ফুটবলপ্রেমী মাত্রই জানেন, চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে বার্সেলোনা। গত বছরই জানা গিয়েছে, ক্লাবটির ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরো। এবার নতুন মৌসুম শুরুর আগে বিশাল অঙ্কের এই ঋণ নিয়েও দলবদলের বাজারে টাকা ঢেলেছে বার্সা। রবার্ট লেভানডফস্কি, রাফিনিয়াকে কিনেছে। রাফিনিয়ার জন্য বার্সার খরচ ৬ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। আর লেভানডফস্কির জন্য খরচ হয়েছে ৫ কোটি ইউরো। চরম আর্থিক সংকটে থাকা একটি ক্লাবের দলবদলে এত অর্থ খরচ করা দেখে অদ্ভুত লাগার কথা বলেছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের কোচ ইউলিয়ান নাগলসমান। সেটাই স্বাভাবিক হলেও ঋণের এই অন্ধকার সুড়ঙ্গে আলোর দেখা পেয়েছে বার্সা।
তার আগে বার্সার বর্তমান আর্থিক অবস্থা জানিয়ে রাখা ভালো। সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা জানিয়েছেন, ৪৮ কোটি ১০ লাখ ইউরো লোকসানে আছে দল। ৬৩ কোটি ১০ লাখ ইউরো আয়ের বিপরীতে খরচ ১১৩ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। এই হিসাব লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছেও উপস্থাপন করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের দ্বিতীয় ‘ইকোনমিক লেভার’ চালু করেছে বার্সা—বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ‘সিক্সথ স্ট্রিটে’র কাছে লা লিগায় নিজেদের টিভি স্বত্বের ১৫ শতাংশ বিক্রি করেছে ক্লাবটি। আগামী ২৫ বছরের জন্য করা এই চুক্তি থেকে ৪০ কোটি ইউরো পাবে তারা। এর আগে গত মাসে একই প্রতিষ্ঠানের টিভি স্বত্বের ১০ শতাংশ বিক্রি করেছিল বার্সা। টিভি স্বত্ব বিক্রি করা নিয়ে বার্সার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আগামী ২৫ বছরের জন্য সব মিলিয়ে বার্সার লা লিগা টিভি স্বত্বের ২৫ শতাংশ পাবে সিক্সথ স্ট্রিট।’
‘ইকোনমিক লেভার’ কথাটা গত বছর মার্চে দ্বিতীয় মেয়াদে বার্সার সভাপতি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় ব্যবহার করছে লাপোর্তা। সহজ ভাষায় এর অর্থ হলো, টাকা আয়ের জন্য ক্লাবের সম্পদ ব্যবহার করা। ঋণ কমাতে এবং ক্লাবকে আর্থিকভাবে ভালো অবস্থায় ফেরাতে এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা চলতি বছরের শুরুতেই বলেছিলেন বার্সা সভাপতি। এর মধ্যে প্রথম ‘ইকোনমিক লেভার’টি হলো বার্সা লাইসেন্সিং ও মার্চেন্ডাইজিং (বিএলএম) প্রতিষ্ঠানের ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেচে দেওয়া, যেখান থেকে প্রায় ৩০ কোটি ইউরো পাওয়ার আশা করছে ক্লাবটি। এ নিয়ে এখনো দর–কষাকষি চলছে। তৃতীয় ‘ইকোনমিক লেভার’টিও বিএলএম ও বার্সেলোনার স্টুডিওকে নিয়ে, এখান থেকে আরও ২০ কোটি ইউরো পাওয়ার হিসাব কষেছে বার্সা।
লা লিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগেই এই তৃতীয় ‘ইকোনমিক লেভার’ চালু করতে হবে বার্সাকে। নতুন আসা খেলোয়াড়দের নিবন্ধন এবং সের্হিও রবার্তো ও ওসমান দেম্বেলের চুক্তি নবায়নের জন্যই তা প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের বেতন যেন লা লিগার বেঁধে দেওয়া সীমানা ডিঙিয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তহবিলের শক্তি বাড়ানো কিংবা খেলোয়াড় বিক্রি—এ দুটির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে বার্সাকে সমস্যাটি সমাধানের জন্য। তবে তৃতীয় ‘ইকোনমিক লেভার’টি চালু করা গেলে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না বার্সাকে।