বাংলাদেশ দলের তিন কন্যা—(বাঁ থেকে) কৃষ্ণা রানী সরকার, সাবিনা খাতুন ও সিরাত জাহান
বাংলাদেশ দলের তিন কন্যা—(বাঁ থেকে) কৃষ্ণা রানী সরকার, সাবিনা খাতুন ও সিরাত জাহান

প্রতিপক্ষ ভারত

এবারও সেই তিন কন্যার দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ

প্রতিপক্ষ ভারত মানেই যেন আতঙ্কে বাংলাদেশ। মেয়েদের ফুটবলে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১০ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারতের—কখনো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে, এসএ গেমস কিংবা অলিম্পিক বাছাইয়ে। একবারও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ১০ বারের সাক্ষাতে ৯ বারই জয়ী ভারত। শুধু ২০১৬ সাফে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল বাংলাদেশ।

মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে কতটা দাপুটে ফুটবল খেলে ভারত, সেটা এ পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার। ১০ ম্যাচে বাংলাদেশের জালে ভারত দিয়েছে ৪৩ গোল। বিপরীতে বাংলাদেশের মেয়েরা মাত্র ৪ বার ভারতের জাল খুঁজে পেয়েছে। এই ৪ গোলের ২টি করেছেন সাবিনা খাতুন। ১টি করে গোল সিরাত জাহান ও কৃষ্ণা রানী সরকারের।

কক্সবাজারে ২০১০ সাফে প্রথমবার বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ভারতের। সেবার ভারত জিতেছিল ৬-০ গোলে। এরপর ২০১১ ঢাকা এসএ গেমসে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ৭-০ ব্যবধানে। ওই বছরই অলিম্পিক বাছাইপর্বে ঢাকায় ভারত জেতে ৩-০ গোলে। ২০১২ কলম্বো সাফেও জয়ী দলের নাম ভারত। সেবারও জয়ের ব্যবধান সেই ৩-০।

ভারতের বিপক্ষে প্রথম জাল খুঁজে পান সাবিনা

ভারতের জাল প্রথমবার খুঁজে পান সাবিনা খাতুন। ২০১৪ ইসলামাবাদ সাফে ভারত ৫-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। ওই ম্যাচে একমাত্র গোলদাতা সাবিনা। এরপর শিলংয়ে ২০১৬ এসএ গেমসে বাংলাদেশকে ৫-১ গোলে হারায় ভারত। সেবারও বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র গোলটি সাবিনার। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য আসে ২০১৬ শিলিগুড়ি সাফে। সেবারই প্রথম বাংলাদেশ সাফের ফাইনালে খেলে। ওই আসরের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ গোলশূন্য ড্র করে ভারতের সঙ্গে। কিন্তু ফাইনালে ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হেরে পুড়েছিল স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়।

ওই ম্যাচে বাংলাদেশের গোলটি করেন সিরাত জাহান। এরপর ইয়াঙ্গুনে ২০১৮ অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ভারত। সে ম্যাচে বাংলাদেশের গোলটি কৃষ্ণা রানী সরকারের। ২০১৯ সালে নেপালের বিরাটনগর সাফে ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেবার সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেন সাবিনারা। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৪-০ গোলে।

এত দিন শুধু হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সাবিনারা। তবে এবার বদলে যাওয়া বাংলাদেশকেই দেখছে সাফ। নেপালে টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেয় ৬-০ গোলে।

অনুশীলনে বাংলাদেশ দল

এরই মধ্যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা বাংলাদেশ আজ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে খেলবে ভারতের বিপক্ষে। আনুষ্ঠানিকতার এই ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ জিতলে সেমিফাইনালে এড়াতে পারবে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল নেপালকে। কিন্তু ভারতের ড্র করলেই চলবে। গোলগড়ে এগিয়ে থাকা ভারত সে ক্ষেত্রে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলবে সেমিফাইনালে।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা অবশ্য জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না, ‘আমি তো সব সময় চেষ্টা করছি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে খেলার। দিন শেষে দল জিতলে বাংলাদেশের মানুষই হাসবে। আমি তাই সাধ্যমতো চেষ্টা করব গোল পেতে।’

ভারতের দলে আছেন অভিজ্ঞ ফুটবলার। কিন্তু এসব নিয়ে চিন্তিত নন সাবিনা, ‘ওদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী; যদিও এবার ওদের অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় নেই। ওদের ৯ (অঞ্জু তামাং), ১০ (সান্ধিয়া রঙ্গনাথান), ১১ নম্বর (গ্রেস দাংমেই) অনেক ভালো ফুটবলার। তবে আমাদের মণিকা, মারিয়া ওঁরাও তো কম না কারও চেয়ে। আমরা চেষ্টা করব ৯০ মিনিট সমানতালে খেলার। আমাদের লক্ষ্যই থাকবে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার।’

ভারতের বিপক্ষে আজ কি পারবে বাংলাদেশ

২০১৬ সাফে ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে গোল করেছিলেন সিরাত। সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিতেই বলেন, ‘যেহেতু ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলি, অবশ্যই দায়িত্ব থাকবে ভালো ফিনিশিং দেওয়ার। সেটাই চেষ্টা করব। ২০১৬ সালে ওদের বিপক্ষে গোল দিয়েছি। এবারও গোল দেওয়ার চেষ্টা করব। ওদের রক্ষণ সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে আমাদের। আমার যে গতি, সেটা কাজে লাগানোর ইচ্ছা আছে ম্যাচে।’

ইয়াঙ্গুনে ৭ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া ম্যাচে একমাত্র গোলদাতা কৃষ্ণা এখনো টুর্নামেন্টে গোলের খাতা খোলেননি। তবে আজ তিনি গোল পেতে চান, ‘সুযোগ নষ্ট করছি। কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবছি না। এটা খেলারই অংশ। তবে গোলের চেষ্টাটা চালিয়ে যাব। যদি একটা গোল পেয়ে যাই, তাহলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।’