শেষ পর্যন্ত জল্পনাই সত্যি হলো। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচের পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম মানিক। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন সহকারী কোচ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আলফাজ আহমেদ। ১০ মার্চ শুরু হবে আলফাজের অধীনে সাদা–কালোর অনুশীলন।
মানিক বনাম টেকনিক্যাল কমিটি—দুই পক্ষই তাকিয়ে ছিল মোহামেডানের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের দিকে। মানিক চাইছিলেন মোহামেডানের কোচ হিসেবে টিকে থাকতে। অন্যদিকে টেকনিক্যাল কমিটি চাইছিল মানিককে সরিয়ে আলফাজ আহমেদকে প্রধান কোচ করতে। শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তাপক্ষই জয়ী।
মোহামেডান ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, ৫ মার্চ গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর সভায় বসেন কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের সঙ্গে। সে বৈঠকে তাঁদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মানিক সভায় তাঁর অবস্থান তুলে ধরেন এবং দাবি করেন, তিনি ব্যর্থ নন। চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংস ছাড়া অন্য সব দলেরই ফল খারাপ। সে তুলনায় এবং শক্তি অনুযায়ী মোহামেডান খুব খারাপ করেছে, তা বলছেন না মানিক। তা ছাড়া এ মৌসুমে স্বাধীনতা কাপে মোহামেডান কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। ফেডারেশন কাপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে।
যা–ই হোক, ৬ মার্চ গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর সভায় বসেন টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে। যে কমিটির প্রধান সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি, সদস্য সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান বাবলু, সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির, জসিম উদ্দিন জোশি, ইলিয়াস হোসেন, রিয়াজ, সংগঠক ফজলুর রহমান বাবলু, আবু হাসান প্রিন্স।
টেকনিক্যাল কমিটি মানিকের কোচিংয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে সরানোর সুপারিশ করে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে। কেন এমন সিদ্ধান্ত, জানতে চাইলে টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য হাসানুজ্জামান বাবলু আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল গঠনের পর কোচ বলেছিলেন, লিগ শিরোপায় লড়াই দেবেন। কিন্তু এখন তো উল্টো রেলিগেশন ফাইটে আছে মোহামেডান (আসলে তা নয়)। ফল মোটেও ভালো নয়। তাই টেকনিক্যাল কমিটির পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে আলফাজকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয় চেয়ারম্যানের কাছে। আমরা মনে করেছি, কোচকে দায়িত্ব নিতে হবে। এর ফলে কোপটা তাঁর ওপর দিয়েই গেছে।’
চেয়ারম্যান সবার সঙ্গে কথা বলে কোচ বদলের পথেই হেঁটেছেন। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করলে মানিক সরাসরি কেনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, ‘আমি চেয়াম্যানকে আমার অবস্থান জানিয়েছি। আমি মনে করি না, আমি ব্যর্থ। এখন সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যানের।’ তবে মানিক চেয়ারম্যানকে এ–ও বলেন, যেভাবে তাঁর বিরোধিতা করা হয়েছে ক্লাবের ভেতর থেকে, এভাবে তিনি কাজ করতে পারবেন না।
টেকনিক্যাল কমিটি যাঁর ওপর আস্থা রেখেছে, সেই আলফাজ দায়িত্ব পেয়ে খুশি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমাকে কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ১০ তারিখ থেকে অনুশীলন শুরু করব। এ বছর মোহামেডান আর কোচ নেবে না বলা হয়েছে আমাকে। গোলকিপার কোচ কানন ভাইকে (ছাইদ হাসান কানন) নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে আমাকে।’
এর আগে অস্ট্রেলিয়ান কোচ শন লেনের অনুপস্থিতিতে ২০২১ সালে লিগে তিন ম্যাচে মোহামেডানের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন আলফাজ। তিনটি ম্যাচেই এসেছে জয়। ২০১৯ সালে উত্তর বারিধারার প্রধান কোচ ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার। এবার কী লক্ষ্য? ‘গত লিগে মোহামেডান পাঁচে ছিল। এবার চাই, তিনে থাকতে।’ একটু যেন কঠিন চ্যালেঞ্জই নিয়ে ফেললেন আলফাজ?
এএফসি এ লাইসেন্সধারী কোচ আলফাজ বলছেন, ‘সব কোচেরই লক্ষ্য আস্তে আস্তে ওপরে ওঠা। আমিও চাই সামনে যেতে। তাই দায়িত্বটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’ মোহামেডানে দুই মেয়াদে আট বছর খেলেছেন। তারপর কোচ হিসেবে সাদা–কালোয় এসেছেন। পারবেন মানিকের জুতায় পা গলিয়ে মোহামেডানের মতো সাদামাটা একটা দলের কোচ হিসেবে সফল হতে?