‘স্ট্রেঞ্জ কেস অব ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’—রবার্ট লুই স্টিভেনসনের কালজয়ী বইটি কি পড়েছেন জুড বেলিংহাম। যদি পড়া থাকে, তবে এ মৌসুমে পরিসংখ্যান দেখে বেলিংহামের নিজেকে কখনো ‘ডক্টর জেকিল’ আবার কখনো ‘মিস্টার হাইড’ মনে হতে পারে। পড়া না থাকলেও সমস্যা নেই। বেলিংহামের দু-একজন ভক্তের নিশ্চয়ই বইটি পড়া। তাঁদের চোখে রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার কিন্তু একই মুদ্রার দুই পিঠ—ওই তো কখনো হাইড, কখনো-বা জেকিল!
বইয়ের গল্পের সারবস্তুটা না জানালে বেলিংহামে সেই গল্পের চরিত্রের ছাঁচে ফেলতে সমস্যা হবে। চিকিৎসক জেকিল এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করলেন, যার প্রভাবে একই মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ দুই ধরনের চরিত্র ফুটে ওঠে। ওষুধের প্রভাবে হয়ে ওঠেন নেতিবাচক চরিত্রের হাইড, আবার প্রয়োজনমতো অন্য ওষুধ নিয়ে শান্ত মেজাজের ভালো মানুষটি (জেকিল) হয়ে ফিরে আসেন। এখন প্রশ্ন হলো, কেন বেলিংহামের সঙ্গে বইটির চরিত্রের প্রসঙ্গ টানা হচ্ছে?
উত্তর দেওয়া যায় একটি পরিসংখ্যানেই—রিয়ালের হয়ে চলতি মৌসুমে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোল বেলিংহামের (১৬)। লা লিগার এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতাও এই ইংলিশ তারকা। এ মৌসুমে বেলিংহামের এমন পারফরম্যান্সকে মিলিয়ে নিতে পারেন ‘জেকিল’ চরিত্রের সঙ্গে। এবার অন্য পিঠও দেখে নেওয়া যাক। চলতি মৌসুমে রিয়ালের হয়ে সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ড দেখা খেলোয়াড়ও বেলিংহাম।
ক্লাবের প্রতি নিবেদন থেকে কার্ড দেখেছেন—এমন পাল্টা যুক্তিও দিতে পারেন কেউ কেউ। তাই বলে মাঠে মাঝেমধ্যেই বেলিংহামের একটু আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার ব্যাপারটিও অস্বীকার করা যায় না। এই তো গত শনিবার রাতেই ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে রিয়ালের ২-২ গোলে ড্র ম্যাচে রেফারি গিল মানজানোর সঙ্গে বাদানুবাদের সময় গালি দিয়ে লাল কার্ড দেখলেন, পরে নিষিদ্ধও হয়েছেন দুই ম্যাচ।
রিয়ালের হয়ে এ মৌসুমে ৩১ ম্যাচে ৯টি হলুদ কার্ড দেখেছেন ২০ বছর বয়সী বেলিংহাম। মিডফিল্ডার হয়েও বেশির ভাগ সময় রক্ষণভাগ সামলানো এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, সেন্টারব্যাক আন্তনিও রুডিগার ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি তাঁর চেয়ে কমসংখ্যক হলুদ কার্ড দেখেছেন। সমান ৮টি করে হলুদ কার্ড দেখেছেন ৩৩ ম্যাচ খেলা রুডিগার ও ৩০ ম্যাচ খেলা কামাভিঙ্গা। ২৯ ম্যাচ খেলা চুয়ামেনি দেখেছেন ৭টি হলুদ কার্ড।
২৬ ম্যাচ খেলা রিয়াল উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের নামের পাশে ৬টি হলুদ কার্ড দেখেও অবাক হতে পারেন কেউ কেউ। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত রিয়ালের দুজন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখেছেন। সেন্টারব্যাক নাচো ফার্নান্দেজ দেখেছেন ২টি লাল কার্ড, অন্যজন কে সেটি নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না—ওই তো ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বেলিংহামের লাল কার্ড।
চ্যাম্পিয়নস লিগে এ মৌসুমে রিয়ালের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ গোল বেলিংহামের। মৌসুমে ক্লাবটির হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি (২০)। যদিও ২০২৪ সালে বেলিংহামের গোল করার হার কিছুটা কমেছে। এ বছর ১০ ম্যাচে এ পর্যন্ত ৩ গোল করেছেন।
তবে বেলিংহাম যে মাপের খেলোয়াড়, তাঁর গোল করার ‘অভ্যাস’-এ এমন ছেদ পড়া নিয়ে রিয়াল কোচ কার্লোস আনচেলত্তি নিশ্চয়ই ভাবছেন না। ভাবনার যদি কিছু থেকে থাকে সেটি তাঁর এই ডিসিপ্লিনারি রেকর্ড। বেলিংহামের দেখা ৯টি হলুদ কার্ডের মধ্যে ৫টি লা লিগায়, ২টি চ্যাম্পিয়নস লিগে এবং সুপার কাপ ও কোপা দেল রে-তে দেখেছেন ১টি করে হলুদ কার্ড। এর মধ্যে ৫টি হলুদ কার্ড দেখেছেন রেফারি কিংবা প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে। বাকি ৪টি কার্ড দেখেছেন ফাউল করার অপরাধে।
বেলিংহাম অবশ্য আত্মপক্ষও সমর্থন করেছেন। গত বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে লাইপজিগের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘একটা কথাই বলতে চাই, রেফারি এবং তাঁর বাঁশি বাজানো নিয়ে যা ঘটার তা ঘটে গেছে। মনে রাখতে হবে তিনিও মানুষ, আমিও মানুষ। আমাকে বিচার করার সময় তাদের আরেকটু বুদ্ধি-বিবেচনা প্রয়োগ করা উচিত ছিল। আমি আক্রমণাত্মক কিছু বলিনি।’