চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে লিগ রানার্সআপ হয়ে মৌসুম শেষ করেছে মোহামেডান
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে লিগ রানার্সআপ হয়ে মৌসুম শেষ করেছে মোহামেডান

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল

আবাহনীকে হারিয়েই শেষটা রাঙাল মোহামেডান

ফেডারেশন কাপ ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরে যাওয়ার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের আরও একটি বড় ম্যাচ। প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে এ লড়াই ছিল লিগ রানার্সআপ নির্ধারণী। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে শেষ হাসি মোহামেডানেরই। আবাহনীকে ২–১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রানার্সআপ হয়েছে তারাই।

এ মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস লিগ জিতে নিয়েছে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই। কিংস যে লিগ জিতবে, সেটি বোঝা যাচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। মোহামেডানও লিগের পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানটি ধরে রেখেছিল আগাগোড়াই। কিংসকে প্রথম লেগে হারানোয় সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদও চড়েছিল। কিংসের কাঁধে এক সময় গরম নিঃশ্বাস ফেললেও সেটি ধরে রাখতে পারেনি সাদা–কালোরা।

বেশ কয়েকটি ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে লিগের শিরোপা দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে মোহামেডান। ফিরতি লেগে কিংসের কাছে হার আর রহমতগঞ্জের সঙ্গে ড্র করে রানার্সআপ হওয়ার দৌড়টাকেও কিছুটা কঠিন করে ফেলেছিল আলফাজ আহমেদের দল। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকার সুবিধাটা অবশ্য ছিল। আজ আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকলেই রানার্সআপ নিশ্চিত হতো মোহামেডানের। তবে শেষ পর্যন্ত আবাহনীকে হারিয়েই লিগে দ্বিতীয় হয়েছে তারা।

এ মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ, প্রিমিয়ার লিগ—রানার্সআপ হওয়ার ‘ট্রেবল’টা মোহামেডানেরই। কিংসের পর মৌসুমের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবেও নিজেদের প্রমাণ করেছে তারা।

লিগের রানার্সআপ ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বসিত মোহামেডান

আবাহনীকে এবারের মৌসুমে দুই বার হারিয়েছে মোহামেডান। এটা তাদের জন্য বড় তৃপ্তিরই। লিগের প্রথম লেগে ২–০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচটা মোহামেডান ড্র করেছিল ২–২ গোলে। ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্বে আবাহনীকে ২–১ গোলে হারানোর পর, লিগের শেষ ম্যাচেও আবাহনীকে একই ব্যবধানে হারাল মোহামেডান। স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপের ফাইনালে দুইবারই তারা কিংসের কাছে হেরেছে ১–০ গোলে এগিয়ে গিয়ে। এ মৌসুমে অল্প বাজেটের দল নিয়েও এমন পারফরম্যান্সে মোহামেডান উজ্জীবিত হতেই পারে। পরের মৌসুমে ভালো কিছু করার রসদটাও নিতে পারে এখান থেকেই।

আজ গোপালগঞ্জে আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচটা ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। দ্বৈরথের আবহটা আঁচ করা যাচ্ছিল ভালোভাবে। আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণে খেলা জমেও ছিল দারুণ। ১৩ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে হেডে গোল করে আবাহনীকে ১–০ গোলে এগিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ব্রুনো রোচা। তবে মোহামেডান হতোদ্যম হয়নি। ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৮ মিনিটেই ম্যাচে সমতা ফেরায় তারা।

এগিয়ে গিয়েও মোহামেডানের সঙ্গে পেরে ওঠেনি আবাহনী

উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফরভের কর্নার থেকে আবাহনীর বক্সে তৈরি জটলার সুযোগটা নেন আরিফ হোসেন। আবাহনীর ডিফেন্ডাররা বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে বাঁ পায়ের শটে গোলকিপার শহীদুল আলম সোহেলকে পরাস্ত করেন আরিফ। মোহামেডানে এ মৌসুমে দুর্দান্ত খেলেছেন আরিফ। দেশি ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম সেরাই বলা চলে তাঁকে।

১–১ সমতায় খেলা গড়িয়েছে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে। আবাহনীও এই সময় গোলের সুযোগ তৈরি করেছে, একাধিক সুযোগ পেয়েছে মোহামেডানও। আবাহনীর এনামুল ইসলাম গাজীর শট গোললাইন থেকে ফেরান মোহামেডানের হাসান মুরাদ। মোহামেডানের পোস্টে অবিচল ছিলেন গোলকিপার হোসেন সুজন। মোহামেডানের রক্ষণভাগও ছিল আঁটসাট। আবাহনীর জোনাথন ফার্নান্দেজ, কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট, ব্রুনো রোচা, জামাল ভূঁইয়ারাও আক্রমণে উঠে গোলের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মোহামেডানের রক্ষণের সামনে আটকে গেছেন।

একই চিত্র উল্টো দিকেও। সোলেমান দিয়াবাতে, ইমানুয়েল সানডে, মোজাফফরভ, শাহরিয়ার ইমনরাও দারুণ খেলেছেন। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে আবাহনীর রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে গোলও করেছিলেন সোলেমান দিয়াবাতে। কিন্তু রেফারি সেই গোল বাতিল করে দেন অফসাইডের কারণে। সহকারী রেফারি অবশ্য অফ সাইডের পতাকা তোলেননি।

ম্যাচজুড়ে দারুণ খেলেছেন মোহামেডানের উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভ

মোহামেডানের উৎসব তখন অবশ্য থমকে গিয়েছিল। তবে ৯০ মিনিটে মোহামেডানকে আবারও উল্লাসে মাতান আরিফ হোসেন। আবাহনীর বক্সের বাইরে থেকে মোজাফফরভের ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে আরিফ ক্রস করেছিলেন। সেই বলটিই ফার্স্ট বারে লেগে আবাহনীর গোলকিপার শহীদুল আলম সোহেলকে বোকা বানায়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ২০১৯ সালের পর আবাহনীকে প্রথমবার হারাল মোহামেডান। নির্দিষ্ট করে বললে ৮ ম্যাচ পর। পেশাদার লিগে এখনো পর্যন্ত ৩২ বার দুই দল মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে জয়ের পাল্লা ভারী আবাহনীরই। তারা জিতেছে ১৪ ম্যাচ, মোহামেডান ৬ ম্যাচ। বাকি ১২ ম্যাচ হয়েছে ড্র।

মোহামেডান ফুটবলারদের গলায় মেডেল পরিয়ে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা

২০০৭ সালে বাংলাদেশে পেশাদার লিগ শুরু হওয়ার পর মোহামেডান এখনো শিরোপা জেতেনি। এবার নিয়ে দলটি চতুর্থবারের মতো রানার্সআপ হলো। ২০০৭, ২০০৮–০৯ ও ২০০৯–১০ মৌসুমের পর এবার ১৪ বছর পর লিগের রানার্সআপ মোহামেডান।

এবারের লিগের শেষটা মোহামেডানের জন্য তৃপ্তির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারানোর কারণেই।