লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো—সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলারকে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে খুব সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত নাম আনহেল দি মারিয়া। অলিম্পিক ফাইনাল, কোপা আমেরিকা ফাইনাল, ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করার অনন্য কীর্তি গড়া দি মারিয়া এ বছর জাতীয় দল আর্জেন্টিনাকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন। তবে ক্লাব ফুটবলে খেলে যাচ্ছেন বেনফিকার হয়ে।
সম্প্রতি আর্জেন্টাইন দৈনিক লা নাসিওনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দি মারিয়া। বিস্তৃত সেই সাক্ষাৎকারে মেসি–রোনালদোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব, ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা বদলে লেফট উইংয়ে খেলা, ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে না খেলা, ফুটবল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।
মেসি–রোনালদো ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে এসেছেন। ইউরোপীয় ফুটবলের পাট চুকিয়ে দুজন খেলছেন ভিন্ন দুই মহাদেশের ক্লাবে। তবু তাঁদের নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। মেসি–রোনালদোর মধ্যে কে সেরা—এ প্রশ্নের উত্তর অনেক তারকা ফুটবলারকে নানা সময়ে নানাভাবে দিতে হয়েছে। সাক্ষাৎকারে দি মারিয়াকেও প্রশ্নটা আরেকবার করেছিলেন লা নাসিওনের সাংবাদিক হুয়ান পাবলো ভারস্কি।
উত্তরে ৩৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘আমি সব সময় একই কথা বলে এসেছি যে তারা ইতিহাসের সেরা দুই ফুটবলার। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে এখন পর্যন্ত লিও (মেসি) সেরা। শুধু আটটি ব্যালন ডি’অর জিতেছে বলে নয়, সব দিক থেকেই। ক্রিস্টিয়ানোর (রোনালদো) ব্যাপারটা হলো, তাকে কঠিন পরিশ্রম করে সব অর্জন করতে হয়েছে। ওকে জিমে যেতে হয়, অনেক অনুশীলন করতে হয় এবং সে সব সময় আরও বেশি চায়। কিন্তু আরেকজনের (মেসি) ব্যাপারটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। সেরা হওয়ার জন্য ওকে কিছুই করতে হয় না। ওকে দেখে মনে হয় যেন বন্ধুদের সঙ্গে খেলছে। এ কারণেই দুজনের মধ্যে এত পার্থক্য। লিওকে কারও সঙ্গে তুলনা করা যায় না।’
ক্যারিয়ারের বেশির ভাগজুড়ে উইংয়ে ডান প্রান্তে খেলে এসেছেন। কিন্তু ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁকে বাঁ প্রান্তে খেলান আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। ফাইনাল–পূর্ব অনুশীলনেও তাঁর পজিশন বদল নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। তাই ফ্রান্সের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে কোচ যখন তাঁকে লেফট উইংয়ে খেলতে বলেছেন, দি মারিয়ার মনেও বিস্ময় জেগেছে।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ফাইনালের তকমা পেয়ে যাওয়া সে ম্যাচে দি মারিয়ার আদায় করে দেওয়া পেনাল্টি থেকেই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। দ্বিতীয় গোলটি দি মারিয়া নিজেই করেন।
তবে এর ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৪ ফাইনালে চোটের কারণে খেলতে পারেননি। জার্মানির বিপক্ষে মারাকানার সেই ফাইনালে দি মারিয়ার না খেলার পেছনে তাঁর সেই সময়ের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে অনেকে দায়ী করে থাকেন। কেউ কেউ তখন অভিযোগ করেছিলেন, চোট নিয়ে দি মারিয়াকে রিয়াল কর্তৃপক্ষ খেলতে নিষেধ করেছিল বলেই তিনি মাঠে নামেননি।
তবে এই সাক্ষাৎকারে দি মারিয়া ১০ বছর আগের ঘটনা খোলাসা করেছেন। জানিয়েছেন, তিনি ১০০ শতাংশ ফিট ছিলেন না বলেই অন্য কাউকে সুযোগ দিতে বলেছিলেন, ‘আলেহান্দ্রো সাবেয়া (২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ) আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন ও সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর কাছে আমি সৎ থাকতে চেয়েছি। চোটাক্রান্ত স্থানে আমার ব্যথা ছিল। সেরে ওঠার জন্য আমি সম্ভাব্য সবকিছুই করেছি। কিন্তু ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি ফিট হতে পারিনি। তখন আমি কোচকে বলেছিলাম, যে ১০০ শতাংশ ফিট, তার খেলা উচিত। তাই আমি বেঞ্চেই ছিলাম।’
বেনফিকার সঙ্গে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত চুক্তি আছে দি মারিয়ার। এরপর ক্লাব ফুটবলকেও বিদায় জানাবেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলেননি। তবে খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচিং করানোর ইচ্ছা আছে তাঁর, ‘আমি একটা কোচিং কোর্স করছি। ৩০ বছর বয়স থেকেই আমি ফুটবলকে আলাদাভাবে দেখতে শুরু করেছি। শুধু খেলোয়াড়ের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, অন্যদিক থেকেও। দেখা যাক, কী হয়।’