গতবারের রানার্সআপ ইংল্যান্ডের সামনে আজ ২০ বছর পর সেমিফাইনালে ওঠা নেদারল্যান্ডস।
‘আমরা জাতি হিসেবে ক্ষুদ্র হতে পারি। কিন্তু আমরা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে সেমিফাইনালে উঠেছি। এই সাফল্য পেতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তবে এটা আমাদের জন্য আরেকটি (ফাইনালে ওঠার) সুযোগ। আমরা সত্যিই গর্বিত। পুরো জাতির জন্য এটা বিশেষ কিছু’—কথাগুলো নেদারল্যান্ডস কোচ রোনাল্ড কোমানের। দল নিয়ে কোমান কতটা আশাবাদী, এসব কথা থেকেই স্পষ্ট।
যুগে যুগে এমন সুযোগ নেদারল্যান্ডসের সামনে অনেকবারই এসেছে। কিন্তু দলটি চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছে মাত্র একবার; সেই ১৯৮৮ সালে ইউরোর শিরোপা জয় এখন পর্যন্ত ডাচ জাতীয় দলের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তিন যুগ আগে ইউরোজয়ী দলটির খেলোয়াড় ছিলেন কোমান। এবার তিনি কোচের ভূমিকায়। ৩৬ বছর ট্রফি জিততে না পারার আক্ষেপ ঘোচাতে তাঁর দলকে পেরোতে হবে আর দুটি ধাপ; যার একটি আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
ডর্টমুন্ডের সিগনাল ইদুনা পার্কে আজ ইউরোর সেমিফাইনাল শুরুর আগে ফন ডাইক-ডিপাই-গাকপোরা যখন জাতীয় সংগীত গাইবেন, কোমান কি ক্ষণিকের জন্য ৩৬ বছর আগের সেমিফাইনাল আর জার্মান স্মৃতি হাতড়ে বেড়াবেন? ১৯৮৮ আসরটা যে এবারের মতোই জার্মানিতে বসেছিল! শেষ চারের ম্যাচে স্বাগতিকদের হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিল নেদারল্যান্ডস। পিছিয়ে পড়েও যাঁর গোলে ডাচরা ম্যাচে ফিরেছিল, তিনি আর কেউ নন, রোনাল্ড কোমান! ১৯৭৪ সালে ইয়োহান ক্রুইফের নেদারল্যান্ডস প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালও খেলেছে জার্মানিতে। সব মিলিয়ে জার্মানিকে ডাচদের পয়মন্ত ভেন্যুই বলতে হয়। নকআউট পর্বে এসে ছন্দ ফিরে পাওয়ায় কোমানের দল আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকেই খেলতে নামবে।
বিপরীতে গতবারের রানার্সআপ ইংল্যান্ডের বেশ চাপে থাকার কথা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর সেমিফাইনালে উঠলেও ইংলিশদের এবারের পারফরম্যান্স খোদ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমেই ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। জুড বেলিংহামের গোল-দক্ষতা এক পাশে সরিয়ে রাখলে ইউরোয় তাঁর পারফরম্যান্স গড়পড়তা। অধিনায়ক হ্যারি কেইনকেও সেরা ছন্দে দেখা যাচ্ছে না। এত এত তারকা থাকার পরও দলীয় সমন্বয়টা ঠিক ঠিক হচ্ছে না। এ জন্য কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের কৌশলকেই দায়ী করা হচ্ছে।
কোনোরকমে গ্রুপ পর্ব পেরোনো নেদারল্যান্ডস নকআউট পর্বে এসে একেবারেই বদলে যাওয়া এক দল। শেষ ষোলোয় রোমানিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়ার পর কোয়ার্টার ফাইনালে পিছিয়ে পড়েও বিদায় করেছে তুরস্ককে। সবচেয়ে বড় কথা, ডাচরা দুটি ম্যাচই ৯০ মিনিটের মধ্যে জিতে নিয়ে সেমিফাইনালের জন্য শক্তি জমা করে রেখেছে। কিন্তু ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে আসতে হয়েছে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আজ কেইন-বেলিংহামদের ওপর কিছুটা ক্লান্তি ভর করতে পারে। নকআউট পর্বে ইংল্যান্ড এখনো যে কোনো ম্যাচ ৯০ মিনিটে জিততে পারেনি।
এবারের ইউরোয় ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের দিক থেকেও এগিয়ে নেদারল্যান্ডস। ৩টি করে গোল ও অ্যাসিস্ট করে গোল করা ও করানোর তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে আছেন ফরোয়ার্ড কোডি গাকপো ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জাভি সিমন্স। তুলনায় ইংলিশ ফরোয়ার্ডরা কিছুটা ছন্দহীন, বিশেষ করে হ্যারি কেইন।
তবে কেইনের ছন্দহীনতা নিয়ে চিন্তিত নন লুক শ। ইংল্যান্ডের এই ডিফেন্ডার সংবাদ সম্মেলনে সতীর্থের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেছেন, ‘সে বিশ্বমানের খেলোয়াড়। যখন সে মাঠে থাকে, আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলতে পারি। ভুলে গেলে চলবে না, সে আমাদের শীর্ষ গোলদাতা ও আমাদের অধিনায়ক। সে যেকোনো সময় গোল করতে পারে, ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।’
দলের পারফরম্যান্স এখনো সমর্থকদের মন ভরাতে না পারলেও ইংল্যান্ড যে সেমিফাইনালেই থামতে চায় না, তা বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেছেন কোচ সাউথগেট, ‘এটা ঠিক যে আমরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলাম। এ মুহূর্তে খুব বেশি গোল পাচ্ছি না। কিন্তু আমরা সর্বশেষ চার টুর্নামেন্টের তিনটিতেই সেমিফাইনালে উঠেছি। এবার আমরা এখানেই শেষ করতে চাই না।’