ইতালির ডাগআউটে রবার্তো মানচিনিকে আর দেখা যাবে না
ইতালির ডাগআউটে রবার্তো মানচিনিকে আর দেখা যাবে না

ইতালি কোচ মানচিনির পদত্যাগ

দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন। তাঁর অধীনেই ইতালিয়ান ফুটবলে হয় পুনর্জাগরণ। ইতালিকে কাতার বিশ্বকাপে নিতে না পারলেও জেতান ২০২০ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা। টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার বিশ্ব রেকর্ডটাও হয় তাঁর সময়েই। আগামী বছর জার্মানিতে অনুষ্ঠেয় ইউরোয় শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে যখন তাঁর ওপরই ভরসা রেখেছে ইতালি ফুটবল ফেডারেশন (এফআইজিসি), তখনই এল বড়সড় ধাক্কা।

আচমকা ইতালির প্রধান কোচের পদ ছেড়ে দিলেন রবার্তো মানচিনি। আজ এক বিবৃতিতে মানচিনির পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এফআইজিসি, ‘ফেডারেশন ঘোষণা করছে যে রবার্তো মানচিনির পদত্যাগপত্র গতকাল সন্ধ্যায় গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল, শেষ হলো ২০২৩ নেশনস লিগের চূড়ান্ত পর্ব দিয়ে। এর মধ্যে দিয়ে আজ্জুরিদের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য পাতা বন্ধ হয়ে গেল। ২০২০ ইউরো জয়ের পথে তিনি এমন একটি স্কোয়াড গড়ে তুলেছিলেন, যেটাকে সবাই নিজের দল মনে করতে পারতেন।’

২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি ছিল মানচিনির। পরবর্তী ইউরো শুরু হতে ১০ মাসের কম সময় বাকি। আগামী মাসেই ইউরো বাছাইয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে। এমন সময় দায়িত্ব ছাড়লেন ৫৮ বছর বয়সী কোচ। ফেডারেশন জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়া হবে।

ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘ফুটবল ইতালিয়া’ বলছে, মানচিনির স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন জুভেন্টাস কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি। তুরিনের ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি আছে তাঁর। পারস্পরিক সমঝোতায় সেই চুক্তি বাতিল করে প্রথমবার জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে পারেন তিনি। আর ‘স্কাই ইতালিয়া’র দাবি, মানচিনির জায়গায় ডাগআউটে দেখা যেতে পারে ২০০৬ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ফাবিও ক্যানাভারো অথবা তাঁর সতীর্থ দানিয়েলে দি রসিকে।  

কদিন আগেই বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মানচিনিকে। জাতীয় দলের প্রধান কোচের পাশাপাশি যুব দলের সমন্বয়ক করা হয়েছিল তাঁকে। তরুণ প্রতিভা খুঁজে বের করে আনার এই পদের মধ্য দিয়ে তাঁর ক্ষমতার পরিধিও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মানচিনি সবকিছু থেকেই সরে দাঁড়ালেন।

ইতালির পরবর্তী কোচ হওয়ার দৌড়ে আছেন দুই বিশ্বকাপ জয়ী ফাবিও কানাভারো ও দানিয়েলে দি রসি

মানচিনি ঠিক কী কারণে পদত্যাগ করলেন, সে ব্যাপারে এখনো কিছু জানায়নি ইতালিয়ান ফেডারেশন। তবে ‘ফুটবল ইতালিয়া’র দাবি, মাত্র ৭ মাসের ব্যবধানে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিনিসা মিহাইলোভিচ ও ইতালি দলের সহকর্মী জিয়ানলুকা ভিয়াল্লির মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন মানচিনি। জাতীয় দলকে কোচিং করানোর পাশাপাশি প্রতিভা খুঁজে আনার মতো বিশাল দায়িত্ব হয়তো তাঁর কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইতালিকে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের মূল পর্বে তুলতে ব্যর্থ হন সে সময়ের কোচ জিয়ান পিয়েরো ভেনতুরা। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি দর্শক হয়ে বিশ্বকাপ দেখে ৬০ বছর পর। ব্যর্থতার দায়ে বরখাস্ত করা হয় ভেনতুরাকে। দেশটির ফুটবলে অবসরের হিড়িক পড়ে যায়। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেন জিয়ানলুইজি বুফন (তিনি পরে অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন), দি রসি, আন্দ্রেয়া বারজাল্লির মতো তারকারা।

ইতালিকে ইউরো জেতানোর সুখস্মৃতি আছে মানচিনির

দলের এমন দুঃসময়ে সাড়া দেন মানচিনি। তাঁর অধীনে পাঁচ বছরে ৬১ ম্যাচ খেলেছে ইতালি। জিতেছে ৩৯টি, ড্র করেছে ১৩টি, হেরেছে ৯টি। এ সময়ে ১৩০ গোল করার বিপরীতে তাঁর দল খেয়েছে ৪৯টি। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তাঁর দল।