গোলরক্ষক রুপনা চাকমার একটা ‘বাজে অভ্যাস’ ছিল। ডিফেন্ডারদের ওপর আস্থা রাখতে পারতেন না। হুটহাট করেই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসতেন। আর এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ভুগতে হতো বাংলাদেশ দলকে। অথচ সেই রুপনাই বদলে যান গত সেপ্টেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত মেয়েদের সাফে। বক্সের মধ্যে বল ধরবেন কি ধরবেন না, সেটা নিয়ে একসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতেন। কিন্তু কাঠমান্ডুতে পোস্টের নিচে প্রতিটি ম্যাচেই ছিলেন শান্ত। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেছেন। কখনো ফিস্ট করে বল বিপদমুক্ত করেছেন, কখনো জায়গায় দাঁড়িয়ে লাফিয়ে বল লুফে নিয়েছেন। যার ফলে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের জালে ২৩ গোল দিলেও হজম করেছে মাত্র একটি! ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো রুপনা জেতেন সাফে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার।
এবার ঢাকায় চলমান অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও পোস্টের নিচে যথারীতি ‘দেয়াল’ রুপনা। গতকাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট একচেটিয়া আধিপত্য ছিল ভারতীয় মেয়েদের। প্রতিবারই দারুণ দক্ষতায় বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন রুপনা। ম্যাচের সাত মিনিটে সুমিতা কুমারী একা বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে সুমিতা শট নেন দূরের পোস্টে। কিন্তু রুপনা পা বাড়িয়ে দিয়ে সেই শট ঠেকিয়ে দেন দারুণ দক্ষতায়।
রুপনার এমন সেভ মনে করিয়ে দিয়েছে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সেই সেভ। গত ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে আর্জেন্টিনার বক্সে গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে একা পেয়ে যান কোলো মুয়ানি। সেই সময় মুয়ানির নেওয়া শট অবিশ্বাস্যভাবে ঠেকিয়ে দেন মার্তিনেজ। যেটিকে অনেকেই বলছেন বিশ্বকাপের সেরা সেভ।
একইভাবে ভারতের সুমিতার শটও ঠেকিয়ে দেন রুপনা। ম্যাচ শেষে তো রুপনার প্রশংসা করলেন ভারতের কোচ ময়মল রকি, ‘সে আসলেই দারুণ কিছু সেভ করেছে, যে কারণে আমরা এই ম্যাচটা জিততে পারিনি। আমি নিশ্চিত সবাই তার সেভগুলো দেখেছে এবং যদি সে ওই সেভগুলো না করত তাহলে আমরা এগিয়ে থাকতাম।’
আজ সকালে বাফুফে ভবনের জিমনেসিয়াম থেকে অনুশীলন শেষে বেরিয়ে মুঠোফোনে নিজের সেভ করার ছবি দেখছিলেন রুপনা। অনুশীলনে এমন সেভ অনেকবারই করেছেন বলে জানালেন তিনি, ‘এগুলো আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। প্র্যাকটিসে এমন অনেক সেভ করেছি। আসলে যখন বল আসে তখন ডিফেন্স ভাঙার পর আমার ওপরই সব ভরসা থাকে দলের। জানি বল এলে আমাকে সেভ দিতেই হবে। আমার দায়িত্ব যা ছিল, সেটা পালন করেছি মাঠে।’
ম্যাচের শুরুর দিকে একটু স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন বলেই জানালেন তিনি, ‘আসলে আমাদের ওপর চাপ বেশি ছিল না। প্রথমে একটু নার্ভাস লাগছিল আমার। তবে ২-৩টা বল ধরার পর সাহস বেড়ে যায়।’
বিশ্বকাপের ফাইনালটা রুপনা দেখেছিলেন বসুন্ধরা কিংস ক্লাবে বসে। মার্তিনেজের মতোই কাল নিজের পজিশনটা ঠিক ছিল বলেই এভাবে সেভ করতে পেরেছিলেন গোলটি, ‘সেদিন মার্তিনেজের পজিশন ভালো ছিল বলে সেভ দিতে পেরেছে। আমারও কাল একই রকম পজিশন ছিল।’ নিজে ব্রাজিলের গোলরক্ষক আলিসন বেকারের ভক্ত। কিন্তু মার্তিনেজের সেই ভিডিও ইউটিউবে বেশ কয়েকবার দেখেছেন।
কালকের ম্যাচের রুপনার পারফরম্যান্সে খুশি কোচ গোলাম রব্বানী ও সতীর্থরা। সবার প্রশংসা পেয়ে দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে রুপনার, ‘আমি যদি ভালো কিছু সেভ দিতে পারি, নিজের কাছেই ভালো লাগবে। স্যারেরা বলেছেন, তুমি আজ ভালো খেলেছ। রুমে আসার পর অনেকে বলেছে, রুপনা আপা আপনি আজ সেভ না দিলে ম্যাচ ড্র হতো না। এখন ভুটানের বিপক্ষেও এভাবে খেলতে চাই। জিতেই ফাইনালে উঠতে চাই।’
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি খেলবে আগামীকাল। প্রতিপক্ষ ভুটান। এরই মধ্যে ২ ম্যাচে ১ জয় ও ১ ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট বাংলাদেশের। ভুটানের বিপক্ষে তাই ড্র করলেই ফাইনালে উঠবেন রুপনারা।