ফুটবল মাঠে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আনা হয়েছিল ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি। কিন্তু সমাধানের এই পদ্ধতিই এখন যেন সমস্যা! বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ভিএআর প্রযুক্তির ব্যবহার একের পর এক বিতর্কের জন্ম হচ্ছে।
বিষয়টি সুরাহা করতে আগামী মৌসুম থেকে ভিএআর বাতিলের ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটি করবে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো। জুনে বার্ষিক সাধারণ সভায় এই ভোটাভুটি হবে। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব উলভারহ্যাম্পটন ২০২৪-২৫ মৌসুম থেকে ভিএআর বাতিল চেয়ে সম্প্রতি লিগ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি সমাধান তুলে ধরেছে। আগামী ৬ জুন লিগের ২০টি ক্লাব ভিএআর এর পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেবে।
২০২৩-২৪ মৌসুমে ভিএআরের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে গেছে। এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার ১৩ নম্বরে থাকা দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভিএআর প্রিমিয়ার লিগের ব্র্যান্ডকে অবমূল্যায়ন করছে।
ভিএআর প্রযুক্তি বাতিল করতে চাইলে এর পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার। অর্থাৎ, প্রিমিয়ার লিগের ২০টি ক্লাবের ১৪টি ক্লাবকে ভিএআরের বিপক্ষে ভোট দিতে হবে। বার্ষিক সাধারণ সভার আগে উলভস অন্য ক্লাবগুলোকে ভিএআরের বিপক্ষে একত্র করতে চাইছে, যেন তারা সমর্থন পায়।
ক্লাব, সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক—সবার কাছে রেফারির সিদ্ধান্ত যতটা সম্ভব গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ২০১৯ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ভিএআর প্রযুক্তি চালু করা হয়। ফুটবলের আইন ও বিধি প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) এটিকে ফুটবল আইনে যুক্ত করে ২০১৮ সালে।
ইংল্যান্ডের শীর্ষ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ৫ বছরের পথচলায় ভিএআরের আওতা ও ব্যবহার বাড়লেও রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তো কমেইনি; বরং ভুলের সংখ্যা ও অসংগতি বেড়ে আরও বেশি সমালোচিত হয়েছে। ফুটবল অনুরাগী থেকে বেশ কিছু খেলোয়াড় ও কোচ বিতর্কিত এই প্রযুক্তির ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
উলভারহ্যাম্পটন তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘২০১৯-২০ মৌসুমে একটি সরল বিশ্বাসে ফুটবল ও প্রিমিয়ার লিগের সর্বোত্তম স্বার্থে ভিএআর প্রবর্তন করা হয়েছিল। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও এটি অসংখ্য নেতিবাচক পরিণতির দিকে পরিচালিত করেছে, যা ভক্ত ও ফুটবলের মধ্যে সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং প্রিমিয়ার লিগের ব্র্যান্ডের মানকে ক্ষুণ্ন করেছে। (মাঠের সিদ্ধান্তকে) আরেকটু নিখুঁত করতে গিয়ে আমরা যে খেসারত দিয়েছি, তা আমাদের খেলার চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এর ফলস্বরূপ ২০২৪-২৫ মৌসুম থেকে এটি সরিয়ে ফেলা উচিত। এটাই আমাদের অবস্থান।’
উলভসের কোচ গ্যারি ও’নেইলের দাবি, ভিএআরের সিদ্ধান্ত তাঁর দলের বিপক্ষে যাওয়ার পর থেকে ইংল্যান্ডের পেশাদার রেফারিদের সংগঠনের (পিজিএমওএল) প্রধান হাওয়ার্ড ওয়েব তাঁকে অনেকবার ফোন দিয়েছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন।
গতকাল রাতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে ৩-২ ব্যবধানে হারের পর ভিএআর নিয়ে চটেছেন নিউক্যাসল উইঙ্গার অ্যান্থনি গর্ডন। নিউক্যাসলকে একটি পেনাল্টি না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয়েছে এটি পেনাল্টি ছিল। আমি সেই যুগে খেলতে শুরু করেছি, যখন রেফারি তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমি এখনো এটিকে সমর্থন করি। আমি চাই রেফারিদের আরও ক্ষমতা দেওয়া হোক। এটি (ভিএআর) থেকে পরিত্রাণ পেলে আরও ভালো খেলা হবে।’
প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ভিএআর নিয়ে সর্বমহলের উদ্বেগের বিষয়টি স্বীকার করেছে এবং এর কার্যকারিতা আরও উন্নতি করতে পিজিএমওএলের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২৪-২৫ মৌসুম থেকে লিগে ভিএআর থাকবে কি না, তা মাসখানেকের মধ্যে জানা যাবে। তবে নতুন মৌসুম থেকে সেমি-অটোমেটেড (আধা স্বয়ংক্রিয়) অফসাইড প্রযুক্তি চালু হচ্ছে, এটা নিশ্চিত।