তিন বছর আগে কোপা আমেরিকা দিয়েই শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার অনবদ্য যাত্রাটা। কোপা জয়ের পর ফিনালিসিমা এবং পরবর্তী সময়ে বহু আরাধ্যের বিশ্বকাপ ট্রফিও ঘরে তোলে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এবার সেই মেসির হাত ধরেই আরও একটি কোপার ফাইনালে পৌঁছে গেছে আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে কানাডাকে ২–০ গোলে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
আর্জেন্টিনার জয়ে গোল করে ব্যক্তিগত মাইলফলকের নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন মেসি। এর মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলে ইরানের আলী দাইয়িকে ছাড়িয়ে দুই উঠে এসেছেন মেসি।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির গোল এখন ১০৯টি। চূড়ায় ওঠার পথে মেসির সামনে এখন একমাত্র বাধা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলে যাঁর গোল সংখ্যা ১৩০টি। প্রশ্ন হচ্ছে, রোনালদোর এই গোলের চূড়াকে মেসি কি শেষ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারবেন?
জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে মেসির আর নতুন কিছু পাওয়ার নেই। গত তিন বছর চাওয়া–পাওয়ার সব আক্ষেপ মিটিয়ে ফেলেছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। মেসি নিজেও একাধিকবার বলেছেন, ফুটবল থেকে তাঁর আর কিছু পাওয়ার নেই। ব্যক্তিগত গোলের মাইলফলক অর্জনেও নিশ্চয় মেসির বিশেষ কোনো ভাবনা নেই। তবে ভক্তরা নিশ্চয় টালি খাতা বের করে গোলের হিসাব কষছেন।
আর মাত্র ২১ গোল হলে স্পর্শ করবেন রোনালদোকে। আর ২২ গোল পেলে ছাড়িয়ে যাবেন ‘সিআর সেভেন’কেও। এখানে মনে রাখা ভালো যে রোনালদো এখনো অবসরে যাননি। উড়িয়ে দেননি ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও। ফলে রোনালদো যে ১৩০ গোলেই থেমে যাবেন, তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে রোনালদো যদি আর কোনো গোল না–ও পান, তবু কাজটা মেসির জন্য মোটেই সহজ নয়।
২১ বা ২২ গোলের সংখ্যাটা মেসির নামের পাশে যতই সামান্য মনে হোক, বাস্তবতা কিন্তু ভিন্নই। গত মাসেই ৩৭তম জন্মদিন পালন করেছেন মেসি। এরই মধ্যে কোপাকে নিজের ‘শেষ লড়াই’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে মেসি যদি শেষ পর্যন্ত ২০২৬ পর্যন্ত থেকেও যান, তবু কাজটা সহজ হবে না। এবারের কোপার কথাই ধরা যাক।
সেমিফাইনাল পর্যন্ত মেসি গোল করেছেন শুধু ১টি। তবে মেসির ছন্দে থাকার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা থাকবে তাঁর চোট নিয়ে। বিশ্বকাপের পর বয়সের ছাপ পড়েছে মেসির শরীরে। প্রায় নিয়মিত বিরতিতেই চোটে পড়ছেন। এখন কোপার পরে খেলা চালিয়ে গেলেও আর্জেন্টিনার হয়ে প্রীতি ম্যাচ ও অগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে মেসি হয়তো বাইরেই থাকবেন।
আর মাঠেও মেসি যত না গোলের জন্য খেলবেন, তার চেয়ে বেশি তাঁর ভূমিকা থাকবে খেলার সুর তৈরির। ফলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো ছাড়া মেসিকে দেখার সুযোগ সামান্য। এরপর মেসি যদি আর্জেন্টিনার সঙ্গে ২০২৬ বিশ্বকাপে যানও, তাঁকে হয়তো আগের বিশ্বকাপের মতো সবকিছুর কেন্দ্রে রাখা হবে না। স্কালোনি নিশ্চিতভাবেই মেসিকে আলাদাভাবে সময়–ব্যবস্থাপনা করে খেলাবেন।
আর এমন নিয়ন্ত্রিতভাবে মাঠে নেমে রোনালদোর সঙ্গে ব্যবধান ঘোচানো একটু কঠিনই হবে মেসির জন্য। তবে মেসি যদি বিশ্বকাপের আগেই বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানেন, তবে ব্যক্তিগত এ মাইলফলের লড়াইয়ে রোনালদোর চেয়ে বেশি পিছিয়ে থেকেই বিদায় নিতে হবে ‘এলএম টেন’কে। তবে নামটা যেহেতু মেসি, তাই এখনই ইতি টেনে দেওয়া বোকামি। চূড়ান্ত উত্তরটা তাই সময়ের হাতেই তোলা থাক। নামটা যেহেতু মেসি, অসম্ভব যে কিছুই নয়, তা তো প্রমাণিত!