি সবার ভরসা আছে যে গোল করতে পারব। সবাই বলেও সেটা। আমরা যারা ফরোয়ার্ডে থাকি, আমাদের ডিফেন্স থেকে, মিডফিল্ড থেকে বলে, “গোলে শুট কর”। এই ভরসা থেকে আমি চেষ্টা করি শতভাগ দেওয়ার জন্য।’

গোল করার পর বেশি আনন্দ করতে পারিনি। কৃঞ্চাদি ডাকছিল, “তাড়াতাড়ি আসো, সময় নাই।
শামসুন্নাহার

ম্যাচের দশম মিনিটে শামসুন্নাহারের চোখের কোনায় কেটে যায়। তাতেও দমে যাননি ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়ে। তবে ম্যাচ শেষে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। সেসব নিয়ে বলেন, ‘আমার সঙ্গে যার লেগেছিল, সেই পাকিস্তানের অধিনায়কেরও অনেকটা কেটে গেছে। মাঠেই ওর চিকিৎসা হয়েছে, ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। আমার ব্যান্ডেজ করা যাচ্ছিল না, কারণ, চোখের কর্নারে লেগেছিল।’

টিম হোটেলের সামনে সতীর্থ মনিকা চাকমার সঙ্গে শামসুন্নাহার

ওই সময় নিজের অনুভূতি কেমন ছিল সেটিও বলছিলেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড, ‘তখন মনেই ছিল না যে ব্যথা পেয়েছি। ব্যথাটাকে বড় করে দেখিনি। শুধু মনে হয়েছে ভালো খেলতে হবে। দেশের জন্য খেলতে হবে। সবাই ভরসা করে আছে। আমাদের অ্যাটাক লাইনে যে তিনজন, তাদের ওপর ভরসা বেশি ছিল।’

গোল করার সময় একটু অন্য রকম উদ্‌যাপন করেন শামসুন্নাহার। সর্বশেষ সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩-১ গোলের জয়ে প্রথম গোলটিই তাঁর। নিজেই বলেন, ‘গোল করার পর বেশি আনন্দ করতে পারিনি। কৃঞ্চাদি ডাকছিল, “তাড়াতাড়ি আসো, সময় নাই।” আমি শুধু কয়েক সেকেন্ড ওখানে ছিলাম। তারপর বল নিয়ে চলে আসছি। আরও কয়েক মিনিট ছিল ম্যাচের। তখন ভাবছিলাম, যদি আর একটা গোল করতে পারি তাহলে আমরা জিতব।’

চোখের কোনায় কেটে নেওয়ায় ম্যাচ শেষে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল শামসুন্নাহারকে

পায়ে একটু ব্যথা থাকলেও ভারতের সঙ্গে খেলতে পারবেন বলেই আশা শামসুন্নাহারের। আজ রিকভারি সেশন হয়েছে। যদি ভালো অনুভব করেন, তাহলে ভারত ম্যাচে খেলতে চান। আর আশা করছেন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠতে। শামসুন্নাহারের কথা, ‘যেহেতু প্রথম ম্যাচটা একটু খারাপ হয়েছে, ভারতের সঙ্গে যেন ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিফাইনালে যেতে পারি, সেই চেষ্টা থাকবে।’

তবে সেটা সহজ হবে না জানেন শামসুন্নাহারও, ‘ভারতীয় দলে এবার অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় আছে। আমরা ওদের পাইনি, আগে যারা খেলেছে তারা পেয়েছে। মিডফিল্ড থেকে ওরা অনেক ভালো ভালো বল ছাড়ে। ভালো উইঙ্গার আছে ওদের।’