১৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। গোপালগঞ্জে আজ টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে সাদাকালোরা ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে পরাক্রমশালী বসুন্ধরা কিংসকে।
২০০৯ সালে ফেডারেশন কাপে সর্বশেষ ফাইনালে খেলেছিল মোহামেডান। সেটি ছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে। গোলশূন্য সেই ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে জেতে মোহামেডান। এরপর পেরিয়ে গেছে লম্বা সময়। মোহামেডান বলতে গেলে হারিয়েই যেতে বসেছিল মাঝখানে। সেই মোহামেডানই ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘরোয়া ফুটবলের একটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিল। সাদাকালো সমর্থকদের জন্য আজকের দিনটা আনন্দের। আর ক্লাব হিসেবে মোহামেডানের জন্য তো রীতিমতো পূর্নজন্মের মতোই।
এমনিতে বসুন্ধরা কিংস মাঠে নামলে জয়টাই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়, সেই কিংসই কি না আজ ধরাশায়ী হয়ে গেল মোহামেডানের সামনে! প্রথমবার পিছিয়ে পড়ে কিংস ম্যাচে ফিরলেও দ্বিতীয় গোলের পর আর ফিরতে পারেনি। মৌসুমে এই প্রথম কিংস কোনো ম্যাচ হারল।
আজ তৃতীয় মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় মোহামেডান। মেহেদির লম্বা থ্রো উড়ে আসে কিংস বক্সে। তারপর দুজনের পা ঘুরে ইমানুয়েলের পায়ে পড়তেই গোল। ইমানুয়েল সহজেই বল ঠেলেন জালে। কিন্তু কিংসের মতো দলের সঙ্গে এত দ্রুত গোল করে অগ্রগামিতা ধরে রাখা কঠিনই। ৪৩ মিনিটে মোহামেডান সেটা টের পেয়েছে। বক্সের সামনে সাদাকালোর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জায়গা তৈরি করেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজ। বাকি কাজটা একজন পেশাদার স্ট্রাইকারের মতোই করেছেন দরিয়েলতন। বক্সের ওপর থেকে তাঁর কোনাকুনি গড়ানো শটে ১-১। মোহামেডান গোলকিপার সুজন পাননি বলের নাগাল।
দ্বিতীয়ার্ধে উইং ধরে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনায় মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ তিনটি বদল আনেন। মাঠে আসেন উইঙ্গার ইমন ও জাফর ইকবাল। এই পরিকল্পনায় কাজও হয়েছে। গোল পেয়ে গেছে মোহামেডান। ৫৫ মিনিটে কিংসের এলোমেলো রক্ষণে সুযোগ নিয়েছে মোহামেডান। ইমানুয়েলের পাসে গোল করেন সোলেমান দিয়াবাতে। কিংস ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ চেষ্টা করেছিলেন দিয়াবাতেকে আটকাতে। কিন্তু পারেননি।
২০১৮ সালে শীর্ষ ফুটবলে আসার পর ফেডারেশন কাপ তিনবার খেলে দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কিংস। প্রথম ফাইনালে আবাহনী কাছে হারলেও পরের দুটি ফাইনালে কিংস জিতেছে রহমতগঞ্জ ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে। সর্বশেষ ফেডারেশন কাপে অবশ্য খেলেনি কিংস। কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল তৎকালীন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
এক মৌসুম পর টুর্নামেন্টের ফিরে এবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে লাল জার্সিধারীরা। শীর্ষ ফুটবলে আসার পর এই প্রথম ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ বসুন্ধরা কিংস। কিংসের এমন বিদায়ের পেছনে বড় কারণ, কিংসের মাঝমাঠে ছিলেন না ব্রাজিলিয়ান রবসন দা সিলভা। রবসন ডিফেন্স চেরা পাস দেন, গোল তৈরি করেন। গোল করেনও। কিন্তু চোটের কারণে তাঁর অনুপস্থিতি কিংসের খেলায় প্রভাব ফেলেছে। চোটের কারণে ছিলেন না মতিন মিয়াও। ফলে আক্রমণে অনেকটাই শক্তি হারিয়েছে কিংস। কিন্তু তারপরও কিংসের যা শক্তি তাতে মোহামেডানে বিপক্ষে তারাই ছিল ফেবারিট।
কাগজ-কলমের সেই হিসাব পাল্টে মোহামেডান আজ দারুণ এক জয় পেয়েছে। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে তারা সামনে পাবে আগামী মঙ্গলবার আবাহনী-শেখ রাসেল ম্যাচের জয়ী দলকে।