ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

কমছে করের বোঝা, বাড়ছে রোনালদোদের আয়

প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল লিগ। দলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্য লিগগুলোর চেয়ে এই লিগকে অনেকেই এগিয়ে রাখেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ফুটবলাররা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে খেলতে উন্মুখ হয়ে থাকেন। ব্রিটিশ সরকারের এক সিদ্ধান্তে প্রিমিয়ার লিগের এ জনপ্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই আরেকটু বাড়তে যাচ্ছে।

সরকারের আয় ও বিমাকর কমানোর সিদ্ধান্তের পর এ লিগে খেলা ফুটবলারদের আয় আরও বেড়ে যাবে, যা সামনের দিনগুলোতে প্রিমিয়ার লিগের প্রতি খেলোয়াড়দের আগ্রহকেও বাড়িয়ে দেবে। ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়দের গড় আয় বাড়বে ২ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও চ্যান্সেলর কাওয়াসি গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের করবিধিতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন আনেন, যার প্রভাব এখন দেশটির ফুটবল অঙ্গনেও পড়ার অপেক্ষায়। ক্লাবগুলো ও এজেন্টরা মনে করছে, এ পরিবর্তন ইংল্যান্ডের শীর্ষ ক্লাবগুলোর প্রতি বিদেশি খেলোয়াড়দের আকর্ষণ অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে।

সাধারণত প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়দের বার্ষিক গড় আয় ৪০ লাখ পাউন্ড, যা সাপ্তাহিক আয়ের হিসাবে ৭৫ হাজার পাউন্ড। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেড় লাখ পাউন্ডের বেশি আয় করা ব্যক্তিদের বাড়তি যে ৪৫ শতাংশ কর দিতে হত, তা এখন থেকে দিতে হবে না। প্রিমিয়ার লিগের বেশিরভাগ ফুটবলারই এই সুবিধায় উপকৃত হবেন।

প্রিমিয়ার লিগেই খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হয়। তবে এখানে ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের মতো বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ করের ব্যবস্থা নেই। স্পেন খেলোয়াড়দের জন্য কর ছাড়ের সুবিধা বাতিল করেছে এবং এখানে সর্বোচ্চ কর ৪৭ শতাংশ, যদিও অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। জার্মানিতে এটি ৪৫ শতাংশ।

ইংল্যান্ডের একটি ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর ছাড়ের বিষয়ে দ্য টাইমসকে বলেছেন, ‘দলবদল নিয়ে দর-কষাকষির সময় খেলোয়াড়েরা যখন তাদের নেট আয় জানতে চায়, তখন কর একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি নিশ্চিত কর ছাড় প্রিমিয়ার লিগকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।’

আন্তর্জাতিক দলবদলে খেলোয়াড়দের এজেন্ট হিসেবে কাজ করা সাইফ রুবি বলেছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়দের ইংল্যান্ডে যেতে উৎসাহিত করবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘সম্পদের দিক থেকে প্রিমিয়ার লিগ এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় লিগ।

কর নিয়ে বাড়তি এ উদ্যোগ এই লিগকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে। তবে ফ্রান্স ও ইতালি বিদেশি খেলোয়াড়দের আগ্রহী করতে আরও বেশি সুবিধা দেয়। তারা এখনো খেলোয়াড়দের আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিতে পারে।’

কর কমানোর পর ইতিমধ্যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো বড় তারকাদের বাড়তি আয় নিয়েও শুরু হয়ে গেছে হিসাব-নিকাশ। ফুটবল অর্থনীতির লেখক কিয়েরেন ম্যাগুয়ার হিসাব করে বলেছেন, কর ছাড় রোনালদোকে বছরে বাড়তি ১৩ লাখ পাউন্ড আয়ের সুযোগ করে দেবে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তাঁর সাপ্তাহিক আয় ৪ লাখ পাউন্ড।

তাঁর বিশ্বাস, প্রিমিয়ার লিগ ইতিমধ্যে খেলোয়াড়দের শীর্ষ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। ম্যাগুয়ার আরও যোগ করেন, প্রিমিয়ার লিগ ইতিমধ্যে সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বেশি বেতন দিচ্ছে। কর ছাড় এখানে আলাদা প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

২০১৯-২০ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়েরা সরাসরি ১৪০ কোটি টাকার কর দিয়েছে। একটি গবেষণা বলছে, ছাড়ের পর এই অর্থ সাত কোটি পাউন্ড পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।

ইতালিতে বিদেশি খেলোয়াড়েরা তাঁদের বেতনের প্রথম ৫০ শতাংশের জন্য কর ছাড় পায়, যদি তাঁদের চুক্তি ন্যূনতম দুই বছরের হয়। দেশটিতে সর্বোচ্চ কর ৪৩ শতাংশ।

ফ্রান্সে শীর্ষ বিদেশি তারকারা ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কর দিয়ে থাকেন। স্পেনে কর ৪৩ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে, যেখানে কিছু অঞ্চলে উচ্চ হার রয়েছে। ২ লাখ ৪৬ হাজার পাউন্ডের বেশি আয় হলে জার্মান খেলোয়াড়দের ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়।