ম্যাচের ৪২ মিনিটে বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দরিয়েলতন গোমেজ লাল কার্ড দেখলেন। রবসন দা সিলভার একটি কর্নার শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ডি বক্সের মধ্যে উড়ে এলে হেড করতে লাফিয়েছিলেন দরিয়েলতন ও শেখ রাসেলের ডিফেন্ডার গ্যানিউ আতান্দা। ওই সময়ই দরিয়েলতন আতান্দার শরীরে পা চালিয়েছিলেন বলেই অভিযোগ।
রেফারি ভুবনমোহন তরফদার তাঁর সহকারী রেফারিদের সঙ্গে আলোচনা করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন কিংসের ব্রাজিল তারকাকে লাল কার্ড দেখানোর। কিংস অ্যারেনায় ছড়াল উত্তেজনা। দরিয়েলতন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।
বসুন্ধরা কিংস ১০ জনে পরিণত হওয়ার সুযোগটা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই নিয়েছিল শেখ রাসেল। জাপানি ফরোয়ার্ড কোদাই ইদার দারুণ এক গোলে এগিয়েও গিয়েছিল তারা। প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকায় বেশ বড় ব্যবধানেই শীর্ষে থাকা কিংসের সামনে শঙ্কা ছিল আরও একটি হারের। ৬৭ মিনিট পর্যন্ত গোলের জন্য মরিয়া কিংস শেষ পর্যন্ত হার এড়াতে পেরেছে রাকিব হোসেনের গোলে। ১–১ গোলে ড্র হওয়া এই ম্যাচ আজ অস্কার ব্রুজোনের দলকে ফেলেছিল কঠিন পরীক্ষার মধ্যেই।
ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচ শেষ হয়েছে ২–২ গোলে। লিগের দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোহামেডান আর তিনে থাকা আবাহনীর সঙ্গে নিজেদের পয়েন্টের ব্যবধান আরও বাড়ানোর ম্যাচই ছিল আজ কিংসের। কিংস–শেখ রাসেল দুই দলেরই ‘হোম ভেন্যু’ কিংস অ্যারেনা, তাই তুমুল লড়াই হলো ম্যাচে। জাপানি মিডফিল্ডার কোদাই ইদা চোট কাটিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ফলে শেখ রাসেল বেশ উজ্জীবিতই ছিল।
৪২ মিনিট পর্যন্ত আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচে কিংস বিপাকে পড়ে দরিয়েলতনের ওই লাল কার্ডেই। তবে যে দলে রবসন, মিগুয়েল ফেরেইরাদের মতো ফুটবলার আছেন, সে দল ১০ জনে পরিণত হলেও আক্রমণ জারি রাখে। শেখ রাসেল ১–০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বিরতি থেকে ফিরে। রবসনের একটা ভুল থেকে বল পেয়ে সুমন রেজা সেটি বক্সের মধ্যে বাড়িয়ে দেন কোদাই ইদার দিকে। জাপানি ফরোয়ার্ড এক পা দিয়ে বলটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অন্য পায়ের শটে পরাস্ত করেন গোলকিপার আনিসুর রহমানকে।
কিংস ম্যাচে ফিরতে পারত আগেই। ৫৬ মিনিটে সাদউদ্দিনের দারুণ একটি ক্রসে বক্সের মধ্যে কেউই পা লাগাতে পারেননি। ৫৮ মিনিটে পেছন থেকে পাওয়া একটি বল বুক দিয়ে নামিয়ে মিগুয়েল শট নেওয়ার মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গ্যানিউ আতান্দা। এরপর মিগুয়েলের কর্নার থেকে বাবুরবেক ইউলদাশোভের হেড আটকে দেন শেখ রাসেলের গোলকিপার মিতুল মারমা।
শেখ রাসেল অবশ্য ১–০ গোলে এগিয়ে গিয়ে শুধু রক্ষণেই সীমাবদ্ধ রাখেনি নিজেদের। সংখ্যার ভারসাম্যের সুবিধা নিয়ে আক্রমণেও উঠেছে। কিন্তু সেই আক্রমণগুলো ছিল বেশ অগোছালোই। ৬৭ মিনিটে সমতা ফেরায় কিংস। তবে এর আগের ৪–৫ মিনিট একের পর এক আক্রমণে শেখ রাসেলের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল অস্কার ব্রুজোনের দল। রবসন, মিগুয়েল, বাবুরবেকই শুধু নন, রাকিব, সাদ, বিশ্বনাথ, রফিকুলরা পাসের পর পাস খেলে শেখ রাসেলের রক্ষণের ফাঁকফোকর বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখেন রাকিব। বক্সের ঠিক বাইরে রবসনের এক ব্যাকহিলে বল পেয়ে মিগুয়েল সোজা পোস্টে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু গোলকিপার মিতুল মারমা সেই বলটি ঠেকালেও ঠিকমতো ধরতে পারেননি। বল পেয়ে যান রাকিব। ঠান্ডা মাথায় তিনি তা জালে পাঠিয়ে দেন। লিগে এটি টানা তৃতীয় ম্যাচে গোল। এখন পর্যন্ত ষষ্ঠ গোল। বাংলাদেশি ফুটবলারদের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ।
শেখ রাসেল এরপরও ম্যাচটা জিততে পারত। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে সোলেমানি ল্যান্ড্রি নিজের গতি দিয়ে কিংসের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি গোলকিপার আনিসুর রহমানকে একা পেয়েও ওপর দিয়ে মেরে দেন। এই সুযোগ নষ্ট করার আক্ষেপ সোলেমানি ল্যান্ড্রিকে অনেক দিন পোড়াবে। ম্যাচের সবচেয়ে সেরা সুযোগটিই যে তিনি নষ্ট করেন।