সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখনো বুঁদ মিগুয়েল ফেরেইরার গোলটিতে। এএফসি কাপে মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিপক্ষে বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচটি রোমাঞ্চকর এক সন্ধ্যা উপহার দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের।
ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা কিংস শেষ পর্যন্ত জিতে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে। কিন্তু সেই জয়ের মূল অনুষঙ্গ ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার মিগুয়েলের ৩০ গজ দূর থেকে করা অবিশ্বাস্য গোলটি। কিংস অ্যারেনায় গতকাল যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা হয়তো চর্মচোখে দেখা অন্যতম সেরা গোলটিই দেখে ফেলেছেন।
মিগুয়েল নিজে কী ভাবছেন! এমন গোল তো আর বলে-কয়ে করা যায় না! প্রায় সাইড লাইনের কাছে বল পেয়ে সেটি প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে পাঠানোর চেষ্টা করাটাও সাহসের ব্যাপার। ওই জায়গা থেকে সাধারণত যেকোনো খেলোয়াড়ই সতীর্থকে বল বাড়াতে চাইবেন। নিদেনপক্ষে একটু এগিয়ে গিয়ে গোলমুখে ক্রস।
ব্রাজিলিয়ান মিগুয়েল এর কোনোটাই করেননি। তুলে মেরেছেন পোস্ট বরাবর। কিন্তু কাল ওই গোল করেও মিগুয়েল ছিলেন আশ্চর্য রকম নির্লিপ্ত। ম্যাচের শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি আমার দায়িত্বটা পালন করেছি মাত্র। আমার সতীর্থরা দারুণ খেলেছে এ ম্যাচে।’
কিন্তু এমন কথায় তো আর সংবাদমাধ্যমের তৃপ্তি আসে না। সত্যি সত্যি মিগুয়েল গোলটি নিয়ে কী ভাবছেন, সেটি জানাটা জরুরি ছিল। কিংসের ব্রাজিলিয়ান এই তারকা অবশেষে প্রথম আলোকে বলেছেন নিজের একেবারে ভেতরের অনুভূতিটা, ‘জীবনের সেরা গোলটা করেছি। এমন গোল আমি আগে করেছি বলে মনে পড়ছে না। আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা ও সুন্দর গোলটি কাল করেছি আমি।’
কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন ম্যাচের পরপরই মিগুয়েলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন গোলটি নিয়ে। তিনি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন ৩০ গজ দূর থেকে ওই শট যে মিগুয়েল নিলেন, তার পেছনে কী ভাবনা কাজ করেছিল তাঁর মধ্যে। বেশ অদ্ভুত উত্তরই পেয়েছেন। মিগুয়েল নাকি ওই শট নিয়েছিলে পুরোপুরি ভেতর থেকে আসা এক বিশ্বাস থেকে।
আঁচটা তিনি মুহূর্তের মধ্যেই করে ফেলেছিলেন। মাজিয়ার গোলকিপার হুসেইন শরিফ একটু সামনে বেরিয়ে ছিলেন। একঝলক পোস্টের দিকে তাকিয়েই মিগুয়েল সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেন। তিনি হিসাব করেই শটটা পোস্টে রেখেছিলেন। শটটা ছিল একটু বাঁক খাওয়ানো। ব্রাজিলিয়ান তারকার মুখ থেকে ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা বের করা যায়নি। কিন্তু বোঝা যায়, শটটা তিনি আন্দাজে মারেননি। ভেবেচিন্তে গোলের লক্ষ্যেই মেরেছিলেন। মিগুয়েলের কথা, ‘বলটা পেয়ে আমার ওই সময় মনে হয়েছিল, আমি গোলটা করতে পারব। ভালো লাগছে গোলটা হয়েছে, দল জিতেছে। আনন্দময় একটা মুহূর্ত। তবে গোলটি করতে গিয়ে আমি আমার সামর্থ্যের ওপরই আস্থা রেখেছিলাম।’
গতকাল মাজিয়ার বিপক্ষে জয়টা কিংসের জন্য মধুর নানা কারণেই। দলের অন্যতম সেরা দুই তারকাকে পাওয়া যায়নি চোটের কারণে। ব্রাজিলিয়ান রবসন দা সিলভা ও আইভরি কোস্টের চার্লস দিদিয়ের না থাকার প্রভাবটা ছিল নেতিবাচক।
প্রথমার্ধে পুরো দল ছিল এলোমেলো। ১১ মিনিটে গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণের ভুল পাসে গোল খেয়ে দল একেবারেই মুষড়ে পড়েছিল। কিন্তু সেই দলটিই শেষ পর্যন্ত জয়ী। ৮০ মিনিটে উজবেকিস্তানের ডিফেন্ডার বাবুরবেক ইউলদাশোভ আর ৮৮ মিনিটে মিগুয়েলের সেই অনন্য গোল। মাজিয়ার বিপক্ষে জিতে এএফসি কাপের ‘ডি’ গ্রুপে এখন ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে কিংসই। কাল অন্য ম্যাচে মোহনবাগান ওডিশা এফসির কাছে ৫-২ গোলে হেরে নিজেদের বিদায় নিশ্চিত করেছে। কিংস ওডিশার বিপক্ষে আগামী ১১ ডিসেম্বর ভুবনেশ্বরের শেষ ম্যাচটি জিতলে কিংবা ড্র করলেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করছে আন্ত–আঞ্চলিক সেমিফাইনাল।
মিগুয়েল কাল দিদিয়ের আর রবসনকে খুব মিস করেছেন বলেই জানিয়েছেন, ‘রবসন আর দিদিয়ের দুজনকেই মিস করেছি মাঠে। ওরা দুজন আমাদের সেরা দুই ফুটবলার। ওডিশার বিপক্ষে পরের ম্যাচটিতে জীবনের সেরা খেলাটি খেলতে চাই। আমি মুখিয়ে আছি সেই ম্যাচের জন্য।’