মার্তা কাঁদলেন।
এ কান্না মেয়েদের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা অনিশ্চিত বলে নয়। এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ, সেটি মনে করেও কাঁদেননি মার্তা। ব্রাজিল কখনোই জিততে পারেনি মেয়েদের বিশ্বকাপ, কান্নার কারণ এটিও নয়। চোটের কারণে পুরোপুরি ফিট নয় বলে ম্যাচের শুরু থেকেই খেলতে না পারার আক্ষেপ থেকেও আসেনি এ কান্না।
ব্রাজিল কিংবদন্তি আজ সংবাদ সম্মেলনে কেঁদেছেন মেয়েদের ফুটবলে নিজের অবদানের কথা বলতে গিয়ে। মেয়েদের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার কেঁদেছেন নিজের ২০ বছরের ক্যারিয়ারের কথা বলতে গিয়ে।
আগামীকাল জ্যামাইকার বিপক্ষে বাঁচা–মরার ম্যাচ ব্রাজিলের। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচাতে সেই ম্যাচে জয় ছাড়া আর কোনো সমীকরণ নেই মার্তার ব্রাজিলের। সেই ম্যাচের ম্যাচ–পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেই আজ মার্তাকে প্রশ্ন করা হয় ফুটবলে কী ছাপ রেখে যাচ্ছেন, তা নিয়ে।
শুরুতে প্রশ্নের উত্তরটা দিতে চাননি ফিফার ছয়বারের বর্ষসেরা নারী ফুটবলার। মার্তাকে অনিচ্ছুক দেখে এগিয়ে আসেন ব্রাজিলের কোচ পিয়া সান্ডহাগ। মার্তাকে কবে কোথায় প্রথম দেখেছেন, সে মনে করিয়ে ফুটবলে অবদানের জন্য ধন্যবাদও দেন সুইডিশ কোচ, ‘খুব অল্প বয়সেই মার্তা সুইডেনে খেলেছে। আমি তাকে অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে খেলতে দেখেছি, দেখেছি থাইল্যান্ড বিশ্বকাপেও (২০০৪)।
সুইডেনে আমি তার প্রতিপক্ষ ক্লাবের কোচ ছিলাম। সত্যি বলতে ব্রাজিল ফুটবলের সে বড় কিছুই ছিল। তাই আমি জানতাম, সে কত বড় খেলোয়াড়। ঠিক আছে, সে বিখ্যাত খেলোয়াড়। কিন্তু আমার কোনো ধারণাই ছিল না ব্রাজিল ফুটবলে সে কত বড় খেলোয়াড়।
এ রকম দারুণ এক খেলোয়াড়ের আশপাশে থাকতে পারাটাই অনেক আবেগের। সে আগামীকাল কী করবে, শুধু সেটির জন্যই নয়, সে এত বছর ধরে যা করেছে, কারণ সেসবও। সে অসাধারণ এক রোল মডেল। তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
কোচের মুখে নিজের কথা শুনেই অর্গল খুলে যায় মার্তার। মেয়েদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক নিজের অবদানের কথা বলতে গিয়ে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের কথা মনে করলেন, ‘আমি যখন খেলা শুরু করি, আমার কোনো নারী আইডল (আদর্শ) ছিল না।’
এতটুকু বলতে গিয়েই সজল হয়ে যার তাঁর চোখ, ‘একবার ভাবুন মেয়েদের ফুটবল সম্প্রচার করা হচ্ছে না। আপনি তখন কী করতেন? আমি তো ভাবতেও পারতাম না একটা সময় জাতীয় দলে খেলব আর ফুটবলের উদাহরণ হব একদিন। আর এখন আমি যখনই রাস্তায় বেরোই মানুষজন আমাকে থামায়, মা–বাবারা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে আপনার ভক্ত, সে আপনার মতোই হতে চায়।’’’
মেয়েদের ফুটবল কত দূর এগিয়েছে, সেটি জানাতে গিয়েও আবেগাপ্লুত হয়েছেন মার্তা, ‘কত কিছুর মধ্য দিয়ে এলাম। ২০ বছর আগে ২০০৩ সালে আমাকে, এই মার্তাকে কে চিনত।’
এবারের বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচেই শুরু থেকে খেলা হয়নি মার্তার। আগামীকালও হবে কি না কে জানে। তবে মার্তা জানালেন, তিনি ৯০ মিনিট খেলতেই প্রস্তুত, ‘আমার কষ্ট হবে, তবে আমি ৯০ মিনিট খেলতে লড়াই করতে প্রস্তুত। আমি প্রস্তুত, তৈরিও।’