কাতার বিশ্বকাপ চলাকালে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার ভক্তদের তুমুল সমর্থনের আওয়াজ পৌঁছেছে লিওনেল মেসিদের দেশেও। হাজার মাইল দূর থেকে বিশ্বকাপজুড়ে সমর্থন পেয়ে ব্যাপক খুশি আর্জেন্টিনার জনগণ এবং দেশটির ফুটবল কর্তৃপক্ষ আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)।
এ জন্য আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ দিতে আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের অনারারি কনসাল লিয়ান্দ্রো গাবারদিকে কাল আমন্ত্রণ জানান এএফএ প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়া। সেখানে গাবারদির মাধ্যমে বাংলাদেশের ভক্তদের আর্জেন্টিনা জাতীয় দল ও অ্যাসোসিয়েশনের ধন্যবাদ পৌঁছে দেন এএফএ প্রধান। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ আজ এ খবর জানিয়েছে।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলকে বাংলাদেশে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের এই আগ্রহের কথা এএফএ সভাপতিকে জানিয়েছেন গাবারদি।
এএফএ সভাপতির অফিসে প্রায় ২০ মিনিটের মতো ছিলেন গাবারদি। এএফএর বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বকাপ চলাকালে ‘এশিয়ান দেশটিতে আকাশি-সাদাদের প্রতি উন্মাতাল সমর্থন নিয়ে’ আলোচনা হয় দুই পক্ষে। ‘ক্লারিন’ এএফএর বিবৃতিতে গাবারদির মন্তব্যও প্রকাশ করেছে, ‘বিশ্বকাপ চলাকালে ঢাকা এবং অন্যান্য শহরে ভালোবাসামাখা সমর্থনের জন্য জাতীয় দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ক্লদিও তাপিয়া।’
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দলের প্রতি এই অকুণ্ঠ সমর্থন শুধু মেসিদের দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রচার হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠিও পাঠান।
‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, এতে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের মাটিতে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে দেখার যে আশায় রয়েছে, তা আরও সংহত হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে নাইজেরিয়ার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা জাতীয় দল।
এএফএর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, মেসিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে ভালোবাসা, সেসব নিয়েই কথা বলেছেন গাবারদি, ‘(আর্জেন্টিনা) জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেদের সমর্থন প্রকাশ করেছে এবং উদ্যাপন করেছে।’
আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, যিনি আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, প্যারাগুয়েতেও কূটনৈতিকপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন, গত ১৬ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার সংবাদ সংস্থা ‘তেলাম’কে বলেছেন, ‘আমরা মেসিকে বাংলাদেশে নিতে চাই। আমরা এই চেষ্টা করব। বাংলাদেশে আমরা একটি ম্যাচ আয়োজন করতে চাই। মেসি সেখানে খুব জনপ্রিয়। ফুটবলের কারণে আমরা আর্জেন্টাইনদের ভালোবাসি। তাঁকে আমাদের দেশে পাওয়াটা হবে সম্মানের ব্যাপার।’
আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধনের কথাও বলেছিলেন সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, ‘আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন আছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর আর্জেন্টিনা দ্রুত স্বীকৃতি দিয়েছিল আমাদের।’ ডিয়েগো ম্যারাডোনার কারণে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দল জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন থাকায় ফুটবল (বাংলাদেশে) সব সময়ই জনপ্রিয় ছিল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং কিংবদন্তিতে পরিণত হন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আমার মনে আছে, বাংলাদেশের অনেক মানুষ তখন বিশ্বকাপ দেখেছে।’
‘ক্লারিন’-এর প্রতিবেদনে আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি মাত্র ম্যাচের কথাও স্মরণ করা হয়। সেটি ১৯৮৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপ টুর্নামেন্টে। কুয়ালালামপুরের সেই ম্যাচে অবশ্য আর্জেন্টিনার দলটি জাতীয় দল ছিল না। মারদেকা কাপে তারা ‘বুয়েনস এইরেস একাদশ’ নাম নিয়ে খেলেছিল।
কুয়ালালামপুরের সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনার দলটি বাংলাদেশ জাতীয় দলকে হারিয়েছিল ৫-২ গোলে। বাংলাদেশের পক্ষে দুটি গোল করেছিলেন আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও শেখ মোহাম্মদ আসলাম।