কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছিল না সুইজারল্যান্ডের রক্ষণ। একের পর এক আক্রমণ ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল গোলমুখে এসে। সুযোগও নষ্ট হচ্ছিল। সেই সঙ্গে ব্রাজিলের খেলাও যেন কিছুটা ছন্দ হারিয়েছিল। মাঝেমধ্যে তো শঙ্কাও পেয়ে বসছিল, সুইসরা না আবার গোল করে বসে! এমনিতেই নেইমার নেই। রক্ষণে নেই দানিলো। ৯৭৪ স্টেডিয়ামে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানো যাবে তো শেষ পর্যন্ত!
দ্বিতীয়ার্ধে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সুইজারল্যান্ডের গোলমুখ খোলা গেল শেষ পর্যন্ত। ভিনিসিয়ুস জুনিয়ার আপাত চমৎকার একটি গোল করলেন। কিন্তু বাঁধ সাধল ভিএআর প্রযুক্তি, আগের ম্যাচে দুর্দান্ত দুটি গোল করে সমর্থকদের মন জয় করে নেওয়া রিচার্লিসনের একটা ছোট্ট ভুলে সেই গোলটিও বাতিল হয়ে গেল। ওই মুহূর্তে ব্রাজিল সমর্থকদের দিকে ঠিক তাকানো যাচ্ছিল না। এমনিতেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে আজকের আগ পর্যন্ত কখনোই জেতেনি ব্রাজিল। ১৯৫০ বিশ্বকাপে প্রথম দেখায় ২-২ গোলে ড্র, এরপর বহু বছর পর রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে আবার ১-১ অমীমাংসা। নাহ্! সুইজারল্যান্ড ব্রাজিলের জন্য দুঃখ হয়েই বোধ হয় থেকে যাচ্ছে। এমন যখন অবস্থা, তখন ত্রাতার ভূমিকায় এ মৌসুমেই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নাম লেখানো মিডফিল্ডার কাসেমিরো।
তিতের ব্রাজিল দলে দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত সেনানী কাসেমিরো। সুইজারল্যান্ড ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ‘আগুন’ নিয়ে হাজির হলেন। তাঁর আগুনে (পড়ুন গোল) ভস্ম ৮২ মিনিট ধরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সুইজারল্যান্ড। কাসেমিরোর চমৎকার এক গোলেই ভাগ্য নির্ধারিত ব্রাজিলের। এবার আর অতীত পেছন থেকে খামচে ধরছে না। বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সুইজারল্যান্ড-গেরো খুলে গেল কাসেমিরোর ওই এক গোলেই।
‘আমার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য দলকে সাহায্য করা। যেখানে, যেভাবে প্রয়োজন। তবে এটা ঠিক যদি গোলে একটা শট নিয়ে, গোল করে সেই প্রয়োজন মেটাতে পারি, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।’সুইজারল্যান্ডকে হারানোর পর ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কাসেমিরো
দলকে জিতিয়ে স্বাভাবিক উচ্ছ্বাসটা কাসেমিরোর মধ্যে থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে তিনি ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজেকে কিছুটা আড়াল করেই রাখলেন। নিজের দিকে সব কৃতিত্ব টেনে নেওয়ার কাজটা করলেন না। শান্তমুখে বললেন, দল জিতেছে, এটাই বড় কথা। তাঁর গোল দলের কাজে এসেছে এটাই তাঁর জন্য তৃপ্তির, ‘গোল করার চেয়েও বড় কথা, আমার প্রধানতম লক্ষ্য হচ্ছে দলের কাজে আসা। দলকে সাহায্য করা। আমরা যখন জিতি, তখন দলের প্রতিটি সদস্যই জেতে। গোটা দল জেতে। আমরা যখন হারি, তখন সকলে মিলেই হারি।’
৩০ বছর বয়সী কাসেমিরোর গোলে ব্রাজিল বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছে। তবে কাসেমিরো নিজে খুশি গোল করে দলের এই জয়ে অবদান রেখে, ‘আমার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য দলকে সাহায্য করা। যেখানে, যেভাবে প্রয়োজন। তবে এটা ঠিক যদি গোলে একটা শট নিয়ে, গোল করে সেই প্রয়োজন মেটাতে পারি, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।’
নেইমার চোট পেয়ে আজ খেলতে পারেননি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটাও খেলতে পারবেন না। তবে ব্রাজিলের জয়ের পর নেইমারকে ঠিকই পাওয়া গেছে টুইটারে। তিনি কাসেমিরোকে নিয়ে টুইট করে লিখেছেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরেই কাসেমিরো বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার।’
কোচ তিতেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল নেইমারের এই টুইটের সঙ্গে তিনি একমত কি না! কোচ একটু ঘুরিয়ে উত্তরটা দিয়েছেন, ‘আমি সাধারণত অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিই। সাধারণত এসব ব্যাপারে আমি মন্তব্য করা থেকে দূরে থাকি। কিন্তু আজ করব। হ্যাঁ, নেইমারের এই মূল্যায়নের সঙ্গে আমি একমত।’